
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ব্যাপক হারে গবাদি পশু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই রোগ বিস্তার লাভ করার অন্তত ১০০ গরু মারা গেছে। দিন দিন আক্রান্তর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াতে এবং সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা ও সুপরামর্শ অভাবে গরু মারা যাওয়ায় ক্ষুদ্র খামারী ও প্রান্তিক কৃষক আতঙ্কে রয়েছেন। তবে বেশি বিপাকে পড়েছে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিরা।
লাম্পি স্কীন ভাইরাস জনিত রোগ হওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। তাড়াশ উপজেলার এমন কোন গ্রাম নেই যে ওই গ্রামে লাম্পি স্কীন রোগে গরু আক্রান্ত হয় নাই।
গরুর খামারী ও প্রান্তিক কৃষক জানান, বিশেষ করে সু-চিকিৎসার অভাবে গরুগুলো ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছে।
তারা আরও জানায় এ পর্যন্ত উপজেলায় প্রায় এক হাজারের উপরে গরু লাম্পি স্ক্রিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঠিক পরামর্শ ও সুচিকিৎসার অভাবে গরুর আক্রান্ত ও মৃত্যু অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।
তাছাড়া চিকিৎসা ব্যয় বহুল হওয়ায় খামারী ও প্রান্তিক কৃষক হিমশিম খাচ্ছেন। প্রতিটি গরুর জন্য চিকিৎসা বাবদ ব্যয় হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। তারপরও আক্রান্ত গরুকে সুস্থ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গরুর খামারি ও সাধারন কৃষকরা। লাম্পি স্কীন রোগে আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যেই তাড়াশে প্রায় শতাধিক গরু মারা গেছে। এখন থেকেই দ্রুত পদক্ষেপ, সুচিকিৎসা ও সঠিক পরামর্শ না দিলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের শাহীপাড়ার বাসিন্দা আলমাহমুদ জানান, তার শাহিওয়াল জাতের বাছুর লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ওই গ্রামের কোবাদ ও লাবু মিয়ার দেশী জাতের গরু ও লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
কৃষক আব্দুল মালেক জানান, গাভী লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হলে প্রথমে স্থানীয় পশু চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা করি। কিন্তু কাজ না হওয়ায় পরবর্তীতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যাই। সেখানে সঠিক চিকিৎসা ও সুপরামর্শ দেওয়ার লোক নাই। কাস্তা বেত্রাশীন গ্রামের শহিদুল ইসলামের একটি গরু লাম্পি স্ক্রিন রোগে মারা গেছে। পৌর এলাকার আসানবাড়ী গ্রামের কৃষক রেজাউলের লক্ষাধিক টাকার ১টি গরু মারা গেছে।
একই গ্রামের আলমাছের স্ত্রী ছাবেদা খাতুন, আলমাছের, আবু ছাইমের ও আব্দুল মালেকসহ আরও অনেক গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত। এসব গরুর সমস্ত শরীরে গুটি গুটি বেড়িয়েছে। কোনো কোনো গরুর শরীরে ঘা হয়ে গেছে।
এই রোগের শুরুতে গরুর সারা শরীরে বসন্তের মতো গুটি গুটি বের হয়। তারপর পায়ের হাটু গোড়ালি ও গলা ফুলে যাচ্ছে। গলায় পানি জমছে। জ্বর ও প্রচন্ড ব্যথায় আক্রান্ত গরুগুলো খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়। অনেক সময় মুখ দিয়ে লালা পড়ে। কেউবা আক্রান্ত গরুকে অন্য গরু থেকে মশারি দিয়ে আলাদা করে রাখছেন। কিন্তু তারপরও সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না।
তাড়াশে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নেই দীর্ঘদিন ধরে। রায়গঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. অলিউল ইসলামকে তাড়াশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি সপ্তাহে ২/১দিন আসেন। ভুক্তভোগী খামারীরা সরকারি চিকিৎসাসেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে পল্লী ভ্যাটেরিনারি চিকিৎসক, ভ্যাটেরিনারি ঔষুধ বিক্রেতাদের পরামর্শে ঔষুধ কিনে রোগাক্রান্ত গরুর চিকিৎসা করছেন।
তাড়াশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভ্যাটেরিনারি সার্জন, ইউএলএ, ভিএফএ, এফ.এ. (এ.আই), কম্পাউন্ডার, অফিস সহকারী, ড্রেসার ও অফিস সহায়কের মত আরও ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
তাড়াশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. অলিউল ইসলাম বলেন, প্রত্যেক সপ্তাহে একদিন হলেও তিনি তাড়াশে অফিস করেন।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার বলেন, লাম্পি স্কিন ভাইরাস জনিত রোগ। এটি মশা মাছির মাধ্যমে ছড়ায়। লাম্পি স্কিন রোগের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও রোগের ধরণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়। আতঙ্কিত না হয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে গরু রাখা ও মশা মাছি থেকে গরুকে নিরাপদ রাখতে হবে। প্রয়োজনে মশারী ব্যবহার করতে হবে। কতগুলো গরু আক্রান্ত হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান এই মুহুর্তে আমাদের কাছে নেই। ইতিমধ্যেই আমরা জনসাধারণকে সচেতন করতে উঠান বৈঠক, ভ্যাকসিনেসন, আক্রান্ত গবাদী পশুকে মশারীর মধ্যে রাখা সহ বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি।
রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি সামাল দেয়ার মতো চিকিৎসক তাড়াশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নেই। বিসিএস’র নতুন নিয়োগ থেকে জনবল নিয়োগ দেয়ার জোর সুপারিশ করা হবে।