শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম অনেক বেশী ! ৮৬ ভাগ নারী এখনো মাসিকের সময় পুরনো কাপড় বা ন্যাকড়া ব্যবহার করেন

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:৪৬:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০১৯
  • ২১৪ Time View

জান্নাত আরা মমতাজ: মাসিকের সময় বা পিরিয়ডের মতো একটা স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক বিষয় নিয়ে লজ্জা আর সংকোচের শেষ নেই আমাদের সমাজে নারী স্বাস্থ্য, বিশেষ করে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পিরিয়ড বা মাসিকের সময় পরিচ্ছন্নতা বা নিরাপদ ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে নানা রকম অসুখবিসুখও হচ্ছে ২০১৪ সালের ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভেতে দেখা গেছে, বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৮৬ ভাগ নারী এখনো মাসিকের সময় পুরনো কাপড় বা ন্যাকড়া ব্যবহার করেন ক্ষেত্রে নারী পুরনো শাড়ি, ওড়না বা সুতি ওড়না কাপড় ব্যবহার করেন এর প্রধান কারণ পুরনো কাপড় সহজলভ্য এবং জন্য কোনো খরচ গুনতে হয় না

চিকিৎকদের মতে, পিরিয়ডের সময় অপরিষ্কার পুরনো কাপড় ব্যবহার করলে ¦, তলপেটে ব্যথা মূত্রনালিতে সংক্রমণ হতে পারে। ছাড়া জরায়ুতে ইনফেকশন হতে পারে। ইনফেকশন দীর্ঘদিন থাকলে পরবর্তী সময় সেটি জরায়ুর ক্যান্সারে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। জানা গেছে, বাংলাদেশের শহর অঞ্চলে মাত্র ৩৩ শতাংশ নারী প্রতি মাসের পিরিয়ডের সময় প্যাড ব্যবহার করেন। যার প্রধান কারণ অতিরিক্ত দাম এবং সচেতনতার অভাব। দরিদ্র হতদরিদ্র মানুষের পক্ষে এত টাকা দিয়ে প্রতি মাসে প্যাড কেনা সম্ভব? যাদের চাল কেনার টাকা নেই, তার কাছে প্যাড কেনার গল্প করা রীতিমতো হাস্যকর। ফলে নারীদের প্রতি মাসে দিন, একটা ভয়াবহ অস্বাস্থ্যকর অবস্থার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, স্যানিটারি ন্যাপকিন সাধারণত ছয় ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করলে তা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়।

ঋতুকাল একেকজনের একেক রকম (চার থেকে সাত দিন) বাজারে ১১০ টাকার যে প্যাডের প্যাকেট পাওয়া যায়, তাতে সাধারণত আটটি প্যাড থাকে। ধরে নিচ্ছি যে নারীর ৯৬ ঘণ্টা রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তার ছয় ঘণ্টা অন্তর প্যাড পরিবর্তন করলে সর্বমোট ১৬টি প্যাড লাগে। যার এই সময় সাত দিন তার লাগে ২৮টি। অর্থাৎ শুধু পিরিয়ড চলাকালেই পিরিয়ডের মূল্য হিসেবে একজন নারীকে পরিশোধ করতে হচ্ছে সর্বনিম্ন ২২০ থেকে ৩৮৫ টাকা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে থেকে ১০ টাকায় এক প্যাকেট স্যানিটারি প্যাড পাওয়া যায়। রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির ফলেই তা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে তার উল্টো চিত্র। এখানে স্যানিটারি ন্যাপকিনের মতো বিকল্পহীন মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন কিটের আমদানির ওপর ৪০ শতাংশ ভ্যাট ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন করারোপ করা হয়। রাষ্ট্র চাইলে এই বোঝা কমাতে পারে

দেখা গেছে, বিনামূল্যে স্যানিটারি প্যাডের সরবরাহ বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বৃদ্ধি করে, আবার দরিদ্র নারীদের কর্মস্পৃহা বাড়ায়। আফ্রিকার গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে মাধ্যমিকের পর থেকে নারী শিক্ষার হার কমতে থাকলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে প্যাড বিতরণ করে দেখা যায় যে উদ্যোগটি নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আশাব্যঞ্জক হারে বৃদ্ধি করছে। নেপালেও ব্যবস্থা চালু আছে প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র স্কুলগুলোতে।

বাংলাদেশেও উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সফলতা বয়ে আনবে। নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদানসহ অনেক উদ্যোগই নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে প্যাড বিতরণ করার মাধ্যমে নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে কাক্সিক্ষত মাইলফলক অর্জন সম্ভব। ছাড়া সরকারি স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলোতে দরিদ্র নারীদের জন্য বিনামূল্যে প্যাড সরবরাহ করা হলে তা নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সে ক্ষেত্রে স্বল্প আয়ের কর্মজীবী নারীরাও এই প্রজনন সেবার অংশীদার হতে পারবেন। দরিদ্র নারী এবং স্কুলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্যাড বিনামূল্যে বিতরণের উদ্যোগের বিষয়টি সরকারপ্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি ভেবে দেখতে পারেন

সৌজন্যে: জান্নাত আরা মমতাজ : কবি লেখক, ঢাকা

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

MD ZANNATUL FERDOUSH

NEWS PURPOSE
Popular Post

তেঁতুলিয়ায় ক্ল ুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন, বীরগঞ্জ থেকে আসামি আটক

দেশে স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম অনেক বেশী ! ৮৬ ভাগ নারী এখনো মাসিকের সময় পুরনো কাপড় বা ন্যাকড়া ব্যবহার করেন

Update Time : ০৩:৪৬:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০১৯

জান্নাত আরা মমতাজ: মাসিকের সময় বা পিরিয়ডের মতো একটা স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক বিষয় নিয়ে লজ্জা আর সংকোচের শেষ নেই আমাদের সমাজে নারী স্বাস্থ্য, বিশেষ করে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পিরিয়ড বা মাসিকের সময় পরিচ্ছন্নতা বা নিরাপদ ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে নানা রকম অসুখবিসুখও হচ্ছে ২০১৪ সালের ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভেতে দেখা গেছে, বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৮৬ ভাগ নারী এখনো মাসিকের সময় পুরনো কাপড় বা ন্যাকড়া ব্যবহার করেন ক্ষেত্রে নারী পুরনো শাড়ি, ওড়না বা সুতি ওড়না কাপড় ব্যবহার করেন এর প্রধান কারণ পুরনো কাপড় সহজলভ্য এবং জন্য কোনো খরচ গুনতে হয় না

চিকিৎকদের মতে, পিরিয়ডের সময় অপরিষ্কার পুরনো কাপড় ব্যবহার করলে ¦, তলপেটে ব্যথা মূত্রনালিতে সংক্রমণ হতে পারে। ছাড়া জরায়ুতে ইনফেকশন হতে পারে। ইনফেকশন দীর্ঘদিন থাকলে পরবর্তী সময় সেটি জরায়ুর ক্যান্সারে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। জানা গেছে, বাংলাদেশের শহর অঞ্চলে মাত্র ৩৩ শতাংশ নারী প্রতি মাসের পিরিয়ডের সময় প্যাড ব্যবহার করেন। যার প্রধান কারণ অতিরিক্ত দাম এবং সচেতনতার অভাব। দরিদ্র হতদরিদ্র মানুষের পক্ষে এত টাকা দিয়ে প্রতি মাসে প্যাড কেনা সম্ভব? যাদের চাল কেনার টাকা নেই, তার কাছে প্যাড কেনার গল্প করা রীতিমতো হাস্যকর। ফলে নারীদের প্রতি মাসে দিন, একটা ভয়াবহ অস্বাস্থ্যকর অবস্থার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, স্যানিটারি ন্যাপকিন সাধারণত ছয় ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করলে তা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়।

ঋতুকাল একেকজনের একেক রকম (চার থেকে সাত দিন) বাজারে ১১০ টাকার যে প্যাডের প্যাকেট পাওয়া যায়, তাতে সাধারণত আটটি প্যাড থাকে। ধরে নিচ্ছি যে নারীর ৯৬ ঘণ্টা রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তার ছয় ঘণ্টা অন্তর প্যাড পরিবর্তন করলে সর্বমোট ১৬টি প্যাড লাগে। যার এই সময় সাত দিন তার লাগে ২৮টি। অর্থাৎ শুধু পিরিয়ড চলাকালেই পিরিয়ডের মূল্য হিসেবে একজন নারীকে পরিশোধ করতে হচ্ছে সর্বনিম্ন ২২০ থেকে ৩৮৫ টাকা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে থেকে ১০ টাকায় এক প্যাকেট স্যানিটারি প্যাড পাওয়া যায়। রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির ফলেই তা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে তার উল্টো চিত্র। এখানে স্যানিটারি ন্যাপকিনের মতো বিকল্পহীন মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন কিটের আমদানির ওপর ৪০ শতাংশ ভ্যাট ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন করারোপ করা হয়। রাষ্ট্র চাইলে এই বোঝা কমাতে পারে

দেখা গেছে, বিনামূল্যে স্যানিটারি প্যাডের সরবরাহ বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বৃদ্ধি করে, আবার দরিদ্র নারীদের কর্মস্পৃহা বাড়ায়। আফ্রিকার গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে মাধ্যমিকের পর থেকে নারী শিক্ষার হার কমতে থাকলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে প্যাড বিতরণ করে দেখা যায় যে উদ্যোগটি নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আশাব্যঞ্জক হারে বৃদ্ধি করছে। নেপালেও ব্যবস্থা চালু আছে প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র স্কুলগুলোতে।

বাংলাদেশেও উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সফলতা বয়ে আনবে। নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদানসহ অনেক উদ্যোগই নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে প্যাড বিতরণ করার মাধ্যমে নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে কাক্সিক্ষত মাইলফলক অর্জন সম্ভব। ছাড়া সরকারি স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলোতে দরিদ্র নারীদের জন্য বিনামূল্যে প্যাড সরবরাহ করা হলে তা নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সে ক্ষেত্রে স্বল্প আয়ের কর্মজীবী নারীরাও এই প্রজনন সেবার অংশীদার হতে পারবেন। দরিদ্র নারী এবং স্কুলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্যাড বিনামূল্যে বিতরণের উদ্যোগের বিষয়টি সরকারপ্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি ভেবে দেখতে পারেন

সৌজন্যে: জান্নাত আরা মমতাজ : কবি লেখক, ঢাকা