
স্টাফ রিপোর্টার: উজান থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানি ও পহাড়ী ঢলে ভাসছে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ১২টি জেলা। জেলাগুলো হচ্ছে- কুড়িগ্রাম, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ি, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া।
এসব বন্যাকবলিত এলাকার গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় মানুষ ঘরে বন্দি হয়ে আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আমন বীজতলা, আমন ধান ক্ষেত ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব তারা নোংরা পানি পান করছে। টয়লেট ডুবে যাওয়ায় যেখানে-সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করায় রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বাড়ছেই। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ইতিমধ্যেই নদী তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে রোববার (২৯ আগস্ট) সকালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাজিপুর মেঘাইঘাট পয়েন্টেও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনা নদীর পানি।
গত কয়েকদিনের অব্যাহত পানি বাড়ার ফলে বগুড়ার সোনাতলা এবং সারিয়াকান্দি উপজেলার ১৬ ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে সোনাতলার ৩টি ইউনিয়ন এবং সারিয়াকান্দির ১৩টি ইউনিয়ন মাঝারি মানের বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনায় পানি বেড়েছে ৮ সেন্টিমিটার। রোববার (২৯ আগস্ট) সকাল ৯টা পর্যন্ত যমুনার মথুরাপাড়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা ধরে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকার নদ-নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এতে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম থেকে মধ্যাঞ্চলের চাঁদপুর পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা পাড়ের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত থাকতে পারে।
রাজবাড়ির গোয়ালন্দে এটি বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। শরীয়তপুরের সুরেশ্বর বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। আত্রাই বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার উপরে আছে বাঘাবাড়িতে। আর ধলেশ্বরী টাঙ্গাইলের এলাসিন পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপরে আছে। কুড়িগ্রামে ধরলা বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে শনিবার বেলা ৩টায় ৩৪ ও ব্রহ্মপুত্র নদ চিলমারী পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উজানের ঢল ও অব্যাহত বর্ষণের ফলে ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়াও পানি বাড়ার ফলে বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে যমুনার শাখা নদী ধলেশ্বরী, লৌহজং, বংশাই ও ঝিনাই নদীর পানি।