সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জার্মানিতেও এঁটেল পোকার হানা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৩৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৯
  • ২৩৪ Time View

খোঁজ খবর ডেস্ক: ক্ষুদ্র হলেও এঁটেল পোকা মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে। জার্মানি তথা ইউরোপের কিছু অংশে এই পোকার কামড়ে মেনেনজাইটিস রোগ হচ্ছে। টিকাসহ একাধিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সমস্যার মোকাবিলার চেষ্টা চলছে। গোটা বিশ্বে টিক বা এঁটেল পোকা ছড়িয়ে রয়েছে। নানা প্রজাতির সব এঁটেল পোকাই রক্ত খায়। সেই তালিকায় হায়ালোমা নামের এক প্রজাতি যুক্ত হয়েছে। অন্যান্য প্রজাতির এঁটেল পোকার তুলনায় এটির আকার বেশ বড় ও আচরণও বাকিদের থেকে আলাদা। ইনসেক্ট সার্ভিসেসের ড. হান্স ডাউটেল এ বিষয়ে বলেন, ভ‚মধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চলে এই এঁটেল পোকার উৎস। ক্রাইমিয়ান কংগো হেমোরাজিক জ্বরের বাহক হিসেবে এরা পরিচিত। এই রোগ বেশ মারাত্মক। রোগীদের একাংশের মৃত্যু হয়। এই এঁটেল পোকার মাধ্যমে সেই ভাইরাস আমাদের কাছে চলে আসতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে। গত কয়েক বছরে হায়ালোমা ইউরোপের কিছু অংশে এসে পড়েছে। বলকান দেশগুলো থেকে স্পেন পর্যন্ত এই পোকা দেখা গেছে। এই প্রথম জার্মানিতেও এই এঁটেল পোকার অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ অদূর ভবিষ্যতে জার্মানিতেও এই পোকা বাসা বাঁধতে পারে।

সম্ভবত পরিজায়ী পাখির মাধ্যমে এই পোকা এসে পড়েছে। ড. ডাউটেল মনে করেন, কিছু হিসেবের মডেল অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের এখানে বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে উষ্ণতা বাড়লে এই প্রজাতির এঁটেল পোকা জার্মানির পূর্বাঞ্চলে, বিশেষ করে বার্লিনের দক্ষিণ পূর্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী জার্মানিতে পাওয়া হায়ালোমা পোকার মধ্যে বিপজ্জনক ক্রাইমিয়ান কংগো ভাইরাস ছিল না। স্বাস্থ্য ও পোকা সুরক্ষা কেন্দ্রের ড. মাসইয়ার মোনাজাইয়ান বলেন, হায়ালোমা প্রজাতির এঁটেল পোকা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যপ্রমাণের মধ্যে একবারও ক্রাইমিয়ান কংগো জ্বর দেখা যায়নি। তবে আমরা সতর্ক রয়েছি। নজরদারি চালিয়ে যেতে হবে।

উত্তর গোলার্ধে বরং এঁটেল পোকা অনেক বেশি লাইম রোগ বহন করে থাকে। সেটির প্যাথোজেন হলো বোরেলিয়া নামের প্যাঁচানো ব্যাকটেরিয়া। ইনস্টিটিউট অফ জিওইকোলজির ড. ডানিয়া রিশটার বলেন, বোরেলিয়া শরীরের মধ্যে ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। যেমন জয়েন্টে প্রদাহের মাধ্যমে বাত রোগ হতে পারে। হৃদযন্ত্রের পেশিতে প্রদাহ বা মায়োকারডাইটিস হতে পারে। এমনকি মস্তিষ্কেও প্রদাহ সৃষ্টি করে নিউরো-লাইম রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

ঝোপঝাড় ও ঘাসের কাছ দিয়ে হাঁটার সময় এঁটেল পোকা মানুষের শরীরে হামলা করে। খেয়াল না করলে এই পোকা ত্বকের উপরের স্তরে ফাটল সৃষ্টি করে। বোরেলিয়া তখন ১২ ঘণ্টা পরেই শরীরে প্রবেশ করতে পারে। ড. মোনাজাইয়ান বলেন, তখন এমনটাও হতে পারে, যে বোরেলিয়া প্রথমে ত্বকের উপর জুড়ে বসে। এটাই প্রথম পর্যায়। তখন ত্বক লাল হয়ে যায়, যাকে এরিথাইমা মাইগ্রান্স বলা হয়। সেই অবস্থা দেখে অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে চিকিৎসা হলে তবেই নিরাপদ থাকা সম্ভব।

আরো বিরল হলেও টিক-বর্ন এনসেফ্যালাইটিস রোগের চিকিৎসা বড়ই কঠিন। এর ফলে মেনেনজাইটিস হতে পারে। জার্মানির কিছু অংশে এফএসএমই ভাইরাস রয়েছে। বছরে ৩০০ থেকে ৫০০ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন। মেনেনজাইটিসের আশঙ্কা তখন বেড়ে যায়, অনেকের মৃত্যুও হয়। একমাত্র টিকার মাধ্যমে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। ড. মাসইয়ার মোনাজাইয়ানের পরামর্শ হলো, প্রত্যেকের নিজের ঝুঁকির মাত্রা খতিয়ে দেখা জরুরি। আমার ঘনঘন এঁটেল পোকার সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা আছে কি? শুধু নিজের পরিবেশে না থেকে কারো যদি ঘনঘন পোল্যান্ড বা ইউরোপের অন্যান্য দেশে যাবার সম্ভাবনা থাকে, সে ক্ষেত্রে টিকা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

এঁটেল পোকাবাহিত রোগের কবল থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এই পোকার কামড় পুরোপুরি এড়িয়ে চলা। এ ক্ষেত্রে শরীর ঢাকা লম্বা পোশাক এবং এঁটেল পোকা দূরে রাখার স্প্রে কার্যকর হতে পারে। তা সত্তে¡ও কামড় খেলে সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে পোকাটিকে দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

MD ZANNATUL FERDOUSH

NEWS PURPOSE
Popular Post

গাইবান্ধায় বিরোধ নিষ্পত্তি করতে গিয়ে ইউপি সদস্য খুন

জার্মানিতেও এঁটেল পোকার হানা

Update Time : ০৬:৩৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

খোঁজ খবর ডেস্ক: ক্ষুদ্র হলেও এঁটেল পোকা মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে। জার্মানি তথা ইউরোপের কিছু অংশে এই পোকার কামড়ে মেনেনজাইটিস রোগ হচ্ছে। টিকাসহ একাধিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সমস্যার মোকাবিলার চেষ্টা চলছে। গোটা বিশ্বে টিক বা এঁটেল পোকা ছড়িয়ে রয়েছে। নানা প্রজাতির সব এঁটেল পোকাই রক্ত খায়। সেই তালিকায় হায়ালোমা নামের এক প্রজাতি যুক্ত হয়েছে। অন্যান্য প্রজাতির এঁটেল পোকার তুলনায় এটির আকার বেশ বড় ও আচরণও বাকিদের থেকে আলাদা। ইনসেক্ট সার্ভিসেসের ড. হান্স ডাউটেল এ বিষয়ে বলেন, ভ‚মধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চলে এই এঁটেল পোকার উৎস। ক্রাইমিয়ান কংগো হেমোরাজিক জ্বরের বাহক হিসেবে এরা পরিচিত। এই রোগ বেশ মারাত্মক। রোগীদের একাংশের মৃত্যু হয়। এই এঁটেল পোকার মাধ্যমে সেই ভাইরাস আমাদের কাছে চলে আসতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে। গত কয়েক বছরে হায়ালোমা ইউরোপের কিছু অংশে এসে পড়েছে। বলকান দেশগুলো থেকে স্পেন পর্যন্ত এই পোকা দেখা গেছে। এই প্রথম জার্মানিতেও এই এঁটেল পোকার অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ অদূর ভবিষ্যতে জার্মানিতেও এই পোকা বাসা বাঁধতে পারে।

সম্ভবত পরিজায়ী পাখির মাধ্যমে এই পোকা এসে পড়েছে। ড. ডাউটেল মনে করেন, কিছু হিসেবের মডেল অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের এখানে বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে উষ্ণতা বাড়লে এই প্রজাতির এঁটেল পোকা জার্মানির পূর্বাঞ্চলে, বিশেষ করে বার্লিনের দক্ষিণ পূর্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী জার্মানিতে পাওয়া হায়ালোমা পোকার মধ্যে বিপজ্জনক ক্রাইমিয়ান কংগো ভাইরাস ছিল না। স্বাস্থ্য ও পোকা সুরক্ষা কেন্দ্রের ড. মাসইয়ার মোনাজাইয়ান বলেন, হায়ালোমা প্রজাতির এঁটেল পোকা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যপ্রমাণের মধ্যে একবারও ক্রাইমিয়ান কংগো জ্বর দেখা যায়নি। তবে আমরা সতর্ক রয়েছি। নজরদারি চালিয়ে যেতে হবে।

উত্তর গোলার্ধে বরং এঁটেল পোকা অনেক বেশি লাইম রোগ বহন করে থাকে। সেটির প্যাথোজেন হলো বোরেলিয়া নামের প্যাঁচানো ব্যাকটেরিয়া। ইনস্টিটিউট অফ জিওইকোলজির ড. ডানিয়া রিশটার বলেন, বোরেলিয়া শরীরের মধ্যে ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। যেমন জয়েন্টে প্রদাহের মাধ্যমে বাত রোগ হতে পারে। হৃদযন্ত্রের পেশিতে প্রদাহ বা মায়োকারডাইটিস হতে পারে। এমনকি মস্তিষ্কেও প্রদাহ সৃষ্টি করে নিউরো-লাইম রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

ঝোপঝাড় ও ঘাসের কাছ দিয়ে হাঁটার সময় এঁটেল পোকা মানুষের শরীরে হামলা করে। খেয়াল না করলে এই পোকা ত্বকের উপরের স্তরে ফাটল সৃষ্টি করে। বোরেলিয়া তখন ১২ ঘণ্টা পরেই শরীরে প্রবেশ করতে পারে। ড. মোনাজাইয়ান বলেন, তখন এমনটাও হতে পারে, যে বোরেলিয়া প্রথমে ত্বকের উপর জুড়ে বসে। এটাই প্রথম পর্যায়। তখন ত্বক লাল হয়ে যায়, যাকে এরিথাইমা মাইগ্রান্স বলা হয়। সেই অবস্থা দেখে অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে চিকিৎসা হলে তবেই নিরাপদ থাকা সম্ভব।

আরো বিরল হলেও টিক-বর্ন এনসেফ্যালাইটিস রোগের চিকিৎসা বড়ই কঠিন। এর ফলে মেনেনজাইটিস হতে পারে। জার্মানির কিছু অংশে এফএসএমই ভাইরাস রয়েছে। বছরে ৩০০ থেকে ৫০০ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন। মেনেনজাইটিসের আশঙ্কা তখন বেড়ে যায়, অনেকের মৃত্যুও হয়। একমাত্র টিকার মাধ্যমে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। ড. মাসইয়ার মোনাজাইয়ানের পরামর্শ হলো, প্রত্যেকের নিজের ঝুঁকির মাত্রা খতিয়ে দেখা জরুরি। আমার ঘনঘন এঁটেল পোকার সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা আছে কি? শুধু নিজের পরিবেশে না থেকে কারো যদি ঘনঘন পোল্যান্ড বা ইউরোপের অন্যান্য দেশে যাবার সম্ভাবনা থাকে, সে ক্ষেত্রে টিকা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

এঁটেল পোকাবাহিত রোগের কবল থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এই পোকার কামড় পুরোপুরি এড়িয়ে চলা। এ ক্ষেত্রে শরীর ঢাকা লম্বা পোশাক এবং এঁটেল পোকা দূরে রাখার স্প্রে কার্যকর হতে পারে। তা সত্তে¡ও কামড় খেলে সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে পোকাটিকে দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে।