
খোঁজ খবর ডেস্ক: আগের বছরগুলোর তুলনায় কয়লার ব্যবহার কম হলেও চলতি বছর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের হার সামান্য বেড়েছে বলে এ সংক্রান্ত এক গবেষণায় উঠে এসেছে। গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্ট তাদের বার্ষিক মূল্যায়নে ২০১৯ সালে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের মাত্রা আগের বছরের তুলনায় দশমিক ছয় শতাংশ বেশি হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছে।ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে গবেষণার তথ্য তুলে ধরেছে। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ব্যবহারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ বাড়ছে বলে জানিয়েছে তারা। সব মিলিয়ে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তির সময় থেকে এখন পর্যন্ত কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ চার শতাংশ বেড়েছে । এর মধ্যে গত বছরই বেড়েছিল প্রায় তিন শতাংশ, যার প্রধান কারণ ছিল চীনে কয়লার বিপুল চাহিদা। গাড়ি বিশেষ করে স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেলের (এসইউভি) বাজার সম্প্রসারিত হওয়ায় জ্বালানি তেলের ব্যাপক চাহিদাও নিঃসরণ বাড়ার অন্যতম কারণ ছিল, বলছে তারা। তবে জীবাশ্ম জ্বালানির চাহিদায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসায় এ বছর নিঃসরণ বৃদ্ধির মাত্রা তুলনামূলক কম হয়েছে। অবশ্য তা একেবারে কমও নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কয়লা ব্যবহারের কারণে চলতি বছর বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ এক শতাংশের চেয়ে কম হওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে কয়লার ব্যবহার কমানো বিরাট ভূমিকা রেখেছে।
গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্টের অংশীদার প্রতিষ্ঠান সিসেরো সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট রিসার্চের জ্যেষ্ঠ গবেষক রবি অ্যান্ড্রু বলেছেন, “২০১৯ সাল জুড়েই কয়লার ব্যবহার বেশি হবে বলে মনে করা হলেও চীন ও ভারতের অর্থনৈতিক শ্লথ প্রবৃদ্ধির কারণে তা ধারণার চেয়ে অনেক কম হয়েছে। তুমুল বর্ষণের কারণে চলতি বছর ভারতে রেকর্ড পরিমাণ জলবিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে, যা কয়লা ব্যবহারের সম্ভাবনাও কমিয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮ দেশেও কয়লার ব্যবহার কমেছে। এই অঞ্চল দুটিতে প্রায় ১০ শতাংশের মতো ব্যবহার কমেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এ সব কিছুই বৈশ্বিক কয়লা ব্যবহারের পরিমাণ কমাতে ভূমিকা রেখেছে,” । তবে কয়লার এ কম ব্যবহার ছাপিয়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জ্বালানি তেল ও গ্যাস ব্যবহার বৃদ্ধির হার।
চলতি বছর গ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে দুই দশমিক ছয় শতাংশ। অবশ্য একই সঙ্গে বায়ু ও সূর্যের মতো নবায়নযোগ্য উৎসের ব্যবহারও বেড়েছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারের হার বাড়ার কারণেই কার্বন নিঃসরণের প্রবৃ্দ্ধি আগের বছরগুলোর তুলনায় কম হয়েছে বলে ধারণা দিয়েছেন তারা। “কয়লার তুলনায় প্রাকৃতিক গ্যাস তুলনামূলক ভালো জীবাশ্ম জ্বালানি, কয়লার তুলনায় ধীরে হলেও নিরবচ্ছিন্ন এই গ্যাসের ব্যবহার পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে তুলছে,” বলেছেন সিসেরো সেন্টারের ড. গ্লেন পিটারস। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে দেশগুলো কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ নিয়ে যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল, জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্রযুক্তির ধারাবাহিক ব্যবহার সেই লক্ষ্যমাত্রার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেছেন গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্টের গবেষকরা।