শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:৫২:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ এপ্রিল ২০২১
  • ২৯৮ Time View

বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান

খোঁজ খবর ডেস্ক: না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।  এপ্রিলের শুরুতে করোনা পজিটিভ হওয়ার পর বেশ কিছুদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বর্ষীয়ান এই শিক্ষাবিদ। অবস্থার অবনতি হওয়ার পর বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না…রাজিউন)। তার স্ত্রীও আক্রান্ত হন। দুজনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ছিলেন। স্ত্রীর স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হলেও শামসুজ্জামানের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় রোববার তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।

বাংলা একাডেমির সভাপতি স্বাধীনতা ও একুশে পদক প্রাপ্ত বিশিষ্ট ফোকলোরবিদ ও গবেষক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও সচিব মো. বদরুল আরেফীন।

প্রতিমন্ত্রী ও সচিব বুধবার (১৪ এপ্রিল) পৃথক শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোকবার্তায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী জানান, অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান ছিলেন একাধারে লোক সংস্কৃতি ও পল্লীসাহিত্য গবেষক। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে অন্যতম হল, বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা শিরোনামে ৬৪ খণ্ডে ৬৪ জেলার লোকজ সংস্কৃতির সংগ্রহশালা সম্পাদনা এবং ১১৪ খণ্ডে বাংলাদেশের ফোকলোর সংগ্রহমালা সম্পাদনা। কে এম খালিদ বলেন, বিশিষ্ট লোকগবেষক শামসুজ্জামান খান তার সৃজনশীল কর্ম ও গবেষণার মধ্য দিয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

শামসুজ্জামান খানের বর্ণাঢ্য জীবন

বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালকের বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্বাধীনতা পদক পদক ও একুশে পদকে ভূষিত। অধ্যাপক শামসুজ্জামানের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৯ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার চারিগ্রামে।

ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের থেকে শিক্ষাজীবন শেষে শিক্ষকতা দিয়ে তার কর্মজীবনের সূচনা। বিভিন্ন সময় মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ, ঢাকা জগন্নাথ কলেজ, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্বিবিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্বিবিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন তিনি। ২০০৯ সালে তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হন। এরপর তিন মেয়াদে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন। পরে তাকে একাডেমির সভাপতি করা হয়। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালকের দায়িত্বেও ছিলেন।

তিনি ইসলামী বিশ্বিবিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন।

লোকশিল্প গবেষক শামসুজ্জামানের রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফোকলোর চর্চা, বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা ও বর্তমান বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, মুক্তবুদ্ধি, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমকাল, বাঙালির বহুত্ববাদী লোকমনীষা, মীর মশাররফ হোসেন : নতুন তথ্যে নতুন ভাষ্যে, সৃজনভুবনের আলোকিত মানুষেরা, রঙ্গরসের গল্পসমগ্র, কিশোর রচনাসমগ্র, বাংলাদেশের উৎসব, বাংলা সন ও পঞ্জিকা, ফোকলোরচিন্তা ইত্যাদি।

বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা শিরোনামে ৬৪ খণ্ডে ৬৪ জেলার লোকজ সংস্কৃতির সংগ্রহশালা সম্পাদনা এবং ১১৪ খণ্ডে বাংলাদেশের ফোকলোর সংগ্রহমালা সম্পাদনা করেন তিনি।

সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০১ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ২০০৯ সালে একুশ পদক পাওয়ার পর ২০১৭ সালে তিনি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেন।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

MD ZANNATUL FERDOUSH

NEWS PURPOSE
Popular Post

গাইবান্ধায় ইট ভাটা মালিক সমিতি ও শ্রমিকদের বিক্ষোভ

না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান

Update Time : ০১:৫২:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ এপ্রিল ২০২১

খোঁজ খবর ডেস্ক: না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।  এপ্রিলের শুরুতে করোনা পজিটিভ হওয়ার পর বেশ কিছুদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বর্ষীয়ান এই শিক্ষাবিদ। অবস্থার অবনতি হওয়ার পর বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না…রাজিউন)। তার স্ত্রীও আক্রান্ত হন। দুজনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ছিলেন। স্ত্রীর স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হলেও শামসুজ্জামানের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় রোববার তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।

বাংলা একাডেমির সভাপতি স্বাধীনতা ও একুশে পদক প্রাপ্ত বিশিষ্ট ফোকলোরবিদ ও গবেষক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও সচিব মো. বদরুল আরেফীন।

প্রতিমন্ত্রী ও সচিব বুধবার (১৪ এপ্রিল) পৃথক শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোকবার্তায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী জানান, অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান ছিলেন একাধারে লোক সংস্কৃতি ও পল্লীসাহিত্য গবেষক। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে অন্যতম হল, বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা শিরোনামে ৬৪ খণ্ডে ৬৪ জেলার লোকজ সংস্কৃতির সংগ্রহশালা সম্পাদনা এবং ১১৪ খণ্ডে বাংলাদেশের ফোকলোর সংগ্রহমালা সম্পাদনা। কে এম খালিদ বলেন, বিশিষ্ট লোকগবেষক শামসুজ্জামান খান তার সৃজনশীল কর্ম ও গবেষণার মধ্য দিয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

শামসুজ্জামান খানের বর্ণাঢ্য জীবন

বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালকের বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্বাধীনতা পদক পদক ও একুশে পদকে ভূষিত। অধ্যাপক শামসুজ্জামানের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৯ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার চারিগ্রামে।

ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের থেকে শিক্ষাজীবন শেষে শিক্ষকতা দিয়ে তার কর্মজীবনের সূচনা। বিভিন্ন সময় মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ, ঢাকা জগন্নাথ কলেজ, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্বিবিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্বিবিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন তিনি। ২০০৯ সালে তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হন। এরপর তিন মেয়াদে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন। পরে তাকে একাডেমির সভাপতি করা হয়। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালকের দায়িত্বেও ছিলেন।

তিনি ইসলামী বিশ্বিবিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন।

লোকশিল্প গবেষক শামসুজ্জামানের রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফোকলোর চর্চা, বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা ও বর্তমান বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, মুক্তবুদ্ধি, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমকাল, বাঙালির বহুত্ববাদী লোকমনীষা, মীর মশাররফ হোসেন : নতুন তথ্যে নতুন ভাষ্যে, সৃজনভুবনের আলোকিত মানুষেরা, রঙ্গরসের গল্পসমগ্র, কিশোর রচনাসমগ্র, বাংলাদেশের উৎসব, বাংলা সন ও পঞ্জিকা, ফোকলোরচিন্তা ইত্যাদি।

বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা শিরোনামে ৬৪ খণ্ডে ৬৪ জেলার লোকজ সংস্কৃতির সংগ্রহশালা সম্পাদনা এবং ১১৪ খণ্ডে বাংলাদেশের ফোকলোর সংগ্রহমালা সম্পাদনা করেন তিনি।

সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০১ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ২০০৯ সালে একুশ পদক পাওয়ার পর ২০১৭ সালে তিনি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেন।