রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দিনাজপুরে আদিবাসী যুব মিলনমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:৪৬:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ মার্চ ২০২১
  • ১৫০ Time View

দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ “অধিকার ও সংস্কৃতি রক্ষায়, আদিবাসী-বাঙালি যুব মিলি একতায়” এই শ্লোগান নিয়ে দিনাজপুরে আদিবাসী যুব মিলন মেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার (৩ মার্চ) সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়ে শহরের গুরুত্বপুর্ন সড়কগুলো প্রদক্ষিন করে আবারও শিল্পকলা একাডেমিতে ফিরে আসে। এরপর একাডেমি মিলনায়তনে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন, আলোচনা সভা, সাঁওতাল আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষায় সংগীত ও নৃত্য পরিবেশিত হয়। আদিবাসীর জাতীয় উন্নয়ন কর্মকান্ডের মূল স্তরোধারায় অংশগ্রহণ এবং দিনাজপুর জেলায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সমস্যাসমূহ চিহ্নিত ও সমস্যাসমূহ থেকে উত্তরণের কর্মকৌশল প্রণয়ন এবং আদিবাসীদের সংস্কৃতি তুলে ধরার উদ্দেশ্যে ইউএনডিপি-হিউম্যান রাইটস প্রোগ্রামের সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অবলম্বন ও সান ফ্লাওয়ার এই মিলনমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হয়। এতে আদিবাসী যুব নারী-পুরুষসহ সাংবাদিক, বিভিন্ন পেশার প্রায় ৩ শতাধিক অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা পর্বে আদিবাসীদের বিভিন্ন অধিকারভিত্তিক দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বরাবরে হস্তান্তর করা হয়।

 

আদিবাসীদের বিভিন্ন দাবী সম্বলিত ফেস্টুনসহ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আদিবাসী যুব মিলনমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব কমিটির আহবায়ক আদরী মুর্মু’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সানিউল ফেরদৌস, ইউএনডিপি-হিউম্যান রাইটস প্রোগ্রামের মাইনোরিটি এক্সাপাট শংকর পাল, এসডিসি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার লুবনা ইয়াসমিন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম, দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্বরূপ বকসী বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী দুলাল, আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের আহবায়ক ও গাইবান্ধা জেলা বারের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অবলম্বন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী এবং আদিবাসী যুব প্রতিনিধিরা।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, আদিবাসীদের অধিকারভিত্তিক যে স্মারকলিপি পেশ করা হয় সে বিষয়ে কনসিডার করা এবং সরকারের সাথে সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করতে বলা হয় যাতে করে কোনো দ্বন্দ্বের সৃষ্টি না হয়। এছাড়াও তিনি বলেন, ভারতের আদিবাসীদের সাথে বাংলাদেশের আদিবাসীদের যোগসূত্র রয়েছে এবং এই যোগসূত্র রক্ষা করার জন্য অনুরোধ করেন।

আদিবাসী যুব নেতাদের বক্তব্যের সূত্র ধরে বক্তারা বলেন, জাতিসংঘে ইন্ডিজিনাস ফোরাম রয়েছে এবং আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী তার লিখিত বক্তব্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী না বলে আদিবাসী বলেছে। অথচ এখন আদিবাসী বলা হচ্ছে না। তিনি বলেন আদিবাসী ব্যবহার করে কিছু লোক অতীতে স্বার্থ হাসিল করে এসেছে এবং বর্তমানেও করছে। সরকারের বরাদ্দ ঠিকমতো ব্যবহার হচ্ছে কি না এবং আদিবাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবার জন্য প্রশাসন ও সরকারের কাছে অনুরোধ করেন। সাঁওতালদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে বেরিয়ে এসে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবার পাশাপাশি সমতল আদিবাসীদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় করার আহবান জানান তারা।


বক্তারা বলেন, দেশ হচ্ছে সব মানুষের। অথচ ধর্ম, বর্ণ ও গ্রোত্রের কারণে মানুষ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে এবং এই বৈষম্য দুর করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসীদের ভূমিকা রয়েছে এবং সকলের সমন্বয়ে এ দেশ গড়ে উঠবে সেটিই হবে আমাদের প্রত্যাশা। আদিবাসীদের দাবি খুব কম-শুধু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন উল্লেখ করেন তারা বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তার বক্তব্যে বলেন, সাংস্কৃতির কথা বলতে গেলে বলতে হয় যে, অনেক সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে এবং এমনকি বাঙালিদেরও অনেক সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। নিজস্ব সংস্কৃতি কার্যক্রমে কেউ বাঁধা দেয় না। প্রধানমন্ত্রী অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে এবং সফলতাও পাচ্ছেন। সমতলের আদিবাসীদের দারিদ্র্যের হার অন্যান্যদের চেয়ে বেশি বলে তিনি উল্লেখ করেন এবং দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলায় কিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। তারা দারিদ্র্যের কমানো জন্য শিক্ষার প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

MD ZANNATUL FERDOUSH

NEWS PURPOSE

গাইবান্ধায় বিরোধ নিষ্পত্তি করতে গিয়ে ইউপি সদস্য খুন

দিনাজপুরে আদিবাসী যুব মিলনমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব

Update Time : ০৪:৪৬:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ মার্চ ২০২১

দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ “অধিকার ও সংস্কৃতি রক্ষায়, আদিবাসী-বাঙালি যুব মিলি একতায়” এই শ্লোগান নিয়ে দিনাজপুরে আদিবাসী যুব মিলন মেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার (৩ মার্চ) সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়ে শহরের গুরুত্বপুর্ন সড়কগুলো প্রদক্ষিন করে আবারও শিল্পকলা একাডেমিতে ফিরে আসে। এরপর একাডেমি মিলনায়তনে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন, আলোচনা সভা, সাঁওতাল আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষায় সংগীত ও নৃত্য পরিবেশিত হয়। আদিবাসীর জাতীয় উন্নয়ন কর্মকান্ডের মূল স্তরোধারায় অংশগ্রহণ এবং দিনাজপুর জেলায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সমস্যাসমূহ চিহ্নিত ও সমস্যাসমূহ থেকে উত্তরণের কর্মকৌশল প্রণয়ন এবং আদিবাসীদের সংস্কৃতি তুলে ধরার উদ্দেশ্যে ইউএনডিপি-হিউম্যান রাইটস প্রোগ্রামের সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অবলম্বন ও সান ফ্লাওয়ার এই মিলনমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হয়। এতে আদিবাসী যুব নারী-পুরুষসহ সাংবাদিক, বিভিন্ন পেশার প্রায় ৩ শতাধিক অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা পর্বে আদিবাসীদের বিভিন্ন অধিকারভিত্তিক দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বরাবরে হস্তান্তর করা হয়।

 

আদিবাসীদের বিভিন্ন দাবী সম্বলিত ফেস্টুনসহ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আদিবাসী যুব মিলনমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব কমিটির আহবায়ক আদরী মুর্মু’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সানিউল ফেরদৌস, ইউএনডিপি-হিউম্যান রাইটস প্রোগ্রামের মাইনোরিটি এক্সাপাট শংকর পাল, এসডিসি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার লুবনা ইয়াসমিন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম, দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্বরূপ বকসী বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী দুলাল, আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের আহবায়ক ও গাইবান্ধা জেলা বারের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অবলম্বন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী এবং আদিবাসী যুব প্রতিনিধিরা।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, আদিবাসীদের অধিকারভিত্তিক যে স্মারকলিপি পেশ করা হয় সে বিষয়ে কনসিডার করা এবং সরকারের সাথে সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করতে বলা হয় যাতে করে কোনো দ্বন্দ্বের সৃষ্টি না হয়। এছাড়াও তিনি বলেন, ভারতের আদিবাসীদের সাথে বাংলাদেশের আদিবাসীদের যোগসূত্র রয়েছে এবং এই যোগসূত্র রক্ষা করার জন্য অনুরোধ করেন।

আদিবাসী যুব নেতাদের বক্তব্যের সূত্র ধরে বক্তারা বলেন, জাতিসংঘে ইন্ডিজিনাস ফোরাম রয়েছে এবং আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী তার লিখিত বক্তব্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী না বলে আদিবাসী বলেছে। অথচ এখন আদিবাসী বলা হচ্ছে না। তিনি বলেন আদিবাসী ব্যবহার করে কিছু লোক অতীতে স্বার্থ হাসিল করে এসেছে এবং বর্তমানেও করছে। সরকারের বরাদ্দ ঠিকমতো ব্যবহার হচ্ছে কি না এবং আদিবাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবার জন্য প্রশাসন ও সরকারের কাছে অনুরোধ করেন। সাঁওতালদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে বেরিয়ে এসে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবার পাশাপাশি সমতল আদিবাসীদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় করার আহবান জানান তারা।


বক্তারা বলেন, দেশ হচ্ছে সব মানুষের। অথচ ধর্ম, বর্ণ ও গ্রোত্রের কারণে মানুষ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে এবং এই বৈষম্য দুর করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসীদের ভূমিকা রয়েছে এবং সকলের সমন্বয়ে এ দেশ গড়ে উঠবে সেটিই হবে আমাদের প্রত্যাশা। আদিবাসীদের দাবি খুব কম-শুধু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন উল্লেখ করেন তারা বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তার বক্তব্যে বলেন, সাংস্কৃতির কথা বলতে গেলে বলতে হয় যে, অনেক সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে এবং এমনকি বাঙালিদেরও অনেক সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। নিজস্ব সংস্কৃতি কার্যক্রমে কেউ বাঁধা দেয় না। প্রধানমন্ত্রী অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে এবং সফলতাও পাচ্ছেন। সমতলের আদিবাসীদের দারিদ্র্যের হার অন্যান্যদের চেয়ে বেশি বলে তিনি উল্লেখ করেন এবং দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলায় কিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। তারা দারিদ্র্যের কমানো জন্য শিক্ষার প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করেন।