খোঁজ খবর ডেস্ক: শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেসের জোট বলছে, সরকার গঠনের দাবিদার তাঁরাই। অজিত পওয়ারকে পরিষদীয় দলনেতার পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে এনসিপি। কিন্তু তার পরেও সেই অজিতই বলছেন, ‘বিজেপি-এনসিপি জোট’ই স্থায়ী সরকার গড়বে। রাজনৈতিক মহলকে আরও স্তম্ভিত করে তাঁর টুইট, ‘শরদ পওয়ারই আমাদের দলনেতা’। ফলে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে কার্যত গোলকধাঁধার পরিস্থিতি। বহু বিভ্রান্তি, অনেক প্রশ্ন, পরের পর বৈঠক, সমীকরণ-পাল্টা সমীকরণের খেলায় শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি যে কোন দিকে গড়াবে, শনিবারের মহা-নাটকীয় পট পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও আর আগাম কোনও পূর্বাবাস করতে নারাজ। ফ্লোর টেস্ট’ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে নজর রয়েছে।
দেবেন্দ্র ফডণবীস-অজিত পওয়াররা সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে যখন হিসেবের কাটাছেঁড়া চলছে, ঠিক তখনই নতুন বিভ্রান্তি ভাসিয়ে দিলেন অজিত। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি এনসিপিতেই আছি এবং সব সময় এনসিপি-তেই থাকব।’’ এ পর্যন্ত তবু কিছুটা আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল যে তিনিই নিজেকে এনসিপি-র প্রধান বলে ধরে নিচ্ছেন। কিন্তু বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে ওই টুইটের পরের অংশে। সেখানে তাঁর মন্তব্য, ‘‘শরদ পওয়ারই আমাদের নেতা।’’
অজিতের এই মন্তব্যের ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে কার্যত হিমশিম খাচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কারণ শরদ পওয়ার জানিয়েছেন, বিজেপিকে সমর্থন অজিতের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, দলের কোনও সম্পর্ক নেই। বিধায়কদের বৈঠকে অজিতকে পরিষদীয় দলনেতার পদ থেকেও সরিয়ে দিয়েছে এনসিপি। তার পরেও ‘শরদ পওয়ার নেতা’ এবং তিনি ‘এনসিপিতে’ এই মন্তব্যের ব্যাখ্যা কার্যত খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা। তবে পর্যবেক্ষকদের একটা অংশ মনে করছেন, বেকায়দায় পড়ে সরকার গঠনের জন্য বিজেপির প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিধায়ক জোগাড় করতে না পেরে ফের শরদ পওয়ারের দিকে ঝুঁকতে পারেন অজিত।
কিন্তু এর সঙ্গে আবার অজিত দাবি করেছেন, ‘‘বিজেপি-এনসিপি জোট মহারাষ্ট্রে পাঁচ বছরের স্থায়ী সরকার গঠন করবে এবং রাজ্যের মানুষের কল্যাণে কাজ করবে।’’ তাঁর আরও আত্মবিশ্বাসী ঘোষণা, ‘‘উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণ নেই। সব ঠিকঠাক আছে। আপনাদের সবাইকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।’’
কিন্তু উল্টো শিবিরে শিবসেনা-এনসিপি ও কংগ্রেসের জোট এখনও পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ। উদ্ধব ঠাকরেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্ধারণ করে সরকার গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিন দলের নেতারা। ফডণবীস-অজিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হলে এই জোটই সরকার গঠনের দাবি জানাবে বলে এখনও পর্যন্ত ঠিক রয়েছে। শরদ পওয়ার বিজেপির সঙ্গে জোট করবেন, এমন কোনও ইঙ্গিতও দেননি। তাহলে কী ভাবে অজিত ‘বিজেপি-এনসিপি জোট’ বলছেন, এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আবার শরদ পওয়ার তাঁর নেতা বলে পরিস্থিতি আরও জটিল করে দিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, যে ভাবে প্রতি মুহূর্তে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে কোনও কিছুই যেমন আর অসম্ভব নয়, তেমনই মন্তব্য করাও সম্ভব নয়।
শনিবার শপথ নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ফডণবীস-অজিতকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই টুইট ট্যাগ করে রোববার বিকেল চারটেয় জবাব দিয়েছেন অজিত। সেখানেই আত্মবিশ্বাসী মন্তব্য অজিতের। লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, আপনাকে ধন্যবাদ। আমরা একটা স্থায়ী সরকার গঠন করব, যে সরকার মহারাষ্ট্রের মানুষের কল্যাণে কঠোর পরিশ্রম করবে।’’
অজিতের মন্তব্য নিয়ে জল্পনা-গুঞ্জনের মধ্যেই মধ্যেই সমান্তরাল ভাবে চলছে বৈঠকের পর বৈঠক। তিন দলের জোটের নেতাদের মধ্যে যেমন কথোপকথন চলছে, তেমনই দলীয় বিধায়ক-নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করছেন সংশ্লিষ্ট দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণে ভোটাভুটি হলে তার রণকৌশল কী হবে, সে সব নিয়ে আলোচনায় সব দলের নেতা-নেত্রীরা। কিন্তু তার মধ্যেও অনিশ্চয়তার মুখে উভয় পক্ষই। সঙ্গে নানা সাংবিধানিক জটিলতা, সংখ্যা জোগাড়ের তোড়জোড় সবই চলছে। কিন্তু শেষ যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা আঁচ করার জন্য আপাতত কোনও ভবিষ্যৎদ্রষ্টাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মহারাষ্ট্রে বা গোটা দেশে।