
সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক তার কর্মচারি আতিকুর রহমানকে অপহরণ,নির্যাতন ও অস্ত্রের মুখে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার বিষয়ে ব্যাখা দিয়েছেন।তিনি আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইফতারের পর গাইবান্ধা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগকারি তাঁর কর্মচারি আতিকুর রহমানের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা তুলে ধরেন।
সম্মেলনে বিদিশা বলেন, আতিকুর রহমান আমার পিএস-এপিএস এরকম কিছুই ছিল না। সে আমার গাড়িচালকের ভাগ্নের পরিচয়ে আমার ঢাকার রেষ্টুরেন্টে কাজ নেয়। সেখানে থালাবাটি পরিস্কার করতো। মুলত সে আমার রেষ্টুরেন্টের কর্মচারি ছিল।এক পর্যায়ে তাকে রেষ্টুরেন্টের ম্যানেজারের দায়িত্ব দেই। পরে তাকে ড্রাইভিং শিখিয়ে গাড়ি চালানোরও দায়িত্ব দেই। সে দীর্ঘদিন আমার গাড়ি চালিয়েছে।
সম্মেলনে তিনি বলেন, একসময় আতিকুর আমাকে প্রস্তাব দেয়, গাইবান্ধা এলাকায় একটি ইটভাটা নির্মাণ করার জন্য। তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে আমি তাকে ৬ কোটি টাকা দেই। এ টাকার মধ্যে আমার এফডিআর, ঋণ ও অন্যোর কাছে ধার নেওয়া টাকা রয়েছে। এ টাকায় আমার মালিকানায় ইটভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হয়। এটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে আরেকটি বড় ভুল। ওকে আমি ওমরা হজ্ব করতে নিয়ে যাই। সে কাবা শরীফ ছুয়ে আমাকে কথা দেয়, ম্যাডাম আপনার সাথে জীবনে বেইমানি করবো না্। আপনার টাকা তছরুপ করবো না। আতিকুরের সাথে আমার লিখিত চুক্তি ছিল প্রতিমাসে আমাকে লভাংশের টাকা দিবে। এরপর ইটভাটা চালু হলে আতিকুর আমাকে প্রথম একবছর লভাংশের কিছু টাকা দিয়েছে। এ পযন্ত সে আমাকে লভাংশের ৩ কোটি ১৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা দেয়। হিসেব করে দেখা যায়, আমি তার কাছে আরও আসল ও লভাংশ মিলে ১০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা পাওনা আছি।
এরপর সে আস্তে আস্তে আমার সাথে দুরত্ব তৈরি করে। মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তার পরিবারও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি। সে তালবাহনা করতে থাকে। তখন আমি দু:চিন্তায় পড়ি। তখন আমি বাধ্য হয়ে গাইবান্ধায় আসি, আমি ভাটায় যাই। সেখানে তাকে ডেকে নিই বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য। তখন আতিকুর আমাকে বলে ঢাকায় চুক্তিপত্র হয়েছে, ভাটায় আলাপ না করে ঢাকায় আপনার বাসায় যাই। তাই সে আমার সাথে ঢাকায় যায়। পরে টাকা লেনদেনের বিষয়টি নি:স্পত্তির জন্য সে তার ভাই বাবাকে ঢাকায় ডেকে নেয়।
অথচ আতিকুর রহমান তাকে অপহরণ, ১০দিন ঢাকার বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন ও অস্ত্রের মুখে স্ট্যাম্পে সই নেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ তুলে নাটক সাজিয়ে আদালতে অভিযোগ দায়ের ও সংবাদ সম্মেলন করে। মুলত টাকা না দেওয়ার জন্য সে মিথ্যা নাটক সাজাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ অপহরণ, ১০দিন ঢাকার বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন ও অস্ত্রের মুখে স্ট্যাম্পে সই নেওয়ার অভিযোগে বিদিশা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গাইবান্ধা আমলী আদালতে (সদর)মামলা দায়ের হয়েছে। বিদিশার কর্মচারি আতিকুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় বিদিশা সিদ্দিকসহ চারজনকে আসামি করা হয়।মামলাটি আদালত তদন্তের জন্য গাইবান্ধা ডিবি(গোয়েন্দা শাখা)পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
এছাড়া গত মঙ্গলবার বিকেলে গাইবান্ধা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে আতিকুর রহমান তাকে অপহরণ, ১০দিন ঢাকার বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন ও অস্ত্রের মুখে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ করেন। আতিকুরের বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার মালিবাড়ি ইউনিয়নের কিশামত মালিবাড়ি ধর্মপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে।