
আওয়ামী সরকারের আমলে নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা গায়েবি মামলা পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করাবেন বলে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কথা বলছেন বলেও নেতাকর্মীদের আস্বস্ত করেছেন তিনি। শনিবার বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি নেতাকর্মীদের এ আশ্বাস দেন। রাজশাহী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে দিনব্যাপী এই কর্মশালার আয়োজন করে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটি। এতে রাজশাহী বিভাগের আট জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বিকালে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের জন্য নিজের ৩১ দফার বিষয়ে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কবিরের এক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচারের সময় আমাদের প্রায় ৬০ লক্ষ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে। এটি গায়েবি মামলা নামে সারাদেশে পরিচিত। অবশ্যই আমরা এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে কথা বলছি। এটি একটি আইনগত প্রক্রিয়া, চলমান প্রক্রিয়া এটি। একবারে হয়তো সম্ভব হবে না। পর্যায়ক্রমে নিশ্চয় আমরা গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করাব বা করাতে সক্ষম হবো।’
বগুড়ার অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানান, বর্তমানে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরে আনছে, কিন্তু আদালতে সঙ্গে সঙ্গে জামিন হচ্ছে। অথচ আগে বিএনপির নেতাকর্মীর জামিন হয়নি এত দ্রুত। এই বিচারকদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ওদের পার্থক্যটা এখানেই। আমরা যে বৈষম্যের শিকার হয়েছি, সেটিকে আমরা ভাঙতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘বৈষম্যের শিকার যাতে মানুষ না হয়, সেই প্র্যাকটিসটা আমরা গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন। বিগত স্বৈরাচার সরকার শুধু বিচার ব্যবস্থা নয়, প্রতিটি ব্যবস্থাকে ভেঙেচুরে নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা দেখেছি কোনটা ডামি নির্বাচন, কোনটা নিশিরাতের নির্বাচন, কোনটা দেখেছি ভোট ডাকাতির নির্বাচন। কোনবারই প্রকৃত জনপ্রতিনিধি ছিল না। তাই তারা যা ইচ্ছা তা-ই করেছে। আমরা আগামী দিনে চাইছি প্রকৃত একজন জনপ্রতিনিধি। আগামী দিনে যারা যোগ্য, সেই যোগ্য মানুষটিকে যোগ্য জায়গায় স্থান যদি আমরা দিতে পারি, তাহলেই এই দেশটাকে আমরা পরিবর্তন করতে পারব।’
রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে সকল তথ্য নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে কি না, এমন আরেক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘এখানে একটি বিষয় আছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কিছু বিষয় থাকে। এই বিষয়, যেগুলোকে স্বাভাবিক নিরাপত্তার নজরে দেখতে হবে। সব ডিসক্লোজ করা সব সময় বোধ হয় করা যায় না, সম্ভব না। এর বাইরে যেগুলো থাকবে সেগুলো অবশ্যই স্বচ্ছ থাকবে। যে কেউ দেখতে পারবে। এই সিস্টেমটা আমাদের গড়ে তুলতে হবে।’
ফারাক্কা বাঁধ থেকে পদ্মার পানির নায্য হিস্যা আদায়ের ব্যাপারে দলের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করেন আরেক নেতা। এ সময় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘ফারাক্কা বাঁধের বিষয়ে আমাদের একটি ধারণা আছে। এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। বিএনপির বাইরে অন্য সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছে, তারা যথাযথভাবে এটা দেখেনি। পতিত স্বৈরাচার সরকার ইচ্ছা করেই করেনি প্রতিবেশী দেশকে খুশি করার জন্য। এটা আন্তর্জাতিক লবি, আমরা সময়মত অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাজ করব। প্রয়োজনে দেশের স্বার্থে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়েই কাজ করব আমাদের নায্য হিস্যা আদায়ের জন্য।’
দলের এক নেতার আরেক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান জানিয়েছেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে পাঁচ বছরে পাঁচ কোটি বৃক্ষরোপণের ইচ্ছে আছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানি বাড়ছে। গবেষণায় উঠে আসছে বাংলাদেশের অনেকাংশ, অর্ধেক বা তার কম অংশ ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এই দেশের মানুষকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। খালেদা জিয়া সরকারের সময় আমরা বৃক্ষমেলা করতাম। আমাদের যেভাবেই হোক, এই কর্মসূচি আবার শুরু করতে হবে। সবাইকে উৎসাহ দিতে হবে বৃক্ষরোপণের জন্য। গাছ প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্যক্তিগতভাবে আমার একটা পরিকল্পনা আছে। আগামী দিনে আমরা সুযোগ পেলে পাঁচ বছরে আমরা পাঁচ কোটি বৃক্ষ রোপণ করব।’
এর আগে সকালে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, চেয়ারপারসনের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মাহাদী আমিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু প্রমুখ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন।
কর্মশালায় আলোচনা করেন বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশিদা বেগম হীরা ও কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবিব। সভাপতিত্ব করেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত। বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব এবিএম মোশাররফ হোসেনের সঞ্চালনায় কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় নেতা ওবায়দুর রহমান চন্দন, আমিরুল ইসলাম আলীম, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, রেহেনা আক্তার বানু, নেওয়াজ হালিমা আরলী, শফিকুল হক মিলন প্রমুখ।