সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে সংবিধান দিবস পালিত

সাারাদেশের ন্যায় ৫০ বছর পর রাজশাহীসহ ৯টি উপজেলায় যথাযথভাবে সংবিধান দিবস পালিত হয়েছে।  ১৯৭২ সালের পর দ্বিতীয় বার সারাদেশে সংবিধান দিবস পালিত হচ্ছে। বহু জলপনা কল্পনার অবশানে দিনটি পূনরাই উম্মোচিত হলো। অনুষ্ঠানে বক্তরা সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেন। সময় সংবিধান বিষয়ে নতুন প্রজন্মকে অবহিত করণ পূর্বক আলোচনা এবং বাস্তবতা রূপ দেখাতে হবে। সঠিক ধারনা না থাকলে সংবিধানের মূল অর্থ হয়তো মূছে যেতে পারে।

১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে তৎকালীন আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন খসড়া সংবিধান বিল আকারে উত্থাপন করেন। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ (বিজয় দিবস) থেকে কার্যকর হয়। সংবিধান না থাকলে একটি রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বড় ধরণের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। সংবিধান হচ্ছে আইন-বিধি-বিধান রচনার ক্ষেত্রে একটি প্রধান দলিল। এটি একটি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য দলিল, যা মূলত অপরিবর্তনীয় এবং অলঙ্ঘনীয় হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। তবে কতিপয় শর্তসাপেক্ষে প্রয়োজনে সংবিধানে সংযোজন-বিয়োজন-পরিবর্তন করা যেতে পারে। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পনের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্ম প্রকাশ করে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী দেশে প্রত্যাবর্তন করে। পরের দিন ১১ জানুয়ারি, তিনি মুজিব নগর সরকারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। একই দিনে তিনি বাংলাদেশ অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করে।

বিশ্বে প্রথম সংবিধান কবে সৃষ্টি জন্ম হয়েছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট ইতিহাস নেই। তবে ধারণা করা হয় গুহা যুগ এবং প্রস্তর যুগ পেরিয়ে মানুষ যখন নিরাপত্তার স্বার্থে যৌথভাবে একত্রে বসবাস শুরু করে তখন থেকেই মূলত সংবিধানের জন্ম। প্রাচীন সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যে কিছু অত্যাশ্যকীয় ও পালনীয় বিধি-বিধান রচিত হয়। কালক্রমে মানুষ নগর, রাষ্ট্র এবং আধুনিক রাষ্ট্রে গঠন করে। যার জন্য রচিত হতে থাকে বিভিন্ন বিধি-বিধান, আইন-কানুন।

সংবিধান সম্পর্কে রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অ্যারিস্টটল বলেছেন, ‘‘সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের এমন এক জীবন পদ্ধতি, যা রাষ্ট্র স্বয়ং নিজের জন্য বেছে নেয়।’’ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্ট্রংয়ের এর মতে, ‘‘সংবিধান হচ্ছে সেই সকল নিয়ম কানুনের সমষ্টি, যার দ্বারা সরকারের ক্ষমতা, শাসিতের অধিকার এবং শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক নির্ধারিত হয়।’’ সংবিধান রাষ্ট্রের জন্য একটি দর্পন স্বরূপ। একটা দেশ কিভাবে চলবে, নাগরিকদের অধিকার কী থাকবে, সরকারের সাথে জনগনের, সম্পর্ক, শাসন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, এবং আইন ব্যবস্থা, বৈদেশিক নীতি ইত্যাদির দলিল হচ্ছে এই সংবিধান। সংবিধান রাষ্ট্রের প্রয়োজনে পরিবর্তন, সংযোজন, এবং বিয়োজন হয়। সংবিধান হচ্ছে একটা মূল্যবান দলিল, যাতে বর্ণিত আইন-কানুন, নীতি-নির্দেশনার আলোকে রচিত হয় রাষ্ট্রের অন্যান্য আইন-কানুন, বিধি-বিধান, যা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অপরিহার্য।

অস্থায়ী সংবিধান আদেশে বলা হয়েছে, সংবিধান রচনার জন্য বাংলাদেশে একটি গণপরিষদ গঠন করা হবে। রাষ্ট্রপতি সরকার ব্যবস্থা থেকে পরিবর্তীত হয়ে প্রধানমন্ত্রি শাসিত সরকার গঠন করা হবে। রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তি হবেন রাস্ট্রপতি এবং সরকারের প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রি। গণপরিষদের থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে একজন প্রধানমন্ত্রি হিসেবে নিয়োগ পাবেন এবং মন্ত্রিসভার সদস্যগণ প্রধানমন্ত্রির পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। রাষ্ট্রপতির সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রির পরামর্শ গ্রহণ করবে। গণপরিষদ কর্তৃক সংবিধান প্রণয়ন হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ একজনকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত করবেন। প্রধান বিচারপতি ও অন্যন্য বিচারপতি নিয়ে বাংলাদেশে একটি হাইকোর্ট ব্রাঞ্চ থাকবে। এই হাইকোটের প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির শপত পাঠ করাবেন। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রি, অন্যন্য মন্ত্রি, প্রতিমন্ত্রি, উপমন্ত্রিদের শপথ পাঠ করাবেন।

১৯৭২ সালের ২৩ শে মার্চ রাষ্ট্রপতি গণ পরিষদ আদেশ জারি করেন। ১৯৭০ এর ডিসেম্বর এবং ১৯৭১ সালের জানুয়ারীতে পাকিস্তানের প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণ নতুন এই গণপরিষদের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদের মোট ৪৬৯ জন সদস্য নিয়ে গঠন করার কথা বলা হয় কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে নিহত, স্বাভাবিক মৃত্যু, দেশত্যাগ ইত্যাদির কারণে ৬৬ জন সদস্য বাদ পড়ে যায়। সংবিধান প্রনয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ১১ই এপ্রিল ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে মোট সদস্য ছিল ৩৪ জন। ১৯৭২ সালের ১৭ই এপ্রিল থেকে ৩রা অক্টোবর পর্যন্ত সংবিধান কমিটি বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করে। বৈঠক শেষে এবং সাধারণ জনগনের মতামত নিয়ে ৯৮টি সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। এছাড়া ভারত ও ইংল্যান্ডের সংবিধানের সাথে সমন্বয় রেখে সংবিধান কমিটি একটি খসড়া তৈরি কর। ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে ড. কামাল হোসেন ‘‘খসড়া সংবিধান‘‘ বিল আকারে উত্থাপন করেন।

১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর, গণপরিষদে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়। এর জন্য ৪ নভেম্বরকে বাংলাদেশের সংবিধান দিবস বলা হয়। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের বিজয় দিবস থেকে এটি কার্যকর হয়। গণপরিষদে সংবিধানের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘‘এই সংবিধান শহীদের রক্তে লিখিত, এই সংবিধান সমগ্র জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে।’’ হাতে লেখা বাংলাদেশের সংবিধানটি ছিল ৯৩ পাতার। এবং এর মূল লেখক ছিলেন শিল্পী আব্দর রউফ। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংর্বিধানের অঙ্গসজ্জা করেন। সংবিধান লেখার পর এর বাংলা ভাষারূপ পর্যালোচনার জন্য ড আনিসুজ্জামানকে আহবায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশের হাতে লেখা এই সংবিধান সর্ব প্রথম ছাপাতে বা প্রিন্ট করতে ১৪ হাজার টাকা ব্যায় হয়েছিলো। সবশেষে ৪০৩ জন নিয়ে গণপরিষদ গঠন করা হয়। গণ পরিষদের প্রথম স্পীকার ছিলেন শাহ আব্দুল হামিদ এবং ডেপুটি স্পীকার হিসেবে ছিলেন মোহাম্মদ উল্লাহ। এছাড়া গণ পরিষদের প্রথম সভাপতি ছিলেন মাওলানা আব্দুর রহমান তর্কবাগীশ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Md Zannatul Ferdoush Jewel

Online News Portal

এবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক পাচ্ছেন ২ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান

রাজশাহীতে সংবিধান দিবস পালিত

Update Time : ০৮:৫০:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ নভেম্বর ২০২২

সাারাদেশের ন্যায় ৫০ বছর পর রাজশাহীসহ ৯টি উপজেলায় যথাযথভাবে সংবিধান দিবস পালিত হয়েছে।  ১৯৭২ সালের পর দ্বিতীয় বার সারাদেশে সংবিধান দিবস পালিত হচ্ছে। বহু জলপনা কল্পনার অবশানে দিনটি পূনরাই উম্মোচিত হলো। অনুষ্ঠানে বক্তরা সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেন। সময় সংবিধান বিষয়ে নতুন প্রজন্মকে অবহিত করণ পূর্বক আলোচনা এবং বাস্তবতা রূপ দেখাতে হবে। সঠিক ধারনা না থাকলে সংবিধানের মূল অর্থ হয়তো মূছে যেতে পারে।

১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে তৎকালীন আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন খসড়া সংবিধান বিল আকারে উত্থাপন করেন। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ (বিজয় দিবস) থেকে কার্যকর হয়। সংবিধান না থাকলে একটি রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বড় ধরণের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। সংবিধান হচ্ছে আইন-বিধি-বিধান রচনার ক্ষেত্রে একটি প্রধান দলিল। এটি একটি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য দলিল, যা মূলত অপরিবর্তনীয় এবং অলঙ্ঘনীয় হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। তবে কতিপয় শর্তসাপেক্ষে প্রয়োজনে সংবিধানে সংযোজন-বিয়োজন-পরিবর্তন করা যেতে পারে। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পনের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্ম প্রকাশ করে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী দেশে প্রত্যাবর্তন করে। পরের দিন ১১ জানুয়ারি, তিনি মুজিব নগর সরকারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। একই দিনে তিনি বাংলাদেশ অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করে।

বিশ্বে প্রথম সংবিধান কবে সৃষ্টি জন্ম হয়েছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট ইতিহাস নেই। তবে ধারণা করা হয় গুহা যুগ এবং প্রস্তর যুগ পেরিয়ে মানুষ যখন নিরাপত্তার স্বার্থে যৌথভাবে একত্রে বসবাস শুরু করে তখন থেকেই মূলত সংবিধানের জন্ম। প্রাচীন সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যে কিছু অত্যাশ্যকীয় ও পালনীয় বিধি-বিধান রচিত হয়। কালক্রমে মানুষ নগর, রাষ্ট্র এবং আধুনিক রাষ্ট্রে গঠন করে। যার জন্য রচিত হতে থাকে বিভিন্ন বিধি-বিধান, আইন-কানুন।

সংবিধান সম্পর্কে রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অ্যারিস্টটল বলেছেন, ‘‘সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের এমন এক জীবন পদ্ধতি, যা রাষ্ট্র স্বয়ং নিজের জন্য বেছে নেয়।’’ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্ট্রংয়ের এর মতে, ‘‘সংবিধান হচ্ছে সেই সকল নিয়ম কানুনের সমষ্টি, যার দ্বারা সরকারের ক্ষমতা, শাসিতের অধিকার এবং শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক নির্ধারিত হয়।’’ সংবিধান রাষ্ট্রের জন্য একটি দর্পন স্বরূপ। একটা দেশ কিভাবে চলবে, নাগরিকদের অধিকার কী থাকবে, সরকারের সাথে জনগনের, সম্পর্ক, শাসন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, এবং আইন ব্যবস্থা, বৈদেশিক নীতি ইত্যাদির দলিল হচ্ছে এই সংবিধান। সংবিধান রাষ্ট্রের প্রয়োজনে পরিবর্তন, সংযোজন, এবং বিয়োজন হয়। সংবিধান হচ্ছে একটা মূল্যবান দলিল, যাতে বর্ণিত আইন-কানুন, নীতি-নির্দেশনার আলোকে রচিত হয় রাষ্ট্রের অন্যান্য আইন-কানুন, বিধি-বিধান, যা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অপরিহার্য।

অস্থায়ী সংবিধান আদেশে বলা হয়েছে, সংবিধান রচনার জন্য বাংলাদেশে একটি গণপরিষদ গঠন করা হবে। রাষ্ট্রপতি সরকার ব্যবস্থা থেকে পরিবর্তীত হয়ে প্রধানমন্ত্রি শাসিত সরকার গঠন করা হবে। রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তি হবেন রাস্ট্রপতি এবং সরকারের প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রি। গণপরিষদের থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে একজন প্রধানমন্ত্রি হিসেবে নিয়োগ পাবেন এবং মন্ত্রিসভার সদস্যগণ প্রধানমন্ত্রির পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। রাষ্ট্রপতির সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রির পরামর্শ গ্রহণ করবে। গণপরিষদ কর্তৃক সংবিধান প্রণয়ন হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ একজনকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত করবেন। প্রধান বিচারপতি ও অন্যন্য বিচারপতি নিয়ে বাংলাদেশে একটি হাইকোর্ট ব্রাঞ্চ থাকবে। এই হাইকোটের প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির শপত পাঠ করাবেন। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রি, অন্যন্য মন্ত্রি, প্রতিমন্ত্রি, উপমন্ত্রিদের শপথ পাঠ করাবেন।

১৯৭২ সালের ২৩ শে মার্চ রাষ্ট্রপতি গণ পরিষদ আদেশ জারি করেন। ১৯৭০ এর ডিসেম্বর এবং ১৯৭১ সালের জানুয়ারীতে পাকিস্তানের প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণ নতুন এই গণপরিষদের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদের মোট ৪৬৯ জন সদস্য নিয়ে গঠন করার কথা বলা হয় কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে নিহত, স্বাভাবিক মৃত্যু, দেশত্যাগ ইত্যাদির কারণে ৬৬ জন সদস্য বাদ পড়ে যায়। সংবিধান প্রনয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ১১ই এপ্রিল ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে মোট সদস্য ছিল ৩৪ জন। ১৯৭২ সালের ১৭ই এপ্রিল থেকে ৩রা অক্টোবর পর্যন্ত সংবিধান কমিটি বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করে। বৈঠক শেষে এবং সাধারণ জনগনের মতামত নিয়ে ৯৮টি সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। এছাড়া ভারত ও ইংল্যান্ডের সংবিধানের সাথে সমন্বয় রেখে সংবিধান কমিটি একটি খসড়া তৈরি কর। ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে ড. কামাল হোসেন ‘‘খসড়া সংবিধান‘‘ বিল আকারে উত্থাপন করেন।

১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর, গণপরিষদে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়। এর জন্য ৪ নভেম্বরকে বাংলাদেশের সংবিধান দিবস বলা হয়। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের বিজয় দিবস থেকে এটি কার্যকর হয়। গণপরিষদে সংবিধানের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘‘এই সংবিধান শহীদের রক্তে লিখিত, এই সংবিধান সমগ্র জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে।’’ হাতে লেখা বাংলাদেশের সংবিধানটি ছিল ৯৩ পাতার। এবং এর মূল লেখক ছিলেন শিল্পী আব্দর রউফ। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংর্বিধানের অঙ্গসজ্জা করেন। সংবিধান লেখার পর এর বাংলা ভাষারূপ পর্যালোচনার জন্য ড আনিসুজ্জামানকে আহবায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশের হাতে লেখা এই সংবিধান সর্ব প্রথম ছাপাতে বা প্রিন্ট করতে ১৪ হাজার টাকা ব্যায় হয়েছিলো। সবশেষে ৪০৩ জন নিয়ে গণপরিষদ গঠন করা হয়। গণ পরিষদের প্রথম স্পীকার ছিলেন শাহ আব্দুল হামিদ এবং ডেপুটি স্পীকার হিসেবে ছিলেন মোহাম্মদ উল্লাহ। এছাড়া গণ পরিষদের প্রথম সভাপতি ছিলেন মাওলানা আব্দুর রহমান তর্কবাগীশ।