স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বহুল আলোচিত তিন সাঁওতাল হত্যা মামলার চার্জশীট প্রত্যাখান করে নারাজি দাখিল করেছে বাদী পক্ষ। সোমবার দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্রের আদালতে এ নারাজি দাখিল করা হয়। নারাজি শুনানীতে অংশ নেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি রফিক আহম্মেদ সিরাজী, গাইবান্ধা জেলা জজ আদালতের আইনজীবি মুরাদ জামান রব্বানী এবং স্থানীয় আদালতের আইনজীবি ফয়জুল আলম রনন।
আইনজীবি রফিক আহম্মেদ সিরাজী বলেন, এ মামলার উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মুল আসামীদের বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে ১৬টি পয়েন্ট উল্লেখ করে আদালতে নারাজি দাখিল করা হয়েছে। আদালত বলেছেন যেহেতু চার্জশীটটি অনেক বড়, তিনি চার্জশীটটি পড়ে দেখবেন। তিনি আরও বলেন, পুলিশ বা অন্য প্রশাসনের উপর আমাদের কোন আস্থা নেই। আমরা সরাসরি জুডিসিয়াল তদন্ত চেয়েছি। বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে জানান তিনি। অন্যান্য বিষয়াদী পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে তিনি এ বিষয়ে আদেশ দিবেন।
তিনি বলেন, অগ্নিসংযোগের চিহিৃত পুলিশ সদস্য (সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিল) তাদের গ্রেপ্তার বা রিমান্ডে নেয়া হয়নি। জনমতের চাপে বাধ্য হয়ে ঘটনার ১০দিন পর মামলা রেকর্ড করলেও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ঘটনাটি ধামাচাপা ও প্রকৃত আসামীদের আইনের আওতায় না আনার মত উদাসীনতা প্রমাণ করে যে, পুলিশ আমলার আইও জড়িত ও দায়ী পুলিশ সদস্যদের পক্ষপাতমূলক ভাবেই চার্জশীটে আসামী ভুক্ত করেননি। এসময় আদালত চত্বরে ভীড় করেন সাঁওতালরা, এরপর সাঁওতালরা আদালত চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পৌরশহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
প্রসঙ্গত, গত ২ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪৯৬ নং অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করেন সিআইডি। সেখানে মামলার মুল আসামীদের বাদ দিয়ে চার্জশীট দাখিল করলে বাদী পক্ষ চার্জশীট প্রত্যাখ্যান করে এ নারাজি করেন।
সোমবার সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে আদালত চত্বর এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ডা. ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি রফিক আহম্মেদ সিরাজী, সিপিবি গাইবান্ধা জেলা কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুরাদ জামান, সিপিবি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম প্রধান, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন শেখ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সুফল হেমব্রম, কোষাধ্যক্ষ গণেশ মুরমু, প্রচার সম্পাদক রাফায়েল হাজদা ও প্রিসিলা মুরমু সহ আরও অনেকে। বক্তারা বলেন, সাঁওতালদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সেইসাথে সাঁওতাল হত্যা, বসতবাড়ী ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং জড়িত আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তার সহ ৭ দফা দাবী জানানো হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর পুলিশ সঙ্গে নিয়ে রংপুর চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জমিতে আখ কাটতে যান চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীরা। এসময় নিজেদের বাপ-দাদার জমি দাবী করে বাধা দেন সাঁওতালরা। এতে পুলিশ, চিনিকল শ্রমিক ও সাঁওতালদের ত্রিমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে রমেশ টুডু, শ্যামল হেমব্রম ও মঙ্গল মার্ডি নামের তিন সাঁওতাল নিহত হন। আহত হন উভয়পক্ষের ৩০জন। উক্ত ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষ থেকে থোমাস হেমরম বাদী হয়ে তৎকালীন এমপি আবুল কালাম আজাদ, চিনিকলের এমডি আব্দুল আউয়াল, সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুল, কাটাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রফিকসহ ৩৩জনের নাম উল্লেখ এবং ৫০০-৬০০জনকে অজ্ঞাত আসামী করে থানায় এজাহার দাখিল করা হয়। পুলিশ সেটি জিডি হিসেবে ইন্ট্রি করেন। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ১৪৪০২/১৬ নং রীট পিটিশন দাখিল করলে থোমাস হেমরমের জিডি ৫৬০/১৬ নং মামলা ইন্ট্রি করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। পিবিআই ২০১৯ সালে ২৩ জুলাই মুল আসামীদের বাদ দিয়ে ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে ২৬৩ নং অভিযোপত্র (চার্জশীট) দাখিল করে। এরপর ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর চার্জশীট প্রত্যাখান করে নারাজি দাখিল করা হয়। নারাজি আমলে নিয়ে ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
ফেরদৌস জুয়েল, গাইবান্ধা প্রতিনিধি। ০৫.০১.২০২১