
স্টাফ রিপোর্টার: গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় কমপক্ষে ৬টি গ্রামে দেড় মাস ধরে অচেনা ভয়ঙ্কর প্রাণী আক্রমণ করছে। এতে এ পর্যন্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। প্রাণীটি কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় লোকজনের ওপর হামলা করলেও স্থানীয়রা কেউ তাকে ঠিকমতো দেখতে পাননি। এতে গ্রামবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে ভয় আর আতঙ্ক। উপজেলার তালুক কেওয়াবাড়ী, হরিনাথপুর, কিশামত কেওয়াবাড়ী, খামার বালুয়া, দুলালের ভিটা ও তালুকজামিরা গ্রামের মানুষের মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্রামবাসীদের কেউ এই অচেনা ভয়ঙ্কর প্রাণীকে ‘পাগলা শিয়াল’, কেউ ‘হায়েনা’ কিংবা ‘নেকড়ে’ বলছেন।
পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান নয়ন বলেন, যারা আহত হয়েছেন তাদের জলাতঙ্ক রোগের টিকা দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, প্রাণীটি কেমন তা কেউ দেখেনি। তবে স্থানীয়দের কথা শুনে এবং প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে এটি পাগলা শিয়াল হতে পারে।
স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম ফেরদৌস সরকার গত ১৮ অক্টোবর মারা যান। ২০ দিন আগে তিনি মাঠে ঘাস কাটার সময় হঠাৎ ওই প্রাণীটির আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। তার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে প্রাণীটি পালিয়ে যায়। জানা যায়, আহত হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে। পরে জলাতঙ্ক টিকাও দেয় হয় তাকে কিন্তু শেষ পর্যন্ত মারা যান তিনি।
স্থানীয়রা জানান, একই দিন আরো কয়েক জায়গায় প্রাণীটির হামলায় অন্তত তিনজন আহত হন। এরপর বেশ কিছুদিন বিভিন্ন জায়গায় প্রাণীটির আকস্মিক আক্রমণের শিকার হন অন্তত আরো ১২ জন। স্থানীয় বাসিন্দারা ভয় আর আতঙ্কে সার্বক্ষণিক লাঠি সঙ্গে নিয়ে চলাফেরা করছেন। সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছেন তারা।
তালুক কেওয়াবাড়ী এলাকার সাইদুর রহমানের স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, প্রাণীটা হঠাৎ বের হয়। এখনো ধরা যায়নি। তাই সব সময় লাঠি সঙ্গে রাখি। সন্ধ্যার পর ঘরে থাকার চেষ্টা করি। এলাকার মানুষ দল বেঁধে চলাফেরা করছেন এবং পাহারা দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
পলাশবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আলতাব হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে তারা মাঠপর্যায়ে একটি টিম পাঠিয়েছেন। যাতে করে কোনো প্রাণী হামলা করলে তাকে টিকা দেয়া যায়। তিনি বলেন, ওই এলাকায় অনেক সময় চর থেকে খাদ্যের জন্য শিয়াল বা এ ধরনের প্রাণী আসে। আবার কোনো প্রাণী রোগে আক্রান্ত হলে বা মানসিক অসুস্থ হলেও বিহেভিয়ার প্যাটার্ন চেইঞ্জ হতে পারে।
গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মাসুদার রহমান বলেন, এ ধরনের প্রাণী মানুষ বা পশু যাকেই কামড় দিক- তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত জলাতঙ্কের টিকা দিতে হবে। তিনি বলেন, ওই সব গ্রামের মানুষকে সতর্ক থাকতে ও নিরাপদে চলাফেরা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন জানান, গ্রামবাসীকে রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এজন্য গ্রাম পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় রাখাসহ সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এমনকি স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়োগ করা হয়েছে।