
খোজ খবর ডেস্ক: ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মমতার আসন নন্দীগ্রামসহ ৩০ আসনে ভোটগ্রহণ আজ। এই লড়াইয়ের ওপর নির্ভর করছে মমতার ভবিষ্যৎ রাজনীতি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নন্দীগ্রামে ভাগ্য নির্ধারিত হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির।
অপর দিকে মমতার বিরুদ্ধে লড়ছেন বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। যাকে বলা হয় মমতার এক সময়ের ‘ডান হাত’। কিছুদিন আগেই যিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এখন শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষই নন, বরং ভোটের লাড়াইয়েও প্রতিপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে ভোট চলাকালে গোটা নন্দীগ্রামেই ১৪৪ ধারা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। সব মিলিয়ে মমতার জন্য লড়াইটা খুব সহজতর হচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পশ্চিমবঙ্গের নন্দীগ্রামে যখন ভোট চলবে তখন পাশের দুই জেলা হাওড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রচারণা চালাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সারা ভারতের নজর রয়েছে নন্দীগ্রাম আসনের দিকে। এই আসনে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে লড়াই তারই সাবেক অনুগামী এবং বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর। রয়েছেন সিপিএমের মিনাক্ষী মুখার্জিও। ত্রিমুখী লড়াইয়ে কে এগিয়ে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। শেষ হাসি কে হাসবেন, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ২ মে পর্যন্ত। সেই দিনই পশ্চিমবঙ্গসহ আসাম, তামিলনাড়ু, পণ্ডিচেরি এবং কেরালার নির্বাচনের ফল প্রকাশ হবে। তবে ‘হট সিট’ নন্দীগ্রাম ভোটের আগে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পড়েছে। সেখানে ঢোকার সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাইরে থেকে সেখানে লোক ঢুকতে গেলে কারণ ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে। গোটা এলাকা জুড়ে চলছে আধাসামরিক বাহিনীর নজরদারি।
আজকের ভোট গ্রহণেই তৃণমূল কংগ্রেসের তারকা প্রার্থী সোহম চক্রবর্তী ও সায়ন্তিকা ব্যানার্জি, বিজেপির হিরন চট্টোপাধ্যায় ও অশোক ডিন্ডার ভাগ্যও নির্ধারিত হবে।
বুধবার সিঙ্গুরে এক জনসভায় মমতা ব্যানার্জি বলেন, আমাদের ২২৫ থেকে ২৩০টি আসনে জিততে হবে। না হলে বিজেপি টাকা দিয়ে এমএলএদের কিনে নেবে। তাই অনেক বেশি ভোটে, বেশি আসনে তৃণমূলকে জেতাতে হবে। তিনি বলেন, বিজেপি টাকা ছড়াচ্ছে। অভিযোগ জানানোর পরও ব্যবস্থা নেয়নি নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমার অনুরোধ, স্বচ্ছ নির্বাচন করুন।
পশ্চিমবঙ্গে বাকি ৬ দফার নির্বাচনে প্রচারণার জন্য ১৫ জনসভা করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রতি দফার ভোট গ্রহণের আগে তিনি একবার করে আসবেন। দিনে দুটি করে জনসভা করবেন। আজ বৃহস্পতিবার দুটি জনসভা করে তিনি দিল্লি ফিরে যাবেন। আবার আসবেন ৩ এবং ৬ এপ্রিল। বিজেপি সূত্র জানায়, ৬ এপ্রিল ভারতের বাকি চার রাজ্যে ভোট গ্রহণ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে বাকি দিনগুলোয় পশ্চিমবঙ্গে মনোনিবেশ করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আসবেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। লোকসভা নির্বাচনের সময় পশ্চিমবঙ্গে ১৫টি জনসভা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তৃণমূল কংগ্রেসের ওপর চাপ এবং বিজেপি কর্মীদের মনোবল বাড়াতেই এত বেশি পশ্চিমবঙ্গে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে ভোট চলাকালে বিরোধী ঐক্য চেয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীসহ এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার, বিহারের আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব, আম আদমি পার্টির (আপ) অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উড়িশার বিজেডির নবীন পট্টনায়ক, তামিলনাড়ুর ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিন, মহারাষ্ট্রের শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরেরকে চিঠি দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র এবং সংবিধানের বিরুদ্ধে বিজেপি যে আঘাত হানছে, তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের সময় এসেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নন্দীগ্রাম সব অর্থেই ‘হট সিট’। মমতা ও শুভেন্দু জমিরক্ষা আন্দোলনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন এখানে। এই নন্দীগ্রাম থেকেই ২০১৬ সালে তৃণমূলের টিকিটে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন শুভেন্দু। স্বাভাবিকভাবে সেখানকার মাটি, মানুষ ভালোই তাঁর চেনা। ফলে জয়ের ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী। সমান আত্মবিশ্বাসী মমতাও। এ কারণে নিজের আসন ভবানীপুর ছেড়ে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন সেখানে। ফলে এই আসনের ভোটের লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘সম্মান’ রক্ষার লড়াইও।