খোঁজ খবর রিপোর্ট: গাইবান্ধায় জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলী হত্যার প্রতিবাদে রোববার দুপুর ১২টায় ঘন্টাব্যাপী জেলা শহরের গানাসাস মার্কেটের সামনে মুখে কালো কাপড় বেধে প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হয়। হাসান হত্যার প্রতিবাদ মঞ্চ এই কর্মসূচীর আয়োজন করে।
এদিকে চারদফা দাবি আদায়ে গাইবান্ধা জেলা শহরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তিনদিন ধরে কালো পতাকা উড়ছে। প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন হাসান হত্যার প্রতিবাদ মঞ্চের সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মিহির ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল, জাসদের সভাপতি গোলাম মারুফ মনা, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জনি, বাসদের সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী, সাম্যবাদী আন্দোলনের জেলা সদস্য সচিব মনজুর আলম মিঠু, জেলা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মকছুদার রহমান শাহান, গাইবান্ধা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল খায়ের মোরছালীন পারভেজ, চেম্বারের পরিচালক খান মোঃ সাঈদ হোসেন জসিম, জেলা এ্যাডভোকেট বার এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু, নারী মুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিলুফার ইয়াছমিন শিল্পী, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সাধারণ সম্পাদক মিলন সরকার, কৃষক শ্রমিক জনতালীগের জেলা সভাপতি মোস্তফা মরিরুজ্জামান, শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা জাতীয় পার্টির রেজাউন্নবী রাজু, ক্রীড়া সংগঠক ওয়াজিউর রহমান রাফেল, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর কবীর তনু, ব্রহ্মপুত্র সড়ক ও রেল সেতু বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক এ্যাড. আশরাফ আলী, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) জেলা সংগঠক মৃণাল কান্তি, দোকান কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল সাহা, জাসদ ছাত্রলীগ সভাপতি রুকনউদদৌলা, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কবীর রানা, ছাত্রফ্রন্টের জেলা সভাপতি পরমানন্দ দাস, ছাত্র ইউনিয়ন জেলা সভাপতি ওয়ারেছ সরকার, ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক শামীম আরা মিনা, মাসুদুর রহমান মাসুদ, নুর মোহাম্মদ বাবু প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, হাসান হত্যার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত চারদফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। কেউ আন্দোলন নস্যাতের ষড়যন্ত্র করলে গাইবান্ধাবাসী তা প্রতিহত করবে। অন্যথায় জেলায় সর্বাত্মক হরতালের হুশিয়ারী দেন বক্তারা। তারা আরও বলেন, চারদফা দাবির মধ্যে রয়েছে হাসান হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তার, সদর থানার ওসি মাহফুজার রহমানের অপসারণসহ অভিযুক্ত পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবুর রহমান ও অপর উপ-পরিদর্শক মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, সুষ্ঠু বিচারের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন এবং দাদন ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ রানার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তিসহ গাইবান্ধা জেলা থেকে অবিলম্বে অবৈধ সুদ ও দাদন ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম বন্ধ। এই অবস্থান কর্মসুচি থেকে আগামি ২৪ মে শহীদ মিনারে গণঅবস্থান কর্মসুচি ঘোষণা করা হয়। ওইদিন হরতাল কর্মসুচি ঘোষণা করা হতে পারে বলে বক্তারা জানান। এ ছাড়া প্রতিবাদী কর্মসূচিতে গণসংগীত এবং প্রতিবাদী কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি পরিবেশিত হয়। এসময় নিহতের স্ত্রী বিথী বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামীর কোনো অপরাধ নেই। তাকে কেন নির্যাতন করে মারা হলো। আমি এর বিচার চাই।
গাইবান্ধা জেলা শহরের স্টেশন রোডে আফজাল সুজ নামের নিহত হাসান আলীর জুতার দোকান ছিল। গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর স¤পাদক মাসুদ রানা (৪২) একজন দাদন ব্যবসায়ী। ব্যবসা চলাকালে মাসুদ রানার কাছে দেড় লাখ টাকা দাদন নেন হাসান আলী। এই টাকা সুদাসলে বর্তমানে ১৯ লাখে দাড়িয়েছে বলে দাবি করেন মাসুদ রানা। সম্প্রতি মাসুদ রানা সুদের টাকার জন্য হাসান আলীকে চাপ দেন। এক পর্যায়ে গত ৫ মার্চ সকালে লালমনিরহাটের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে হাসানকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে আসেন মাসুদ রানা। তিনি তাকে গাইবান্ধা শহরের খানকা শরীফ সংলগ্ন নারায়নপুর এলাকায় নিজ বাসায় একমাস আটকে রাখেন। এরপর টাকা নিয়ে হাসানের সঙ্গে মাসুদ রানার তর্কবিতর্ক হয়।
টাকার জন্য তিনি হাসানকে মানষিক ও শারীরক নির্যাতন এবং নানা ধরণের হুমকি দেন। ওইদিন সন্ধ্যায় (৫ মার্চ) নিহতের স্ত্রী বিথী বেগম স্বামী হাসান আলীকে অপহরনের অভিযোগে মাসুদ রানার বিরুদ্ধে গাইবান্ধা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পরে মাসুদ রানার বাড়ি থেকে হাসান আলীকে উদ্ধার করে সদর থানায় নিয়ে আসেন সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবুর রহমান ও উপ-পরিদর্শক মোশারফ হোসেন এবং উপ-পরিদর্শক মো. আসাদ। এ সময় মাসুদ রানাকেও থানায় নিয়ে আসা হয়। একইদিন রাতে পুলিশ হাসান ও মাসুদ রানাকে নিয়ে থানায় শালিশ বৈঠক করে। এ সময় হাসান আলী ও তার স্ত্রীর কাছে পুলিশ সুদের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় নন- জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে পুলিশ হাসান আলীকে অপহরণকারী মাসুদ রানার জিম্মায় দেয়। এরপর দলীয় ক্ষমতার দাপটে মাসুদ রানা তার বাড়িতে একমাস ৬দিন আটকিয়ে রেখে হাসানকে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করতে থাকে। ১০ এপ্রিল সকালে মাসুদ রানার বাড়ি থেকে হাসান আলীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পরপরই পুলিশ মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করে। এনিয়ে নিহতের স্ত্রী বিথী বেগম সদর থানায় মাসুদ রানাসহ তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। অপর দুইজন হচ্ছেন শহরের স্টেশন রোডের জুতা ব্যবসায়ী রুমেল হক ও খলিলুর রহমান ওরফে বাবু মিয়া।