
খোঁজ খবর ডেস্ক: চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলার রায়ে ৭ জনের ফাঁসির আদেশে নিহতের পরিবার, রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন মহল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ শামস-উল আলম হীরু বলেন, এমপি লিটন হত্যার ঘটনায় আদালতের রায়ে আমরা খুশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তারই ফলে আমরা লিটন হত্যার উপযুক্ত বিচার পেয়েছি।
প্রয়াত লিটনের বড় বোন ও মামলার বাদি ফাহমিদা কাকলি বুলবুল বলেন, ‘নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে পলাতক আসামিকে গ্রেফতারসহ দ্রুত এ রায় কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি।’ একই সঙ্গে হত্যা মামলার রায় দ্রুত হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে জানেন। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন এবং বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়ায় আজ লিটন হত্যা মামলায় ন্যায় বিচার পেয়েছি। আমি চাই, যতো দ্রুত সম্ভব আসামিদের ফাঁসি কার্যকর হোক। এই রায় কার্যকরে যত বিলম্ব হবে ততোই আমাদের আর এলাকাবাসীর কষ্ট বাড়বে। মানুষের কল্যাণে নিবেদিত ও জনপ্রীয় ছিলেন লিটন। অকালে তার চলে যাওয়ায় পুরো পরিবারের মধ্যে আজও শোকের ছায়া। তার মৃত্যুতে শুধু সুন্দরগঞ্জ-গাইবান্ধা নয়, দেশের মানুষ তাকে এখনও শ্রদ্ধায় স্মরণ করে।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আশরাফুল আলম সরকার লেবু বলেন, প্রয়াত জননেতা মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার রায়ে আদালত আসামিদের যে শাস্তির আদেশ দিয়েছেন তাতে করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন এ রায়ে খুশি। তিনি পলাতক আসামি চন্দন রায়কে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানান।
উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান মন্ডল বলেন, আইন সবার জন্য সমান। অন্যায়কারী যে দলের হোক না কেন, তাকে শাস্তি পেতে হবে। সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল কাদের খান অন্যায় করেছেন আদালত তাকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। এতে করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোজাহারুল ইসলাম বলেন, প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের আদালত যে রায় দিয়েছেন তাতে দলীয় এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি খুশি। তিনি দ্রুত রায় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন। উপজেলা বাসদ (মার্কসবাদী) আহ্বায়ক বীরেন চন্দ্র শীল বলেন, এমপি লিটন হত্যার রায়ে উপজেলা বাসদ খুশি। তিনি বলেন, একজন হত্যাকারীর জন্য যা শাস্তি হওয়া উচিত আদালত তা দিয়েছেন। তবে এ রায় দ্রুত কার্যকর করতে হবে। উপজেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি পবিত্র কুমার দত্ত বলেন, খুনিদের জন্য যা শাস্তি হওয়া প্রয়োজন আদালত তা দিয়েছেন। এ রায়ে আমরা দোকান মালিক সমিতি অত্যন্ত খুশি। বাজারের ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম বলেন, শুধু এমপির মামলা নয়, সব মামলার ক্ষেত্রে সঠিক ও দ্রুত রায় কার্যকর করা দরকার। তিনি এ রায়ে খুশি বলে জানান।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে ক্ষমতাসীন দলের এমপি লিটন হত্যা মামলায় সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক এই রায় ঘোষণা করেন। চার্জশিটে অভিযুক্ত আট আসামির মধ্যে মৃত একজনকে ছাড়া বাকিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া এক আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন।
২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা (মাস্টারপাড়া) গ্রামের নিজবাড়িতে খুন হন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে ক্ষমতাসীন দলের এমপি লিটন। দুটি মোটরসাইকেলে করে আসা দুর্বৃত্তরা গুলি করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান। সেই হত্যাকাণ্ডের দুই বছর ১১ মাসের মাথায় চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রায় হলো। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সাবেক এমপি আবদুল কাদের খাঁন, আবদুল কাদের খানের একান্ত সহকারী মো. শামছুজ্জোহা, তার গাড়ি চালক আবদুল হান্নান, তার গৃহকর্মী মেহেদি হাসান, দূর সস্পর্কের ভাগ্নে ও তার বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শাহীন মিয়া, পোশাক কারখানার সাবেক কর্মী আনোয়ারুল ইসলাম রানা এবং ভারতে পলাতক আসামি চন্দন কুমার রায়। মামলার অপর আসামি কসাই সুবল চন্দ্র রায় এর আগে কারাগারে অসুস্থ হয়ে মারা যান। সুবল ছাড়া বাকি সাত জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ের সময় ছয় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
লিটন হত্যাকাণ্ডের পরদিন ১ জানুয়ারি অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েন করেন লিটনের বড় বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী। পরে অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ডা. আবদুল কাদের খাঁনসহ আট জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশ। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খানসহ আট জন অভিযুক্ত হন। ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল থেকে আদালতে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় গত ৩১ অক্টোবর। মামলার বাদী ও নিহতের স্ত্রীসহ ৫৯ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য গ্রহন করা হয়। গত ১৮ ও ১৯ নভেম্বর জেলা জজ আদালতের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক গ্রহণ করেন এবং ২৮ নভেম্বর মামলার রায়ের দিন ধার্য় করেন।