গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে তদন্ত কমিটির সদস্যরা প্রথম দিনের তদন্ত শুরু করেছেন। গাইবান্ধা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে এই তদন্তকাজ চলছে। তিন দিনব্যাপী এই তদন্ত কাজ চলবে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।
প্রথম দিনে ১১ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ৬৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৫৫ জন পোলিং এজেন্ট, ফুলছড়ি উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।
তদন্ত শেষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনের দিন আমরা কী দেখেছি, তা তদন্ত কমিটি আমাদের কাছে জানতে চান। আমরা তদন্ত কমিটিকে বলেছি, আমাদের কেন্দ্রে কোনো সমস্যা হয়নি। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে।
শেষে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ফুলছড়ি উপজেলার ১১টি ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার বক্তব্য নিয়েছি ভিডিওচিত্র দেখিয়ে তাদের সঙ্গে রিলেটেড বিষয়গুলোর। এখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি। পোলিং এজেন্টদের বক্তব্য নিয়েছি। বুধবার আমরা যাচ্ছি সাঘাটা উপজেলায়। আমরা কারও বক্তব্য নেওয়ার সময় তার রিলেটেড কোনো নাম আসছে বা কোনো বিষয় আসছে কি না, সেগুলোও আমরা দেখছি। এর চেয়ে বেশি আর কিছু এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।
প্রশ্নের জবাবে অশোক কুমার বলেন, সবকিছু তো কমিশনের ডিসিশন অনুযায়ী হয়। সরাসরি কমিশন দেখছে, কমিশন দেখেই সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আশা করি আমরা সাত কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে পারব।
এর আগে গত ১৩ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন। কমিটির কর্মকর্তারা হচ্ছেন, আহ্বায়ক বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, সদস্য সচিব মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী এবং সদস্য যুগ্ম সচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাস। প্রধান নির্বাচন কশিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এ কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
গত বুধবার সকাল ৮টায় গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ওইদিন দুপুরে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মোট পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে চারজন প্রার্থী ভোট বর্জন করেন। এরপর ঢাকা থেকে সিসিটিভি ক্যামেরায় গোপন বুথে ঢুকে ভোট নেওয়াসহ নানান অনিয়ম দেখে নির্বাচন কমিশন প্রথমে ৪৪টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে। এরপর দুপুর ২টার দিকে উপনির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এদিকে স্থগিত করা কেন্দ্র বাদে বাকি কেন্দ্রগুলোর ফলাফল ঘোষণার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও দলীয় নেতাকর্মীরা। এ আসনের উপনির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা হচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান, জাতীয় পার্টির (জাপা) এ এইচ এম গোলাম শহীদ, বিকল্পধারা মনোনীত জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান এবং সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাদে বাকি চারজন দুপুরে ভোটবর্জন করেন।
এ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।