সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরমাণু অস্ত্র কখনই নিরাপত্তা, শান্তি এবং স্থিতি আনতে পারে না-পোপ ফ্রান্সিস

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৫২:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৯
  • ১৮০ Time View

খোঁজ খবর ডেস্ক: পোপ ফ্রান্সিস জাপান সফরে বলেছেন, পরমাণু অস্ত্র কখনই নিরাপত্তা, শান্তি এবং স্থিতি আনতে পারে না। পরমাণু কর্মসূচি বিরোধী প্রচারে নেমে এমন বার্তাই দিলেন তিনি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন পরমাণু বোমায় জাপানের দুই শহর হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন লক্ষাধিক মানুষ। সেই ক্ষত এখনও দগদগে হয়ে রয়েছে সেখানকার মানুষের মধ্যে। তাই জাপান থেকেই পরমাণু কর্মসূচি বিরোধী প্রচার শুরুর সিদ্ধান্ত নেন ৮২ বছরের পোপ। নাগাসাকিতে আক্রান্তদের ‘অকথ্য আতঙ্কের’ প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি, পরমাণু অস্ত্র বর্জনের ডাক দেন তিনি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন, ১৯৪৫ সালের অগস্টে তিন দিনের ব্যবধানে পর পর হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে দু’টি পরমাণু বোমা ফেলেছিল আমেরিকা। প্রাণ হারিয়েছিলেন কমপক্ষে দু’লক্ষ মানুষ। মঞ্চে পোপের পিছনে রাখা একটি প্রতীকী ছবি সেই মর্মান্তিক ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল। ওই ছবিটি ছিল, পিঠে করে তার ছোট ভাইয়ের মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছে এক কিশোর।

পোপ আজ বলেন, ‘‘মানুষ একে অপরকে কতটা কষ্ট দিতে পারে তা এই জায়গায় দাঁড়িয়ে উপলব্ধি করতে পারি।’’ প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বর্ষাতি গায়ে পোপের বার্তা শুনতে হাজির হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। পোপ শান্তি আনার লক্ষ্যে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ওই প্রবণতাকে ‘বিপথগামী বৈপরীত্য’ বলেও ভর্ৎসনা করেন তিনি। বিশ্বজুড়ে যে কোটি কোটি ডলারের অস্ত্র ব্যবসা চলছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তা নিয়েও।

এর পর হিরোশিমায় গিয়েও একই বার্তা দেন পোপ। সেখানকার ‘পিস মেমোরিয়াল পার্ক’-এ (শান্তি স্মারক) গিয়ে তিনি সেই ভয়ঙ্কর অতীত প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই জায়গা ওই বোমার আঘাতে মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যু এবং ধ্বংসের ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়। নিস্তব্ধতার মধ্যেও এখনও আমাদের কানে ভেসে আসে নিহতদের সেই আর্তনাদ।’’ যুদ্ধের অনুষঙ্গ হিসেবে পরমাণু শক্তির ব্যবহারকে ‘অপরাধ’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এটা কেবল মানবজাতির বিরুদ্ধে অপরাধ নয়। আমাদের সকলের এক সঙ্গে বাস করার বিষয়েও প্রশ্নচিহ্ন তোলে পরমাণু অস্ত্রের প্রসার।’’

জাপানে পরমাণু হামলার সাক্ষী বেশ কয়েক জন প্রবীণের সঙ্গেও কথা বলেন পোপ। তাঁর কাছে ওই প্রবীণেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, তাঁদের মৃত্যুর পর হয়তো ওই ঘটনার ভয়াবহতা মানুষের স্মৃতি থেকে ক্ষীণ হয়ে যাবে। তবে পোপ এই বিষয় নিয়ে প্রচারে নামাতে তাঁরা কিছুটা আশাবাদী বলেও পোপকে জানান ওই তাঁরা।

পোপ ফ্রান্সিস আজ জানিয়েছেন, অনেক দিন ধরেই তাঁর জাপান সফরে আসার ইচ্ছে ছিল। তিনি জানান, কিশোর বয়স থেকেই ওই দেশের প্রতি একটা আকর্ষণ অনুভব করতেন তিনি। হিরোশিমা থেকে আজ রাতেই টোকিয়োয় ফিরে আসবেন পোপের।

২০১১ সালের ‘তিন বিপর্যয়’ ভূমিকম্প, সুনামি এবং তার জেরে পরমাণু চুল্লিগুলি থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণে যাঁরা আক্রান্ত হন, আগামিকাল তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। পরে জাপানের রাজা নারুহিতোর সঙ্গেও দেখা করার কথা তাঁর। বৈঠক করবেন কয়েক জন ক্যাথলিক আধিকারিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

MD ZANNATUL FERDOUSH

NEWS PURPOSE

এবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক পাচ্ছেন ২ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান

পরমাণু অস্ত্র কখনই নিরাপত্তা, শান্তি এবং স্থিতি আনতে পারে না-পোপ ফ্রান্সিস

Update Time : ০৬:৫২:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

খোঁজ খবর ডেস্ক: পোপ ফ্রান্সিস জাপান সফরে বলেছেন, পরমাণু অস্ত্র কখনই নিরাপত্তা, শান্তি এবং স্থিতি আনতে পারে না। পরমাণু কর্মসূচি বিরোধী প্রচারে নেমে এমন বার্তাই দিলেন তিনি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন পরমাণু বোমায় জাপানের দুই শহর হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন লক্ষাধিক মানুষ। সেই ক্ষত এখনও দগদগে হয়ে রয়েছে সেখানকার মানুষের মধ্যে। তাই জাপান থেকেই পরমাণু কর্মসূচি বিরোধী প্রচার শুরুর সিদ্ধান্ত নেন ৮২ বছরের পোপ। নাগাসাকিতে আক্রান্তদের ‘অকথ্য আতঙ্কের’ প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি, পরমাণু অস্ত্র বর্জনের ডাক দেন তিনি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন, ১৯৪৫ সালের অগস্টে তিন দিনের ব্যবধানে পর পর হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে দু’টি পরমাণু বোমা ফেলেছিল আমেরিকা। প্রাণ হারিয়েছিলেন কমপক্ষে দু’লক্ষ মানুষ। মঞ্চে পোপের পিছনে রাখা একটি প্রতীকী ছবি সেই মর্মান্তিক ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল। ওই ছবিটি ছিল, পিঠে করে তার ছোট ভাইয়ের মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছে এক কিশোর।

পোপ আজ বলেন, ‘‘মানুষ একে অপরকে কতটা কষ্ট দিতে পারে তা এই জায়গায় দাঁড়িয়ে উপলব্ধি করতে পারি।’’ প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বর্ষাতি গায়ে পোপের বার্তা শুনতে হাজির হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। পোপ শান্তি আনার লক্ষ্যে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ওই প্রবণতাকে ‘বিপথগামী বৈপরীত্য’ বলেও ভর্ৎসনা করেন তিনি। বিশ্বজুড়ে যে কোটি কোটি ডলারের অস্ত্র ব্যবসা চলছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তা নিয়েও।

এর পর হিরোশিমায় গিয়েও একই বার্তা দেন পোপ। সেখানকার ‘পিস মেমোরিয়াল পার্ক’-এ (শান্তি স্মারক) গিয়ে তিনি সেই ভয়ঙ্কর অতীত প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই জায়গা ওই বোমার আঘাতে মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যু এবং ধ্বংসের ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়। নিস্তব্ধতার মধ্যেও এখনও আমাদের কানে ভেসে আসে নিহতদের সেই আর্তনাদ।’’ যুদ্ধের অনুষঙ্গ হিসেবে পরমাণু শক্তির ব্যবহারকে ‘অপরাধ’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এটা কেবল মানবজাতির বিরুদ্ধে অপরাধ নয়। আমাদের সকলের এক সঙ্গে বাস করার বিষয়েও প্রশ্নচিহ্ন তোলে পরমাণু অস্ত্রের প্রসার।’’

জাপানে পরমাণু হামলার সাক্ষী বেশ কয়েক জন প্রবীণের সঙ্গেও কথা বলেন পোপ। তাঁর কাছে ওই প্রবীণেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, তাঁদের মৃত্যুর পর হয়তো ওই ঘটনার ভয়াবহতা মানুষের স্মৃতি থেকে ক্ষীণ হয়ে যাবে। তবে পোপ এই বিষয় নিয়ে প্রচারে নামাতে তাঁরা কিছুটা আশাবাদী বলেও পোপকে জানান ওই তাঁরা।

পোপ ফ্রান্সিস আজ জানিয়েছেন, অনেক দিন ধরেই তাঁর জাপান সফরে আসার ইচ্ছে ছিল। তিনি জানান, কিশোর বয়স থেকেই ওই দেশের প্রতি একটা আকর্ষণ অনুভব করতেন তিনি। হিরোশিমা থেকে আজ রাতেই টোকিয়োয় ফিরে আসবেন পোপের।

২০১১ সালের ‘তিন বিপর্যয়’ ভূমিকম্প, সুনামি এবং তার জেরে পরমাণু চুল্লিগুলি থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণে যাঁরা আক্রান্ত হন, আগামিকাল তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। পরে জাপানের রাজা নারুহিতোর সঙ্গেও দেখা করার কথা তাঁর। বৈঠক করবেন কয়েক জন ক্যাথলিক আধিকারিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও।