শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রামে মহিষের গাড়ীতে বিয়ে

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:২৬:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২
  • ৫৬১ Time View

কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার উমর ফারুক (২৯) ছোট বেলায় বাপ-দাদার কাছে গল্প শুনেছেন তারা মহিষের গাড়ীতে করে বিয়ে করেছেন । তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে তিনি মহিষের গাড়িতে চড়ে বিয়ে করবেন।  বাপ দাদার সেই ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে মহিষের গাড়ি ভারা নিয়ে বর সেজে বিয়ে করতে যান। জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের চন্দ্রখানা মুসুল্লি পাড়া গ্রামের কৃষক ফজলুল হকের পুত্র সে।

বহুল আলোচিত এ বিয়ের ঘটক রাজু সরকার জানান, উভয় পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের দেবদেবীর হাট এলাকার বেলাল হোসেনের মেয়ে বিলকিস আক্তার (২৩) এর সাথে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের চন্দ্রখানা মুসুল্লি পাড়া গ্রামের ফজলুল হকের পুত্র উমর ফারুকের বিয়ে ঠিক হয়। গত শুক্রবার রাতে বর বেসে ওমর ফারুক মহিষের গাড়িতে চড়ে মেয়ের বাড়ীতে আসে। ৯ লাখ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করে বিয়ে হয় তাদের। এ সময় বর যাত্রী নিয়ে বিশেষভাবে সাজানো ২টি মহিষের গাড়ি মেয়ের বাড়িতে আসেন।

এছাড়াও বরের অন্যান্য স্বজনরা ৭টি মাইক্রোবাস ও বেশকিছু মোটরসাইকেল যোগে বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হন । ঘটক এমন ব্যতিক্রমী বিয়ে দিতে পেরে নিজে অবিভূত। তিনি বলেন,এখন আর কেউ গরু বা মহিষের গাড়ীতে উঠে বিয়ে করতে যায় না। গ্রাম বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এক সময় এমন ছিল, কিন্তু কালের বিবর্তনে সব হারিয়ে গেছে। এখর আর এমন দৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না।
ফুলবাড়ী মহিলা ডিগ্রী কলেজ এর প্রভাষক জয়নাল আবেদীন ও স্থানীয় সামিউল ইসলাম বেনু মাস্টার জানালেন, ছেলের ইচ্ছায় মহিষের গাড়ীতে চরে বিয়ে করতে যান। তার এ দৃশ্য দেখে গ্রামের নারী পুরুষরা ভীড় করে রাস্তা দু’পাশে।

ফুল দিয়ে সাজানো মহিষের গাড়ীতে বরকে পেয়ে অনেকেই সেলফি তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বরসহ মহিষের গাড়ীর ছবি পোষ্ট করেন। সব মিলে মহিষের গাড়ীতে উঠে বিয়ে করতে যাওয়ার সেই হারানো দিনের স্মৃতি অনেকের দাগ কাটে। বর বেসে থাকা উমর ফারুক জানান, আমার দাদা বিয়ে করেছেন হাতির পিঠে উঠে। আর বাবা বিয়ে করেছেন মহিষের গাড়ীতে চরে। বংশের পুরাতন ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমি মহিষের গাড়ীতে চরে বিয়ে করতে এসেছি। এ স্বপ্ন অনেক আগ থেকে ছিল। বর এর নানা শরিয়তুল্যাহ ও বর এর বোন ফাতেমা জানালেন, তারা এ বিয়েতে ভীষণ খুশি।

কনের বাবা বেলার হোসেন জানান, “আমার জামাই মহিষের গাড়ি নিয়ে এসে আমার মেয়েকে বিয়ে করেছে, এটা আমাদের এলাকায় স্মৃতি হয়ে থাকবে। আমার মেয়ে লালমনিহাট সরকারী কলেজে উদ্ভিদ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Md Zannatul Ferdoush Jewel

Online News Portal
Popular Post

গাইবান্ধায় বিরোধ নিষ্পত্তি করতে গিয়ে ইউপি সদস্য খুন

কুড়িগ্রামে মহিষের গাড়ীতে বিয়ে

Update Time : ০৯:২৬:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২

কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার উমর ফারুক (২৯) ছোট বেলায় বাপ-দাদার কাছে গল্প শুনেছেন তারা মহিষের গাড়ীতে করে বিয়ে করেছেন । তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে তিনি মহিষের গাড়িতে চড়ে বিয়ে করবেন।  বাপ দাদার সেই ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে মহিষের গাড়ি ভারা নিয়ে বর সেজে বিয়ে করতে যান। জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের চন্দ্রখানা মুসুল্লি পাড়া গ্রামের কৃষক ফজলুল হকের পুত্র সে।

বহুল আলোচিত এ বিয়ের ঘটক রাজু সরকার জানান, উভয় পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের দেবদেবীর হাট এলাকার বেলাল হোসেনের মেয়ে বিলকিস আক্তার (২৩) এর সাথে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের চন্দ্রখানা মুসুল্লি পাড়া গ্রামের ফজলুল হকের পুত্র উমর ফারুকের বিয়ে ঠিক হয়। গত শুক্রবার রাতে বর বেসে ওমর ফারুক মহিষের গাড়িতে চড়ে মেয়ের বাড়ীতে আসে। ৯ লাখ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করে বিয়ে হয় তাদের। এ সময় বর যাত্রী নিয়ে বিশেষভাবে সাজানো ২টি মহিষের গাড়ি মেয়ের বাড়িতে আসেন।

এছাড়াও বরের অন্যান্য স্বজনরা ৭টি মাইক্রোবাস ও বেশকিছু মোটরসাইকেল যোগে বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হন । ঘটক এমন ব্যতিক্রমী বিয়ে দিতে পেরে নিজে অবিভূত। তিনি বলেন,এখন আর কেউ গরু বা মহিষের গাড়ীতে উঠে বিয়ে করতে যায় না। গ্রাম বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এক সময় এমন ছিল, কিন্তু কালের বিবর্তনে সব হারিয়ে গেছে। এখর আর এমন দৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না।
ফুলবাড়ী মহিলা ডিগ্রী কলেজ এর প্রভাষক জয়নাল আবেদীন ও স্থানীয় সামিউল ইসলাম বেনু মাস্টার জানালেন, ছেলের ইচ্ছায় মহিষের গাড়ীতে চরে বিয়ে করতে যান। তার এ দৃশ্য দেখে গ্রামের নারী পুরুষরা ভীড় করে রাস্তা দু’পাশে।

ফুল দিয়ে সাজানো মহিষের গাড়ীতে বরকে পেয়ে অনেকেই সেলফি তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বরসহ মহিষের গাড়ীর ছবি পোষ্ট করেন। সব মিলে মহিষের গাড়ীতে উঠে বিয়ে করতে যাওয়ার সেই হারানো দিনের স্মৃতি অনেকের দাগ কাটে। বর বেসে থাকা উমর ফারুক জানান, আমার দাদা বিয়ে করেছেন হাতির পিঠে উঠে। আর বাবা বিয়ে করেছেন মহিষের গাড়ীতে চরে। বংশের পুরাতন ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমি মহিষের গাড়ীতে চরে বিয়ে করতে এসেছি। এ স্বপ্ন অনেক আগ থেকে ছিল। বর এর নানা শরিয়তুল্যাহ ও বর এর বোন ফাতেমা জানালেন, তারা এ বিয়েতে ভীষণ খুশি।

কনের বাবা বেলার হোসেন জানান, “আমার জামাই মহিষের গাড়ি নিয়ে এসে আমার মেয়েকে বিয়ে করেছে, এটা আমাদের এলাকায় স্মৃতি হয়ে থাকবে। আমার মেয়ে লালমনিহাট সরকারী কলেজে উদ্ভিদ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।