
নীলফামারীর সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরীর মনোয়ার হোসেনের (৫২) গোডাউন থেকে প্রায় ৯৯ মেট্রিকটন নিষিদ্ধ ঘোষিত ও অবৈধভাবে এসিআই কোম্পানির মজুদকৃত কীটনাশক ব্রিফার জি-৫ (কার্বোফুরান) উদ্ধার করে গোডাউনটি সিলগালা করেছে র্যাব-১৩, সিপিনি-২ ও উপজেলা প্রশাসন। যার আনুমানিক মূল্য এক কোটি ৬৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
মনোয়ার হোসেন উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের কুমারগাড়ী গ্রামের মৃত্যু মমতাজ উদ্দিনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সৈয়দপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এনএসআই, র্যাব-১৩, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের যৌথ অভিযানে নিষিদ্ধ ঘোষিত এসিআই কোম্পানির বালাইনাশক ব্রিফার জি-৫ জব্দ করে গোডাউনটি সিলগালা করেন। এসব অবৈধ কীটনাশক মজুদ করে গোপনে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বাজারজাত করছিল মেসার্স মনোয়ার ট্রেডার্স নামে এসিআই কোম্পানির স্থানীয় ডিলার মনোয়ার হোসেন।

র্যাব, জানায়, কার্বোফুরান নামের বালাইনাশকটি মানুষ ছাড়াও সকল প্রাণীর জন্যই মারাত্মক ক্ষতিকর। একারণে ২০১৬ সালে জাতিসংঘ এটি বিশ্বের ৮৭টি দেশে বালাইনাশকটি নিষিদ্ধ করেন। গত বছরের জানুয়ারিতে ৮৮তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
এ ছাড়াও রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন থেকে কার্বোফুরান ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই সরকারের বালাইনাশক বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির (পিটাক) সভায় কার্বোফুরান ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান চন্দ্র জানান, কার্বোফুরান ফসলের জন্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, কার্বোফুরান নামের বালাইনাশকটি মানুষ ছাড়াও সকল প্রাণী ও উপকারী পোকামাকড়ের জন্য হুমকি স্বরুপ।

আজ সকালে কৃষি কর্মকর্তা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, বিসিক শিল্প নগরীর একটি গোডাউনে নিষিদ্ধ কীটনাশক মজুদ করে অধিক দামে গোপনে জেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। গোডাউন মালিক মনোয়ার হোসেন বিষয়টি টের পেয়ে ওইদিন রাতের আঁধারে গোডাউন থেকে সব মালামাল সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছিল। এসময় পাচারকালে হাতেনাতে ৯৯মেট্রিকটন কার্বোফুরান জব্দ করে গুদামটি সিলগালা করা হয়।
অভিযানে অংশ নেন, র্যাব-১৩, সিপিসি-২, নীলফামারীর কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার মেহেদী হাসান, এএসপি আব্দুর রাজ্জাক খান, এনএসআই’র উপ পরিচালক মশিউর রহমান, বিএডিসি’র উপ পরিচালক শাহানা বেগম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম।

গ্রেফতারকৃত ডিলার মনোয়ার হোসেন বলেন, আমি কোম্পানির কাছ থেকে এই কীটনাশক নিয়ম মেনে ক্রয় করেছি। এতটুকু জানতাম এটি শুধু রপ্তানি করা যাবেনা। তবে বিক্রি করায় কোন বাধা নেই। তাই লাভের আশায় বালাইনাশক গুলো মজুদ করে রেখেছি।
সৈয়দপুর থানার ওসি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শাহা আলম আজ বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে জানান, আসামি মনোয়ারকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর জব্দকৃত নিষিদ্ধ ঘোষিত কার্বোপুরান বালাইনাশক ওষুধ গোডাউনে সিলগালা করা হয়েছে।