
বরগুনা প্রতিনিধি : কেউ হারিয়েছে প্রিয় সন্তান, কেউ ভাই-বোন, কেউবা আবার হারিয়েছেন মা-বাবাকে। প্রিয়জনদের হারানোর বেদনায় বিষাদময় হয়ে উঠেছে বরগুনার বিভিন্ন গ্রাম। গ্রামে গ্রামে বইছে শোকের মাতম। সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী অভিযান ১০ লঞ্চ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বরগুনায় ৩০ জনের জানাজা শেষে ২৩ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে গনকবরে। নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। নিখোঁজদের খোঁজে দিশেহারা স্বজনেরা।
বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের আমতলী গ্রামের ষাটোর্ধ কনু হাওলাদার । হাতে একটি কাগজ নিয়ে দিক বেদিক হয়ে ছুটে চলেছেন বরগুনা সদর হাপাতালের সামনে। বার বার চিৎকার করে বলছেন আমার আদরের ধন আবদুল্লাহ কই। সদর হাসপাতাল থেকে অজ্ঞাত পরিচয় লাশ নিয়ে সার্কিট হাউজ মাঠে এলে সেখানেও কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বার বার কফিন বন্ধী লাশগুলোর মুখ খুলে খুলে দেখছিলেন তিনি। শত চেষ্টার পর প্রিয় জনের চেহারার সাথে প্রিয় স্বজনের চেহারার মিল খুজে পাননি তিনি। তাই হতাশ হয়েই ফিরতে হয়েছে তাকে। লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তার ছেলে মো. রাসেল, ছেলের স্ত্রী শারমিন, ছেলের শ্বাশুড়ি মোসা. জাহানারা ও নাতনি আবদুল্লাহকে এখন পর্যন্ত খুজে পাওয়া যায়নি। পরিবারের প্রিয়জনদের খোঁজে হাসপাতাল জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গায় ছুটে চলছেন তিনি। তবুও সন্ধান মেলেনি তার।
কনু হাওলাদার বলেন, আমার পোয়ায় ঢাকাইদ্দা লঞ্চে বরগুনা আইতে আছেলে। অর লগে অর বউ বাচ্চা ও হাউরি আছেলে। সবাই সবাইরে খুইজ্জা পায় কিন্তু মুই মোর আদরের ধনটারে খুইজ্জা পাই না। মুই এহন কই যামু মোর পোয়াডারে খোঁজতে। অরা কি বাইচ্চা আছে না মইরা গেছে হ্যাও কইতে পারি না। আল্লাহ একটু মোর পোয়াডারে মোর ধার আইন্না দাও। মুই একটু মোর পোয়ার মুকখানা দেখতে চাই।
বরগুনার তালতলী উপজেলার লামিয়া(৪) ও সামিয়া(৪) দুই বোন। ঢাকা থেকে মা ও নানীর সাথে বরগুনা আসতেছিলেন। লঞ্চে আগুন লেগে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন তারা। তার মামা হান্নান হাওলাদার আজ সকারে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে তাদের লাশ শনাক্ত করে নিয়ে গেছেন। আর নানী দুলু বেগমকে উদ্ধার করা হয়েছে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তিনি বরিশাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর এখনো সন্ধান মেলেনি লামিয়া ও সামিয়ার মা মিতু আক্তারের খোঁজ মেলেনি এখনো।
হান্নান হাওলাদার বলেন, দুই ভাগ্নির মরদেহ একই সাথে বহন করতে পারছি না তার উপরে আমার বুইনডারে এখনো খুজে পাই নাই। কোথায় যাবো কার কাছে যাবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
সুগন্ধা নদীতে লঞ্চ দুর্ঘটনার ঘটনায় বরগুনায় প্রিয়জন হারানোর বেদনায় বিষাদময় হয়ে উঠেছে বরগুনার আকাশ বাতাস। দুর্ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয়দের দাফন করার জন্য সকাল ১১টায় বরগুনার সাকির্ট হাউজ মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় ভীর করেছে বরগুনার হাজার হাজার মানুষ। জানাজা শেষে বরগুনা পৌর শহরের উপকন্ঠে পোটকাখালী গনকবরে দাফন করা হয়েছে ২৩ জনকে। এসময় নিহতদের মিলাদের জন্য বরগুনার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক অমল কৃষ্ণ তালুকদার ১ লাখ টাকার অনুদান প্রদান করেন।
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, নিহত যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তাদের সবাইকে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিদের গণকবরে দাফন করা হয়েছে। নিহতদের পরিবার প্রতি প্রাথমিকভাবে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে।