
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য বরকত উল্লাহ বুলু বলেছেন, ‘ নির্বাচিত সরকার ছাড়া তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়| তিস্তা আজ মরুভুমিতে পরিণত হয়েছে, তিস্তা বাঁচাও দাবি বাস্তবায়ন করতে হলে বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে ইনশাআল্লাহ। তখন তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের নেতৃত্বে তিস্তাপাড়ের মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ১৪৯০ মিটার তিস্তা ব্রিজ পয়েন্টে আয়োজিত জনতার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘তিস্তা উত্তরের লাখো মানুষের জীবন-জীবিকার অংশ। কিন্তু ন্যায্য পানির অভাবে তিস্তার দুই পাড়ের মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। বর্ষায় বন্যা, শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে কৃষি বিপর্যস্ত হচ্ছে। অথচ সরকার এখনো কোনো স্থায়ী সমাধান দিতে পারেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিণত হতে দেওয়া যাবে না। ভারতের কাছে নতি স্বীকার করব না, দেশের স্বার্থই সবার আগে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। আওয়ামী লীগ সরকার যে চীনের চুক্তি আটকে দিয়েছে, আমরা তা কার্যকর করব। বাঁধ নির্মাণ, খননকাজ ও উন্নত সেচব্যবস্থা নিশ্চিত করে কৃষকদের জন্য সারা বছর পানি সরবরাহ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য রাষ্ট্র সংস্কার জরুরি। তিস্তা এবং অন্যান্য নদী রক্ষার জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার, না হলে পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। এ নির্বাচনে বিএনপি ২৫০ আসন পেয়ে নির্বাচিত হলেও বিএনপি এককভাবে সরকার গঠন করবে না, বরং জাতীয় সরকার গঠন করবে।’
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের আয়োজনে এ সভায় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় জনগণ উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন গাইবান্ধা জেলা সমন্বয়কারী ও জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল আহমেদ ও সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামানিকের যৌথ সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য রওশনারা ফরিদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী টিটুল, মোজহারুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. খন্দকার জিয়াউল ইসলাম জিয়া, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আমিরুল ইসলাম ফকু, সুন্দরগঞ্জ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া নিপনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এরআগে, তিস্তা বাঁচাও দুইদিন ব্যাপী অবস্থান কর্মসূচির প্রথম দিনে সকাল থেকে সভাস্থলে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আসেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। এতে সংহতি জানিয়ে যোগদেন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাও। দুপুরের মধ্যে তিস্তা সেতুর সড়ক পয়েন্টে হাজার-হাজার মানুষের ঢল নামে।
আলোচনা সভা শেষে তিস্তা পাড়ের মানুষের দুঃখ-দর্দশার কথা তুলে ধরে জারি গান সারি গান ও ভাওয়াইয়াসহ নাটক মঞ্চায়িত করে স্থানীয় শিল্প গোষ্ঠি। পালাগান, সারিগান, ভাওয়াইয়া, লালনগীতি, লোকসংগীতের পাশাপাশি হা-ডু-ডু, ঘুড়ি উড়ানো, গোল্লাছুট ও দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিস্তাপাড়ের কৃষক, জেলে, মাঝি, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ দাবি আদায়ে অংশ নিয়েছেন। আগামিকাল সকাল ৯টা থেকে দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি শুরু হবে।
উল্লেখ্য, তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের আওতায় গাইবান্ধাসহ উত্তরের পাঁচ জেলার ১১টি পয়েন্টে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এতে বিএনপির শীর্ষ নেতারা অংশগ্রহণ করছেন এবং তিস্তা নদীর করুণ অবস্থা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন