
খোঁজ খবর রিপোর্টঃ গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ডা. ইউনুস আলী সরকার মারা গেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বিএসএমএমইউয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মজুমদার বলেন, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। ডা. ইউনুস আলী সরকার দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারসহ শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ ও সাদুল্লাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ডা. ইউনুস আলী সরকারের মৃত্যুতে জেলা আওয়ামীলীগ, দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. সৈয়দ শামস-উল আলম হিরু শোক প্রকাশ করে বলেন, ডা. রংপুর মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় থেকে তিনি ছাত্রলীগের সাথে ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক ব্যাপারে ভালো ভুমিকা রেখেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ডাক্তারি পেশায় নিয়োজিত হন। তিনি বিএমএ এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আওয়ামী রাজনীতির সাথে ছিলেন। তিনি দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দুইবার আওয়ামীলীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাদুল্লাপুর ও পলাশবাড়ী উপজেলার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছেন। আওয়ামীলীগের সভাপতি আরও বলেন, তার মৃত্যুতে আমরা দুঃখ ও ভারাক্রান্ত। আমরা শোকাভিভুত এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও শান্তনা জানাই।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক শোক প্রকাশ করে বলেন, ডা. ইউনুস আলী পেশায় একজন চিকিৎসক ছিলেন, তিনি গাইবান্ধা সরকারি কলেজে এবং রংপুর মেডিকেল কলেজে ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের সাথে সক্রিয় ছিলেন। তিনি সারা জীবনে আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত কর্মী ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক ছিলেন। তার মৃত্যুতে জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করছি। তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। তার মৃত্যুতে গাইবান্ধা তথা সাদুল্লাপুর ও পলাশবাড়ী উপজেলায় একজন সৎ, নিষ্ঠাবান এবং ভালো মানুষকে হারালাম।
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন সংসদ সদস্য ডা. মোঃ ইউনুস আলীর ইন্তেকালে মরহুমের আত্মার মাগফেরাত এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা ডা. ইউনুস আলী সরকারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে গাইবান্ধা শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র এ্যাড. শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির মিলন বলেন, ডা. ইউনুস রংপুর মেডিকেল কলেজে অধায়নের সময় ছাত্রলীগের ভিপি ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ নেতা ছিলেন। তিনি অত্যন্ত ভালো এবং উঁচু মনের মানুষ ছিলেন। তিনি সব সময় আমাদের নেতা কর্মীদের এবং জনগণের সাথে ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি শ্রদ্ধাজন ছিলেন। জাহাঙ্গীর কবির মিলন আরও বলেন, ডা. ইউনুস আলী সরকার অসংখ্য রোগিদের বিনামুল্যে ঢাকায় চিকিৎসা ও সহযোগিতা দিতেন। তার মৃত্যুতে জেলার এবং গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী) আসনের অপুরনীয় ক্ষতি সাধন হলো। জাহাঙ্গীর কবির মিলন বলেন, আমি তার পরিবারের প্রতি এবং নেতাকর্মীদের সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
সাদুল্লাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাদুল্লাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহারিয়ার খাঁন বিপ্লব বলেন, ডা. ইউনুস আলী সরকারের মৃত্যুতে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করছি। তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। বিপ্লব আরও বলেন, তার মৃত্যুতে দীর্ঘদিনের আওয়ামী রাজনীতির অপুরনীয় ক্ষতি হলো।
ডা. মো. ইউনুস আলী সরকার ১৯৫৩ সালের ১৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম এলাকায়। পেশায় চিকিৎসক ডা. ইউনুস আলী ঢাকার মেট্রোপলিটন মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ডা. ইউনুস আলী সরকার গাইবান্ধা-৩ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের টানা দুইবারের এমপি। তিনি ১৬ বছর ধরে সাদুল্লাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৩ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. ইউনুস আলী সরকার। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টির (জাপা) লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার শিল্পীকে পরিজিত করেন তিনি। এর আগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদের প্রার্থী এসএম খাদেমুল ইসলাম খুদিকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন তিনি। ডা. মো. ইউনুস আলী সরকার সংসদীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সর্ম্পকতি স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।