
আগামি ১২ অক্টোবর ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বীর আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আজ রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হচ্ছে। ফরম জমা দিতে হবে ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।
এদিকে রাব্বীর মৃত্যুর পর থেকেই আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া সাতজন নেতা। তারা হচ্ছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যান বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, মরহুম ফজলে রাব্বীর মেয়ে ফারজানা রাব্বী, তার ভাই অধ্যক্ষ ফরহাদ রাব্বীর স্ত্রী লুদভিলা পারভিন ছন্দা রাব্বী, সুশীল চন্দ্র দাস, মাহবুবুর রহমান ও ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ। তারা দলের হাইকমান্ডে তদবিরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কখনো এলাকায় গণসংযোগ, কখনো তদবিরের জন্য ঢাকায় যাচ্ছেন। তবে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন মাহমুদ হাসান।
ফজলে রাব্বী ছয়মাসের বেশি সময় ধরে অসুস্থ ছিলেন। গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এরপর আসনটি শুণ্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকে মনোনয়ন দৌড় শুরু হয়। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় তিন নেতাই এখন মাঠে। তবে বর্তমানে মুল আলোচনায় রয়েছেন মাহমুদ হাসান রিপন ও ফারজানা রাব্বী বুবলি। এরমধ্যে বাবার অসুস্থতায় রাজনীতির হাল ধরেন ফারজানা রাব্বী। চলতি বছরের ১৪ মার্চ ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হওয়ার পর তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইছেন।
ফারজানা রাব্বী সমর্থিতরা বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন ডেপুটি স্পিকারের মৃত্যুর সহমর্মিতা মেয়ের দলীয় মনোনয়ন পাবার বিষয়টি অগ্রাধিকার পেতে পারে। ফারজানা রাব্বী বলেন, দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে তিনি শতভাগ আশাবাদি। নির্বাচিত হলে বাবার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করবেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের মতে, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। ২০১৭ সালের ২২ মার্চ সেখানে উপ-নির্বাচন হয়। নির্বাচনে নিহত সংসদ সদস্যের স্ত্রী মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান ও বড়বোন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিল্পপতি আফরুজা বারী দলীয় মনোনয়ন চান। দল মনোনয়ন দেয় উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ রাজনৈতিক গোলাম মোস্তফা আহমেদকে। তিনি সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন।
একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর গোলাম মোস্তফা সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যান। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ পুনরায় উপ-নির্বাচন হয়। এ নির্বাচনে গোলাম মোস্তফার বড়ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক স্কুলশিক্ষক মেহেদী মোস্তফা মনোনয়ন চান। সেসময় নিহত মঞ্জুরুল ইসলামের বড়বোন আফরুজা বারীকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। অবশ্য ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে শামীম হায়দার পাটোয়ারি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
একই ঘটনা ঘটে গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী) আসনে। এখানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য চিকিৎসক ইউনুছ আলী ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মারা যান। ২০২০ সালের ২২ মার্চ উপ-নির্বাচন হয়। এখানে ইউনুসের বড়ছেলে অষ্টেলিয়া প্রবাসী ডক্টর ফয়সাল ইউনুছ মনোনয়ন চেয়ে পাননি। মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুমকে। তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানেও তিনি সংসদ সদস্য।
মাহমুদ সমর্থিত নেতারা দাবি করেন, ফজলে রাব্বী বেঁচে থাকতে প্রতিটি নির্বাচনে মাহমুদ হাসান দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন না পেয়েও তিনি নিজে সক্রিয় থেকে দলকে চাঙ্গা রেখেছেন। দীর্ঘদিন ধর্য্যের পরিচয় দিয়েছেন। উপ-নির্বাচনে দল তাকে মুল্যায়ন করবে।
মাহমুদ হাসান বলেন, তিনি প্রায় পাঁচবছর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকার সুবাদে দুই উপজেলার যুব সমাজের মধ্যে তাঁর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। আওয়ামী লীগের মুল নেতৃত্ব তাঁর সঙ্গে কাজ করছে। তাদের সঙ্গে নিয়ে এলাকার উন্নয়ন করেছেন। মনোনয়ন পেলে তিনি আসনটি পুন:উদ্ধার করতে পারবেন।