শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টর্চার সেলে নিয়ে সাংবাদিক নির্যাতন; বেপরোয়া আতিক বাহিনী

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:২০:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০২০
  • ৩৮০ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শিল্পাঞ্চল সাভারের আশুলিয়া একটি ঘনবসতি ও ব্যস্ততম এলাকা। এই এলাকায় বিভিন্ন সুবিধা থাকায় দুটি রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ জোন ও গড়ে উঠেছে ছোট-বড় সহস্রাধিক কারখানা। এর মধ্যে পোশাক কারখানার সংখ্যাই বেশি। এই কারখনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আরও বেশ কিছু কারখানা। আর কর্মের আওতা বেড়ে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কর্মমূখী মানুষ ছুটে এসেছে এখানেই। সব মিলে এই এলাকাটি বানিজ্যিক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছে। আর এই সুযোগে এলাকাটিতে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু বাহিনী, আবার তাদের আছে টর্চার সেল। এমন একটি বাহিনী আতিক বাহিনী।

মঝে মধ্যেই এই বাহিনীটি জাতীয় শ্রমিক লীগ, আশুলিয়া থানা’র ব্যানারে বিভিন্ন মিটিং মিছিল করে তাদের অপশক্তির জানান দেয়। কিন্তু এর আগে কিংবা বর্তমানে জাতীয় শ্রমিক লীগ, আশুলিয়া থানা কমিটির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় নি। ব্যক্তিগত স্বার্থ ও বাহিনী সুসংগঠিত করার জন্য সদস্য হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন হত্যা ও গুমের আসামিসহ শিল্পাঞ্চলে অসন্তোষ সৃষ্টিতে শ্রমিক উস্কানির দায়ে দীর্ঘদিন জেল খাটা আসামি। একই সাথে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চাইলে তাদেরই টর্চার সেলে ধরে নিয়ে চলে নানা নির্যাতন। তাদের হাত থেকে রেহাই পায় না সাংবাদিকসহ সাধারন শ্রমিকরাও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই বাহিনীটির প্রত্যক্ষভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন কথিত শ্রমিক লীগ নেতা পরিচয়দানকারী আতিকুজ্জামান পাটোয়ারী আতিক মুন্সী। তিনি কখনো জাতীয় শ্রমিক লীগ, আশুলিয়া থানা কমিটির সভাপতি কখনো সভাপতি প্রার্থী পরিচয় দিয়ে থাকেন। মাঝে মধ্যেই তিনি নিজের শক্তি জানান দিতে কিশোরদের নিয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগ, আশুলিয়া থানা’র ব্যানারে দেন মহড়া। এর আগে এই আতিক কোন শ্রমিক সংগঠনের সাথে কিংবা শ্রমিক রাজনীতির সাথে কখনো সম্পৃক্ত ছিল না। অতিথি পাখির মত হঠাৎ তার উদ্ভব।
এই বাহিনীতে সক্রিয় সদস্য হিসেবে বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্র দলের নেতার হয়েছে আশ্রয় ও প্রশ্রয়। অন্যান্য সদস্যরা হলো- শেখ আল মামুন বিপ্লব, কথিত শ্রমিক নেতা আল মামুন, আশিক সরকার, বকুল আহম্মেদসহ আরও অনেকেই।

এই বাহিনীর অন্যতম সদস্য শেখ আল মামুন বিপ্লব। তিনি বিভিন্ন সময় শেখ পরিবারের সদস্য পরিচয় দিয়ে থাকেন। জানা যায়, তিনি হত্যা ও গুমের দাগী আসামি। এই মামলায় দীর্ঘদিন তিনি জেল খেটেছেন। পরবর্তীতে জামিনে মুক্ত হয়ে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় খুটি পুঁতে আবারও জড়িয়ে পরেছেন নানা অপকর্মে।

অপর সদস্য আল মামুন, তিনি গার্মেন্ট শ্রমকি নেতা হিসেবে এলাকায় বেশ পরিচিত। তবে এই শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা কুকর্মের অভিযোগ। ২০১৬ সালের শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির দায়ে দীর্ঘদিন খেটেছেন জেল। রয়েছে রহিঙ্গাদের সহযোগীতা করার কথা বলে বিভিন্ন কারখানা, শ্রমিক সংগঠন ও শ্রমিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অনুদান সংগ্রহ করে আত্মসাতের অভিযোগ। বিভিন্ন অনৈতিক অভিযোগে অভিযুক্ত এই শ্রমিক নেতার অফিসই ব্যবহার করা হয় টর্চার সেল হিসাবে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চাইলে এই মামুনের অফিসে নিয়ে সাঁটার বন্ধ করে শুরু হয় টর্চার। এদের হাত থেকে রেহাই পায় নি সাংবাদিকসহ সাধারন শ্রমিক।

সম্প্রতি তাদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন জাতীয় দৈনিক সংবাদ দিগন্ত পত্রিকার আশুলিয়া প্রতিনিধি মাহবুব আলম। তাদের নিয়ে অনুসন্ধানী তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করলে তারা বিষয়টি বু|ঝতে পারেন। এসময় তাকে চা খাওয়ার কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয় মামুনের কথিত অফিস নামের টর্চার সেলে। সেখানে নিয়ে শুরু হয় নানা নির্যাতন। একপর্যায়ে তাকে মারধর করে করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে নেওয়া হয় মনগড়া ভিডিও বক্তব্য। এক পর্যায়ে প্রায় ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ রাখার পর ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়্যাল ফাঁকা স্ট্যাম্পে নেওয়া হয় তার স্বাক্ষর। পরে ঘটনাস্থলে সাংবাদিক পৌছলে তার সম্পাদককে ফোন করে ঘটনা খুলে বলেন। পরে সম্পাদক আশুলিয়া থানায় ফোন করে ঘটনা খুলে বলেন। বিষটি বুঝতে পেরে তারা ওই সাংবাদিককে ছেড়ে দেয়। কোনমতে জীবন রক্ষা পেয়ে সাংবাদিক থানায় অভিযোগ দায়ের করলে অভিযুক্তদের আটকে অভিযান চালায় পুলিশ। তবে অভিযুক্তরা সবাই গা ঢাকা দেয়।

এব্যাপারে জাতীয় শ্রমিক লীগ, আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারন সম্পাদক লায়ন মো: ইমাম হোসেন বলেন, এই বাহিনীটি শ্রমিক লীগকে বিতর্কিত করতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, এই এলাকায় অতীতে কোন জাতীয় শ্রমিক লীগ, আশুলিয়া থানা কমিটির কোন অস্তিত্ব ছিল না বর্তমানেও নেই। আঞ্চলিক কমিটি যদি মনে করেন থানা কমিটি দেওয়া প্রয়োজন তাহলে এই কমিটি দেওয়ার ইখতিয়ার আঞ্চলিক কমিটির। জাতীয় শ্রমিক লীগ, আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার জানামত এই এলাকায় কোন থানা কমিটি ছিল না।

এব্যাপারে আশুলিয় থানার উপ-পরিদর্শক জসিম বলেন, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Md Zannatul Ferdoush Jewel

Online News Portal

গাইবান্ধায় বিরোধ নিষ্পত্তি করতে গিয়ে ইউপি সদস্য খুন

টর্চার সেলে নিয়ে সাংবাদিক নির্যাতন; বেপরোয়া আতিক বাহিনী

Update Time : ০৯:২০:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শিল্পাঞ্চল সাভারের আশুলিয়া একটি ঘনবসতি ও ব্যস্ততম এলাকা। এই এলাকায় বিভিন্ন সুবিধা থাকায় দুটি রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ জোন ও গড়ে উঠেছে ছোট-বড় সহস্রাধিক কারখানা। এর মধ্যে পোশাক কারখানার সংখ্যাই বেশি। এই কারখনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আরও বেশ কিছু কারখানা। আর কর্মের আওতা বেড়ে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কর্মমূখী মানুষ ছুটে এসেছে এখানেই। সব মিলে এই এলাকাটি বানিজ্যিক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছে। আর এই সুযোগে এলাকাটিতে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু বাহিনী, আবার তাদের আছে টর্চার সেল। এমন একটি বাহিনী আতিক বাহিনী।

মঝে মধ্যেই এই বাহিনীটি জাতীয় শ্রমিক লীগ, আশুলিয়া থানা’র ব্যানারে বিভিন্ন মিটিং মিছিল করে তাদের অপশক্তির জানান দেয়। কিন্তু এর আগে কিংবা বর্তমানে জাতীয় শ্রমিক লীগ, আশুলিয়া থানা কমিটির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় নি। ব্যক্তিগত স্বার্থ ও বাহিনী সুসংগঠিত করার জন্য সদস্য হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন হত্যা ও গুমের আসামিসহ শিল্পাঞ্চলে অসন্তোষ সৃষ্টিতে শ্রমিক উস্কানির দায়ে দীর্ঘদিন জেল খাটা আসামি। একই সাথে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চাইলে তাদেরই টর্চার সেলে ধরে নিয়ে চলে নানা নির্যাতন। তাদের হাত থেকে রেহাই পায় না সাংবাদিকসহ সাধারন শ্রমিকরাও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই বাহিনীটির প্রত্যক্ষভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন কথিত শ্রমিক লীগ নেতা পরিচয়দানকারী আতিকুজ্জামান পাটোয়ারী আতিক মুন্সী। তিনি কখনো জাতীয় শ্রমিক লীগ, আশুলিয়া থানা কমিটির সভাপতি কখনো সভাপতি প্রার্থী পরিচয় দিয়ে থাকেন। মাঝে মধ্যেই তিনি নিজের শক্তি জানান দিতে কিশোরদের নিয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগ, আশুলিয়া থানা’র ব্যানারে দেন মহড়া। এর আগে এই আতিক কোন শ্রমিক সংগঠনের সাথে কিংবা শ্রমিক রাজনীতির সাথে কখনো সম্পৃক্ত ছিল না। অতিথি পাখির মত হঠাৎ তার উদ্ভব।
এই বাহিনীতে সক্রিয় সদস্য হিসেবে বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্র দলের নেতার হয়েছে আশ্রয় ও প্রশ্রয়। অন্যান্য সদস্যরা হলো- শেখ আল মামুন বিপ্লব, কথিত শ্রমিক নেতা আল মামুন, আশিক সরকার, বকুল আহম্মেদসহ আরও অনেকেই।

এই বাহিনীর অন্যতম সদস্য শেখ আল মামুন বিপ্লব। তিনি বিভিন্ন সময় শেখ পরিবারের সদস্য পরিচয় দিয়ে থাকেন। জানা যায়, তিনি হত্যা ও গুমের দাগী আসামি। এই মামলায় দীর্ঘদিন তিনি জেল খেটেছেন। পরবর্তীতে জামিনে মুক্ত হয়ে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় খুটি পুঁতে আবারও জড়িয়ে পরেছেন নানা অপকর্মে।

অপর সদস্য আল মামুন, তিনি গার্মেন্ট শ্রমকি নেতা হিসেবে এলাকায় বেশ পরিচিত। তবে এই শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা কুকর্মের অভিযোগ। ২০১৬ সালের শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির দায়ে দীর্ঘদিন খেটেছেন জেল। রয়েছে রহিঙ্গাদের সহযোগীতা করার কথা বলে বিভিন্ন কারখানা, শ্রমিক সংগঠন ও শ্রমিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অনুদান সংগ্রহ করে আত্মসাতের অভিযোগ। বিভিন্ন অনৈতিক অভিযোগে অভিযুক্ত এই শ্রমিক নেতার অফিসই ব্যবহার করা হয় টর্চার সেল হিসাবে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চাইলে এই মামুনের অফিসে নিয়ে সাঁটার বন্ধ করে শুরু হয় টর্চার। এদের হাত থেকে রেহাই পায় নি সাংবাদিকসহ সাধারন শ্রমিক।

সম্প্রতি তাদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন জাতীয় দৈনিক সংবাদ দিগন্ত পত্রিকার আশুলিয়া প্রতিনিধি মাহবুব আলম। তাদের নিয়ে অনুসন্ধানী তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করলে তারা বিষয়টি বু|ঝতে পারেন। এসময় তাকে চা খাওয়ার কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয় মামুনের কথিত অফিস নামের টর্চার সেলে। সেখানে নিয়ে শুরু হয় নানা নির্যাতন। একপর্যায়ে তাকে মারধর করে করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে নেওয়া হয় মনগড়া ভিডিও বক্তব্য। এক পর্যায়ে প্রায় ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ রাখার পর ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়্যাল ফাঁকা স্ট্যাম্পে নেওয়া হয় তার স্বাক্ষর। পরে ঘটনাস্থলে সাংবাদিক পৌছলে তার সম্পাদককে ফোন করে ঘটনা খুলে বলেন। পরে সম্পাদক আশুলিয়া থানায় ফোন করে ঘটনা খুলে বলেন। বিষটি বুঝতে পেরে তারা ওই সাংবাদিককে ছেড়ে দেয়। কোনমতে জীবন রক্ষা পেয়ে সাংবাদিক থানায় অভিযোগ দায়ের করলে অভিযুক্তদের আটকে অভিযান চালায় পুলিশ। তবে অভিযুক্তরা সবাই গা ঢাকা দেয়।

এব্যাপারে জাতীয় শ্রমিক লীগ, আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারন সম্পাদক লায়ন মো: ইমাম হোসেন বলেন, এই বাহিনীটি শ্রমিক লীগকে বিতর্কিত করতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, এই এলাকায় অতীতে কোন জাতীয় শ্রমিক লীগ, আশুলিয়া থানা কমিটির কোন অস্তিত্ব ছিল না বর্তমানেও নেই। আঞ্চলিক কমিটি যদি মনে করেন থানা কমিটি দেওয়া প্রয়োজন তাহলে এই কমিটি দেওয়ার ইখতিয়ার আঞ্চলিক কমিটির। জাতীয় শ্রমিক লীগ, আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার জানামত এই এলাকায় কোন থানা কমিটি ছিল না।

এব্যাপারে আশুলিয় থানার উপ-পরিদর্শক জসিম বলেন, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।