শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৪২:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৯
  • ১৮১ Time View

খোঁজ খবর ডেস্ক: আজ বুধবার বহুল আলোচিত গুলশানের হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। এ জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত চত্বরে বিশেষ নিরাপত্তা জোরদারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ তথ্য প্রসিকিউশনের উপকমিশনার জাফর হোসেন গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গতকাল মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত চত্বর ঘুরে দেখেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় ও মীর রেজাউল আলম। তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তাসংক্রান্ত নানা দিকনির্দেশনা দেন। এসময় উপকমিশনার জাফর হোসেনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে বিচারক রায় ঘোষণার জন্য ২৭ নভেম্বর নির্ধারণ করেন।সব আসামির ‘মৃত্যুদণ্ড’ প্রত্যাশা রাষ্ট্রপক্ষের। অপরদিকে ‘ন্যায়বিচার’ প্রত্যাশা আসামিপক্ষের।

এ পর্যন্ত মোট ১১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এর আগে ৮ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। একই বছরের ২৩ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতের জিআর শাখায় মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ২৬ জুলাই সিএমএম আদালত মামলাটি ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেন। অভিযোগপত্রে নাম থাকা ২১ আসামির মধ্যে ১৩ জন মারা যাওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। নিহত ১৩ জনের মধ্যে ৮ জন বিভিন্ন অভিযানে এবং ৫ জন ঘটনাস্থলে নিহত হয়।


অভিযোগপত্রের ৮ আসামি হলো, হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফেরাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। তারা সবাই কারাগারে। ঘটনাস্থলে নিহত ৫ আসামি হলো রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।


আর বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানের সময় নিহত ৮ আসামি হলো তামিম চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ার জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।

হলি আর্টিজানে হামলার উদ্দেশ্য : হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পেছনে জঙ্গিদের তিনটি উদ্দেশ্য ছিল। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে যে সেব তথ্য তদন্তকারী সংস্থার কাছে সরবরাহ করেছে আসামীরা তাতে জানা যায়, এই হামলার উদ্দেশ্য প্রথমত, কূটনৈতিক এলাকায় হামলা করে নিজেদের সামর্থ্য জানান দেয়া। দ্বিতীয়ত, বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করে নৃশংসতার প্রকাশ ঘটানো। তৃতীয়ত, দেশে বিদেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পাওয়ার মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা।

যেভাবে হলি আর্টিজানে হামলা : ইসাবা’র (সামরিক) পাঁচজন সদস্য দুটি দলে বিভক্ত হয়ে বসুন্ধরার বাসা থেকে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার উদ্দেশে রওনা হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই বিকাল ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার দিকে কাঁধে থাকা ব্যাগে অস্ত্র-গুলি, গ্রেনেড, চাকু নিয়ে বের হয়ে রাত ৮টা ৪২ মিনিটের দিকে সেখানে পৌঁছে। প্রথমে নিবরাস ইসলাম ও মীর সামেহ মোবাশ্বের এবং একটু পর রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম বাঁধন কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হলি আর্টিজানের মেইন গেটে যায়।

গেটের নিরাপত্তাকর্মী নূর ইসলাম তাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে নিবরাস নিরাপত্তাকর্মীর ডান চোখের নিচে ঘুষি মেরে তারা হলি আর্টিজানের ভেতর ঢুকে যায়। ঢুকেই গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ৩০ মিনিটের মধ্যেই পাঁচ জঙ্গির কাছে থাকা অস্ত্র-গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে দেশি-বিদেশিদের হত্যা করে। বিভিন্ন রুম, টয়লেট, চিলারঘর, হিমঘর ইত্যাদি স্থান থেকে বিদেশিদের বের করে এনে তারা এই হত্যাযজ্ঞ চালায়।এক পর্যায়ে তারা দেশি-বিদেশিদের গুলি করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

অপারেশন থান্ডারবোল্ট : উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের আদেশক্রমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও র‌্যাব সহযোগী সম্মিলিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। সকাল ৭টার দিকে প্যারা কমান্ডো হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট রেকি করে। সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা শুরু হয়। প্যারা কমান্ডো সদস্যরা ক্রলিং করতে করতে সামনে দিকে এগোতে থাকে এবং গুলি ছুড়তে থাকে পদাতিক ডিভিশন ও স্লাইপার টিম। এ সময় জঙ্গিরাও গুলি ছুড়তে থাকে। ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যে সব সন্ত্রাসী নির্মূল করে প্যারা কমান্ডো টার্গেট এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। পরে অপারেশনের অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে সকাল সাড়ে ৮টায় অভিযানের সমাপ্তি ঘটে। অভিযানে এক জাপানি ও দু’জন শ্রীলংকার নাগরিকসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

হামলায় নিহত ও আহত যারা : ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি ২২ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। এদের মধ্যে নয়জন ইতালির নাগরিক, সাতজন জাপানের নাগরিক, একজন ভারতীয় নাগরিক, একজন বাংলাদেশ-আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক, দু’জন বাংলাদেশি নাগরিক ও দু’জন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন।

এছাড়া পরবর্তীকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টের দু’জন স্টাফ মারা যান। নিহত ইতালির নয় নাগরিক হলেন- মার্কো টোনডাট, ভিনজেনজো ডি’অ্যালেস্ট্রো, সিমোনা মন্টি, মারিয়া রিবোলি, নাদিয়া বেনেভেট্ট, অ্যাডেলে পুগলিসি, ক্লদিও ক্যাপেলি, ক্রিশ্চিয়ান রসি ও ক্লদিয়া মারিয়া ডি’অ্যান্টোনা। জাপানের সাত নাগরিক হলেন- হিডেকি হাশিমোটা, কোয়া ওগাসাওয়ারা, মাকোটো ওকামুরা, হেরোশি তানাকা, ইয়োকি সাকাই, নোবুহিরো কোরুসাকি ও রুই শিমোডাইরা।

ভারতীয় নাগরিক তারিশি জৈন, বাংলাদেশ-আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক অবিন্তা কবির, বাংলাদেশি দুই নাগরিক ইশরাত জাহান আখন্দ ও ফারাজ আইয়াজ হোসেন এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রবিউল করিম ও পুলিশ পরিদর্শক সালাউদ্দিন আহম্মেদ খান ভয়াবহ ওই হামলায় নিহত হন। পরে হলি আর্টিজানের দু’জন স্টাফ সাইফুল চৌকিদার ও জাকির হোসেন শাওন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়া ওই হামলায় ৩০ থেকে ৩৫ জন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন।

হামলায় জড়িত নিহত ১৩ জঙ্গি : গুলশান হামলায় জড়িতদের মধ্যে নিহত ১৩ জনের পাঁচজন নিহত হয় হলি আর্টিজান হামলায় অভিযানের সময়ই। এরা হচ্ছে  রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল। বাকি আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ার জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।

কারাগারে থাকা আট আসামি : মামলায় চার্জশিটভুক্ত আট আসামিই কারাগারে রয়েছে। এরা হচ্ছে- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

MD ZANNATUL FERDOUSH

NEWS PURPOSE
Popular Post

তেঁতুলিয়ায় ক্ল ুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন, বীরগঞ্জ থেকে আসামি আটক

হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার

Update Time : ০৬:৪২:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৯

খোঁজ খবর ডেস্ক: আজ বুধবার বহুল আলোচিত গুলশানের হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। এ জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত চত্বরে বিশেষ নিরাপত্তা জোরদারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ তথ্য প্রসিকিউশনের উপকমিশনার জাফর হোসেন গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গতকাল মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত চত্বর ঘুরে দেখেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় ও মীর রেজাউল আলম। তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তাসংক্রান্ত নানা দিকনির্দেশনা দেন। এসময় উপকমিশনার জাফর হোসেনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে বিচারক রায় ঘোষণার জন্য ২৭ নভেম্বর নির্ধারণ করেন।সব আসামির ‘মৃত্যুদণ্ড’ প্রত্যাশা রাষ্ট্রপক্ষের। অপরদিকে ‘ন্যায়বিচার’ প্রত্যাশা আসামিপক্ষের।

এ পর্যন্ত মোট ১১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এর আগে ৮ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। একই বছরের ২৩ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতের জিআর শাখায় মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ২৬ জুলাই সিএমএম আদালত মামলাটি ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেন। অভিযোগপত্রে নাম থাকা ২১ আসামির মধ্যে ১৩ জন মারা যাওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। নিহত ১৩ জনের মধ্যে ৮ জন বিভিন্ন অভিযানে এবং ৫ জন ঘটনাস্থলে নিহত হয়।


অভিযোগপত্রের ৮ আসামি হলো, হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফেরাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। তারা সবাই কারাগারে। ঘটনাস্থলে নিহত ৫ আসামি হলো রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।


আর বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানের সময় নিহত ৮ আসামি হলো তামিম চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ার জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।

হলি আর্টিজানে হামলার উদ্দেশ্য : হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পেছনে জঙ্গিদের তিনটি উদ্দেশ্য ছিল। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে যে সেব তথ্য তদন্তকারী সংস্থার কাছে সরবরাহ করেছে আসামীরা তাতে জানা যায়, এই হামলার উদ্দেশ্য প্রথমত, কূটনৈতিক এলাকায় হামলা করে নিজেদের সামর্থ্য জানান দেয়া। দ্বিতীয়ত, বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করে নৃশংসতার প্রকাশ ঘটানো। তৃতীয়ত, দেশে বিদেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পাওয়ার মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা।

যেভাবে হলি আর্টিজানে হামলা : ইসাবা’র (সামরিক) পাঁচজন সদস্য দুটি দলে বিভক্ত হয়ে বসুন্ধরার বাসা থেকে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার উদ্দেশে রওনা হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই বিকাল ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার দিকে কাঁধে থাকা ব্যাগে অস্ত্র-গুলি, গ্রেনেড, চাকু নিয়ে বের হয়ে রাত ৮টা ৪২ মিনিটের দিকে সেখানে পৌঁছে। প্রথমে নিবরাস ইসলাম ও মীর সামেহ মোবাশ্বের এবং একটু পর রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম বাঁধন কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হলি আর্টিজানের মেইন গেটে যায়।

গেটের নিরাপত্তাকর্মী নূর ইসলাম তাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে নিবরাস নিরাপত্তাকর্মীর ডান চোখের নিচে ঘুষি মেরে তারা হলি আর্টিজানের ভেতর ঢুকে যায়। ঢুকেই গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ৩০ মিনিটের মধ্যেই পাঁচ জঙ্গির কাছে থাকা অস্ত্র-গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে দেশি-বিদেশিদের হত্যা করে। বিভিন্ন রুম, টয়লেট, চিলারঘর, হিমঘর ইত্যাদি স্থান থেকে বিদেশিদের বের করে এনে তারা এই হত্যাযজ্ঞ চালায়।এক পর্যায়ে তারা দেশি-বিদেশিদের গুলি করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

অপারেশন থান্ডারবোল্ট : উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের আদেশক্রমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও র‌্যাব সহযোগী সম্মিলিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। সকাল ৭টার দিকে প্যারা কমান্ডো হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট রেকি করে। সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা শুরু হয়। প্যারা কমান্ডো সদস্যরা ক্রলিং করতে করতে সামনে দিকে এগোতে থাকে এবং গুলি ছুড়তে থাকে পদাতিক ডিভিশন ও স্লাইপার টিম। এ সময় জঙ্গিরাও গুলি ছুড়তে থাকে। ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যে সব সন্ত্রাসী নির্মূল করে প্যারা কমান্ডো টার্গেট এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। পরে অপারেশনের অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে সকাল সাড়ে ৮টায় অভিযানের সমাপ্তি ঘটে। অভিযানে এক জাপানি ও দু’জন শ্রীলংকার নাগরিকসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

হামলায় নিহত ও আহত যারা : ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি ২২ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। এদের মধ্যে নয়জন ইতালির নাগরিক, সাতজন জাপানের নাগরিক, একজন ভারতীয় নাগরিক, একজন বাংলাদেশ-আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক, দু’জন বাংলাদেশি নাগরিক ও দু’জন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন।

এছাড়া পরবর্তীকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টের দু’জন স্টাফ মারা যান। নিহত ইতালির নয় নাগরিক হলেন- মার্কো টোনডাট, ভিনজেনজো ডি’অ্যালেস্ট্রো, সিমোনা মন্টি, মারিয়া রিবোলি, নাদিয়া বেনেভেট্ট, অ্যাডেলে পুগলিসি, ক্লদিও ক্যাপেলি, ক্রিশ্চিয়ান রসি ও ক্লদিয়া মারিয়া ডি’অ্যান্টোনা। জাপানের সাত নাগরিক হলেন- হিডেকি হাশিমোটা, কোয়া ওগাসাওয়ারা, মাকোটো ওকামুরা, হেরোশি তানাকা, ইয়োকি সাকাই, নোবুহিরো কোরুসাকি ও রুই শিমোডাইরা।

ভারতীয় নাগরিক তারিশি জৈন, বাংলাদেশ-আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক অবিন্তা কবির, বাংলাদেশি দুই নাগরিক ইশরাত জাহান আখন্দ ও ফারাজ আইয়াজ হোসেন এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রবিউল করিম ও পুলিশ পরিদর্শক সালাউদ্দিন আহম্মেদ খান ভয়াবহ ওই হামলায় নিহত হন। পরে হলি আর্টিজানের দু’জন স্টাফ সাইফুল চৌকিদার ও জাকির হোসেন শাওন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়া ওই হামলায় ৩০ থেকে ৩৫ জন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন।

হামলায় জড়িত নিহত ১৩ জঙ্গি : গুলশান হামলায় জড়িতদের মধ্যে নিহত ১৩ জনের পাঁচজন নিহত হয় হলি আর্টিজান হামলায় অভিযানের সময়ই। এরা হচ্ছে  রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল। বাকি আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ার জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।

কারাগারে থাকা আট আসামি : মামলায় চার্জশিটভুক্ত আট আসামিই কারাগারে রয়েছে। এরা হচ্ছে- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন।