শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এমপি লিটন হত্যা মামলায় সাতজনের ফাঁসি

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:২৯:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৯
  • ৩৩৯ Time View

খোঁজ খবর রিপোর্ট : গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলায় জাপার সাবেক সাংসদ কর্ণেল (অব:) আবদুল কাদের খাঁনসহ সাতজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ দিলীপ কুমার ভৌমিক এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন আবদুল কাদের খানের একান্ত সহকারী মো. শামছুজ্জোহা, তার গাড়ি চালক আবদুল হান্নান, তার গৃহকর্মী মেহেদি হাসান, দূর সস্পর্কের ভাগ্নে ও তার বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শাহীন মিয়া, পোশাক কারখানার সাবেক কর্মী আনোয়ারুল ইসলাম রানা এবং ভারতে পলাতক আসামি চন্দন কুমার রায়। মামলার অপর আসামি কসাই সুবল চন্দ্র রায় এর আগে কারাগারে অসুস্থ হয়ে মারা যান।

এদিকে রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সাংসদ লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি বলেন, অতি দ্রুত এ রায় কার্যকর হোক সেটা আমি চাই এবং উচ্চতর আদালতে তারা যেন কোনো সুবিধা করতে না পারে, এ রায় বহাল থাকে সেটা আমি সকলের কাছে আবেদন করছি। পলাতক আসামি চন্দনকে অতি দ্রুত গ্রেপ্তারের মাধ্যমে রায় কার্যকর করার আবেদন জানান।

লিটনের বড় বোন ও মামলার বাদি ফাহমিদা কাকুলী বুলবুল বলেন, এই রায়ে আমরা খুশি। এই রায় দ্রুত কার্যকর করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।

রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি যার ফলে বিজ্ঞ আদালত সকল আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এ রায় গাইবান্ধাসহ সারাদেশবাসী, সমস্ত সংসদ সদস্য ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সন্তুষ্ট হয়েছেন ইনশাআল্লাহ।

অপরদিকে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি কাদের খানের আইনজীবী মঞ্জুর মোর্শেদ বাবু বলেন, শুধুমাত্র ১৬৪ ধারার জবানবন্দির উপর ভিত্তি করে এই সর্বোচ্চ রায় দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য স্বাক্ষীরা কাদের খান যে, এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত তারা কেই বলেনি। আসামি ন্যায় বিচার পায়নি। তাই কাদের খানের পক্ষ থেকে আমরা খুব দ্রুত মহামান্য হাইকোর্টে আপিল করব এবং মহামান্য হাইকোর্ট থেকে ন্যায়বিচার পাব বলে আশা করি।

অন্যান্য আসামি পক্ষের অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, এই রায়ে আমরা  ন্যায়বিচার পাইনি। কাদের খান ব্যাতীত অন্যান্য আসামিদের হাইকোর্টে আপিল করার মত আর্থিক সঙ্গতি নেই। তাই তারা জেল আপিলের সিদ্ধান্ত নেবেন এবং উচ্চ আদালতে তারা ন্যায় বিচার পাবেন বলে তিনি আশা করেন।

এদিকে বহুল আলোচিত এমপি লিটন হত্যা মামলার রায় শোনার জন্য সকাল থেকে আদালত চত্বরে বিপুল সংখ্যক উৎসুক জনতার সমাগম ঘটে। রায়কে ঘিরে আদালত চত্বরসহ আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রবেশের মুখে দেহ তল্লাশি করে আদালতে ঢুকতে দেয়া হয়। এর আগে সকালে এমপি লিটনের নির্বাচনী এলাকা সুন্দরগঞ্জ থেকে আসা দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থক ও সর্বসাধারণ হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসি চেয়ে আদালত চত্বরের সামনে রাস্তায় বিশাল মানববন্ধন করেন।

এর আগে  ১৮ ও ১৯ নভেম্বর দুইদিন রাষ্টপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবিদের যুক্তিতর্ক শেষ হলে গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ দিলীপ কুমার ভৌমিক আজ রায়ের দিন ধার্য করেন। ১৯ নভেম্বর আদালতে সাক্ষী ও হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী সাবেক এমপি কর্ণেল (অব:) আবদুল কাদের খাঁনসহ অভিযুক্ত ৮ আসামির মধ্যে ৬ জনের উপস্থিতিতে যুক্তিতর্ক শেষ হয়।

আলোচিত এ মামলার ২০১৮ সালের ৭ ফেব্র“য়ারি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল প্রথম দফায় আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষগ্রহণ শুরু হয়। বাদি নিহতের ছোট বোন ফাহমিদা কাকুলী বুলবুল, নিহতের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ এ পর্যন্ত ৫৯ জন সাক্ষীর সাক্ষগ্রহণ করেছে আদালত। গত ৩১ অক্টোবর মামলার সাক্ষী গ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালতে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। পরে পর্যায়ক্রমে কারাগারে থাকা আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন শুনানী হয় আদালতে।

প্রসঙ্গত: ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার মাস্টারপাড়ার নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করে লিটনের বড় বোন ফাহমিদা কাকুলী বুলবুল। তদন্ত শেষে কাদের খাঁনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী বগুড়া বাসা থেকে গ্রেফতারের পর থেকে কাদের খাঁন গাইবান্ধা জেলা কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া আসামি আবদুল কাদের খানের একান্ত সহকারী মো. শামছুজ্জোহা, তার গাড়ি চালক আবদুল হান্নান, তার গৃহকর্মী মেহেদি হাসান, দূর সস্পর্কের ভাগ্নে ও তার বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শাহীন মিয়া, পোশাক কারখানার সাবেক কর্মী আনোয়ারুল ইসলাম রানা কারাগারে আছেন।অপর আসামি কসাই সুবল চন্দ্র রায় কারাগারে মৃত্যু বরণ করেন এবং চন্দন কুমার ভারতে পলাতক রয়েছেন।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

MD ZANNATUL FERDOUSH

NEWS PURPOSE
Popular Post

তেঁতুলিয়ায় ক্ল ুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন, বীরগঞ্জ থেকে আসামি আটক

এমপি লিটন হত্যা মামলায় সাতজনের ফাঁসি

Update Time : ০৪:২৯:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

খোঁজ খবর রিপোর্ট : গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলায় জাপার সাবেক সাংসদ কর্ণেল (অব:) আবদুল কাদের খাঁনসহ সাতজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ দিলীপ কুমার ভৌমিক এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন আবদুল কাদের খানের একান্ত সহকারী মো. শামছুজ্জোহা, তার গাড়ি চালক আবদুল হান্নান, তার গৃহকর্মী মেহেদি হাসান, দূর সস্পর্কের ভাগ্নে ও তার বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শাহীন মিয়া, পোশাক কারখানার সাবেক কর্মী আনোয়ারুল ইসলাম রানা এবং ভারতে পলাতক আসামি চন্দন কুমার রায়। মামলার অপর আসামি কসাই সুবল চন্দ্র রায় এর আগে কারাগারে অসুস্থ হয়ে মারা যান।

এদিকে রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সাংসদ লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি বলেন, অতি দ্রুত এ রায় কার্যকর হোক সেটা আমি চাই এবং উচ্চতর আদালতে তারা যেন কোনো সুবিধা করতে না পারে, এ রায় বহাল থাকে সেটা আমি সকলের কাছে আবেদন করছি। পলাতক আসামি চন্দনকে অতি দ্রুত গ্রেপ্তারের মাধ্যমে রায় কার্যকর করার আবেদন জানান।

লিটনের বড় বোন ও মামলার বাদি ফাহমিদা কাকুলী বুলবুল বলেন, এই রায়ে আমরা খুশি। এই রায় দ্রুত কার্যকর করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।

রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি যার ফলে বিজ্ঞ আদালত সকল আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এ রায় গাইবান্ধাসহ সারাদেশবাসী, সমস্ত সংসদ সদস্য ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সন্তুষ্ট হয়েছেন ইনশাআল্লাহ।

অপরদিকে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি কাদের খানের আইনজীবী মঞ্জুর মোর্শেদ বাবু বলেন, শুধুমাত্র ১৬৪ ধারার জবানবন্দির উপর ভিত্তি করে এই সর্বোচ্চ রায় দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য স্বাক্ষীরা কাদের খান যে, এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত তারা কেই বলেনি। আসামি ন্যায় বিচার পায়নি। তাই কাদের খানের পক্ষ থেকে আমরা খুব দ্রুত মহামান্য হাইকোর্টে আপিল করব এবং মহামান্য হাইকোর্ট থেকে ন্যায়বিচার পাব বলে আশা করি।

অন্যান্য আসামি পক্ষের অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, এই রায়ে আমরা  ন্যায়বিচার পাইনি। কাদের খান ব্যাতীত অন্যান্য আসামিদের হাইকোর্টে আপিল করার মত আর্থিক সঙ্গতি নেই। তাই তারা জেল আপিলের সিদ্ধান্ত নেবেন এবং উচ্চ আদালতে তারা ন্যায় বিচার পাবেন বলে তিনি আশা করেন।

এদিকে বহুল আলোচিত এমপি লিটন হত্যা মামলার রায় শোনার জন্য সকাল থেকে আদালত চত্বরে বিপুল সংখ্যক উৎসুক জনতার সমাগম ঘটে। রায়কে ঘিরে আদালত চত্বরসহ আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রবেশের মুখে দেহ তল্লাশি করে আদালতে ঢুকতে দেয়া হয়। এর আগে সকালে এমপি লিটনের নির্বাচনী এলাকা সুন্দরগঞ্জ থেকে আসা দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থক ও সর্বসাধারণ হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসি চেয়ে আদালত চত্বরের সামনে রাস্তায় বিশাল মানববন্ধন করেন।

এর আগে  ১৮ ও ১৯ নভেম্বর দুইদিন রাষ্টপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবিদের যুক্তিতর্ক শেষ হলে গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ দিলীপ কুমার ভৌমিক আজ রায়ের দিন ধার্য করেন। ১৯ নভেম্বর আদালতে সাক্ষী ও হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী সাবেক এমপি কর্ণেল (অব:) আবদুল কাদের খাঁনসহ অভিযুক্ত ৮ আসামির মধ্যে ৬ জনের উপস্থিতিতে যুক্তিতর্ক শেষ হয়।

আলোচিত এ মামলার ২০১৮ সালের ৭ ফেব্র“য়ারি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল প্রথম দফায় আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষগ্রহণ শুরু হয়। বাদি নিহতের ছোট বোন ফাহমিদা কাকুলী বুলবুল, নিহতের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ এ পর্যন্ত ৫৯ জন সাক্ষীর সাক্ষগ্রহণ করেছে আদালত। গত ৩১ অক্টোবর মামলার সাক্ষী গ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালতে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। পরে পর্যায়ক্রমে কারাগারে থাকা আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন শুনানী হয় আদালতে।

প্রসঙ্গত: ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার মাস্টারপাড়ার নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করে লিটনের বড় বোন ফাহমিদা কাকুলী বুলবুল। তদন্ত শেষে কাদের খাঁনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী বগুড়া বাসা থেকে গ্রেফতারের পর থেকে কাদের খাঁন গাইবান্ধা জেলা কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া আসামি আবদুল কাদের খানের একান্ত সহকারী মো. শামছুজ্জোহা, তার গাড়ি চালক আবদুল হান্নান, তার গৃহকর্মী মেহেদি হাসান, দূর সস্পর্কের ভাগ্নে ও তার বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শাহীন মিয়া, পোশাক কারখানার সাবেক কর্মী আনোয়ারুল ইসলাম রানা কারাগারে আছেন।অপর আসামি কসাই সুবল চন্দ্র রায় কারাগারে মৃত্যু বরণ করেন এবং চন্দন কুমার ভারতে পলাতক রয়েছেন।