
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ জেলার উলিপুর উপজেলায় সরকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রকাশ্যে ড্রেজারের সাহায্যে লোকালয় ও নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনের মহা উৎসব চলছে। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সরাসরি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের চিঠি দিলেও উলিপুর উপজেলা প্রশাসন নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় সাতচল্লিশটি স্থানে এ অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে ভূমিকম্প প্রবণ রংপুর অঞ্চলের এ সমস্ত এলাকায় ভূগর্ভস্থবালু উত্তোলনের কারনে মাটির নীচে বালুর স্তর শুন্য হওয়ায় শহর গ্রামের বসতবাড়িসহ সরকারী বিভিন্ন স্থাপনা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছে। পাশাপাশি এসব এলাকায় শুষ্ক মৌসুমেও নদী ভাঙ্গনের প্রবণতা বাড়ছে।
কুড়িগ্রামে উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গত সরেজমিন ঘুরে অবৈধ বালু উত্তোলনের অসংখ্য দৃশ্য চোখে পড়ে।
উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের কদমতলা এলাকায় ব্যানা সামাদের জমি থেকে বালু তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সুদারু করিমের জমিতে। তবকপুর ইউনিয়নের জঙ্গলতোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অদূরে বগলা কুড়া এলাকার জনৈক আব্দুর রহিম তার বাড়ি লাগোয়া ফসলী জমির বালু তুলে রাস্তার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করছে। ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলছে ধামশ্রেনী ইউনিয়নের রেজিয়া-জুলেখা মাদ্রাসা সংলগ্ন বুড়িতিস্তা থেকেও। একই অবস্থা বিরাজ করছে উপজেলার সবগুলো ইউনিয়নে। এভাবে ভূগর্ভস্থ বালুতোলায় স্থানীয় মানুষজনের মাঝে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
দুর্গাপুর ইউনিয়নের জানজায়গীর গ্রামে লোকালয়ের ভেতর মোজাম্মেল হক মেম্বারের জমিতে ড্রেজার বসিয়ে ভূগর্ভস্থবালু তুলে জানজায়গীর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে রবিউলের পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। যমুনা ব্যাপারীপাড়ার পশু চিকিৎসক মুস্তাফিজুর রহমান ফসলি জমির মাঝ থেকে একইভাবে বালু তুলে যমুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে বিক্রির জন্য স্তুপ দিচ্ছে। কামালখামার তেঁতুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় লাগোয়া পুকুর থেকে বালু তুলে অবাধে বিক্রি করছে। এতে বিদ্যালয়টি ঝুঁকির মুখে পরেছে। ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের মাঝবিল বাজারের অদূরে হায়বর আলীর জমি থেকে অবৈধ ভাবে ভূগর্ভস্থ খনিজ সম্পদ বালু তুলে ডা: শাহাজান এর পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। এখানে বালু উত্তোলনের সময় ঘনবসতি পূর্ণ এলাকার বাড়ি ঘর জলমগ্ন হয়ে জন দুর্ভোগ চরমে উঠে। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অসংখ্যবার ফোনে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি। কেকতির পাড় গ্রামের বামনি নদী থেকে বালু তুলে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে নতুন অনন্তপুর এলাকার মোকলেছুর রহমানের পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। উলিপুর পৌরসভার দাঁড়ারপাড় এলাকায় বালু তুলছে এরশাদ নামের এক বালু ব্যাবসায়ী।
অনন্তপুরের হযরত আলী, কদমতলার আবু সাঈদ, ধরনী বাড়ির মমিনুল, কামালখামারের খয়বর আলী, কেকতিরপাড় গ্রামের সামছুল, জঙ্গলতলা বগলাকুড়ার জাহিদ, জানজায়গীর এলাকার ফারুক অভিযোগ করে বলেন, এসব অবৈধ বালু উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে পাচ্ছিনা।
এদিকে হাতীয়া, গুনাগাছ, বজরা, থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়নের তিস্তা এবং ব্রম্মপুত্র নদের কিনার থেকে অবাধে বালুতোলা হলেও কোন প্রতিকারের ব্যবস্থা নেই।
একটি সিন্ডিকেট প্রকাশ্যে প্রশাসনের নাকের ডগায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ বালু উত্তোলন কার্যক্রম অব্যাহত রাখলেও এখানে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের নিষেধাঙ্গা কোন ভাবেই কার্যকর হচ্ছে না। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগও অবৈধ পন্থায় বালু উত্তোলন করে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
এছাড়া পুকুর ভরাট, বসতবাড়ী উঁচুকরন, সরকারী রাস্তার নির্মানকাজসহ বিভিন্ন কাজে অবাধে ব্যবহার হচ্ছে এসব বালু। আর রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে অবৈধ বালুব্যাবসায়ীরা আর ঝুঁকির মুখে পড়ছে এলাকার মানুষ।
একটি সিন্ডিকেট প্রশাসনের নাকের ডগায় ড্রেজার দিয়ে অবৈধ ভাবে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করলেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসন নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে । অভিযোগ রয়েছে, বালু উত্তোলন সিন্ডিকেটের নেপথ্যে রয়েছে শাসক দলের রাজনৈতিক প্রভাব ফলে আইন প্রয়োগে প্রশাসন শৈথল্য দেখাচ্ছে।
সম্প্রতি অবৈধ পন্থায় বালু উত্তোলন বন্ধে শক্ত অবস্থান নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে পাঁচ সচিব ও ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক এবং মাঠ প্রশাসনে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় প্রয়োজনে অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধে শক্ত অবস্থান নিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে তা একেবারে প্রতিপালন হচ্ছে না বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-এ-জান্নাত রুমির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সব উপজেলায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, তার পরও আমি পদক্ষেপ নিচ্ছি।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোঃ রেজাউল করিম এর সাথে অবৈধ বালু উত্তোলন বিষয়ে কথা হলে জানান, আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।