কথিত হত্যা ও লাশ গুমের শিকার রৌশন আরা বেগম রিক্তা নামে এক গৃহবধুকে ৯ বছর পর জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে গাইবান্ধা থানা পুলিশ। শুক্রবার ভোর রাতে রংপুর জেলার শালবন এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে আসামীদেরকে হয়রানি করার জন্য এ মামলা করা হয়েছে। আর উদ্ধার হওয়া গৃহবধু বলছে স্বামীর অত্যাচারে এতদিন পালিয়ে ছিলেন তিনি।
পুলিশ ও রিক্তার পরিবার জানায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার পশ্চিম কুপতলা গ্রামের পশ্চিম কুপতলা গ্রামের রফিকুল ইসলামের সাথে ১৯৯৭ সালে বিয়ে হয় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বজরা কঞ্চিবাড়ী এলাকার মৃত আব্দুর রহমান ভুইয়ার মেয়ে রওশন আরা বেগম রিক্তার। এ অবস্থায় ২০১১ সালের ২২ জুলাই রিক্তার বড় বোন মোছা মুক্তা বেগম গাইবান্ধা থানায় রফিকুল ইসলাম ও তার ভাই, ভাবি ও ছোট বোনসহ পরিবারের চারজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন(সংশোধনী/০৩) এর ১১(খ)/৭/৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই যৌতুকের জন্য রিক্তার উপর অত্যাচার করতে থাকে স্বামী রফিকুল ইসলাম ও শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। তারা যৌতুকের জন্য মারপিটও করে রিক্তাকে। মামলায় উল্লেখ করা হয় রিক্তা স্বামী ও ভাই, ভাবি ও ছোট বোন রিক্তাতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ গুম করেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক গাইবান্ধা থানার এসআই আব্দুল মজিদ ভিকটিমকে অপহরণ দেখিয়ে ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গাইবান্ধা থানার অভিযোগ নম্বর-৪২৬। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন কারাভোগ করতে হয় রিক্তার স্বামীসহ অন্য আসামীদের। কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে রফিকুল ইসলাম ও তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করে রিক্তার সন্ধান পায়না।
সম্প্রতি রফিকুল ইসলাম ও তার পরিবারের লোকজন গাইবান্ধা সদর থানায় এসে জানায় তাদের বিরুদ্ধে হয়রানী মুলক মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। তারা রিক্তাকে হত্যা বা গুম করেনি। রিক্তা রংপুরে কোন এক স্থানে আত্মগোপন করে আছে। বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) খান মো: শাহরিয়ার গাইবান্ধার পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলামকে জানান। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং কথিত আসামীদের সহযোগিতায় শুক্রবার ভোর রাতে রংপুরের শালবন এলাকা থেকে কথিত মৃত রিক্তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
রিক্তা জানায়, স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে সে এতদিন ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছে।
গাইবান্ধা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) খান মো: শাহরিয়ার বলেন, রৌশন আরা বেগম রিক্তা বর্তমানে গাইবান্ধা সদর থানায় পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। এ ব্যাপারে রিক্তাকে কথিত হত্যা ও গুমের মামলার অভিযোগ থেকে নির্দোষ ব্যক্তিদের মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা দায়ের করার অভিযোগে রিক্তার বড় বোন মোছা মুক্তা বেগমের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহনে পুলিশ কাজ করছে।