সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজিবপুরে দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:০৩:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই ২০২০
  • ২০৫ Time View

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামে মঙ্গলবার ডুবেছে জেলার রাজীবপুর উপজেলা । বুধবার রাতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে, সোনাভরি নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি, এক যোগে রৌমারী শহরে প্রবেশ করেছে। একাত্তরের মুক্তাঞ্চল খ্যাত রৌমারী এখন পানিতে টইটুম্বুর। হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢোকায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। এসব মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন নিরাপদ স্থানে।

রৌমারীর উপজেলার দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকৌশলী মেজবা উল আলম জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে বাঁধটির ২৫ মিটার অংশ পানির চাপে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটি কোনো শহর রক্ষা বাঁধ নয়। মুলত রৌমারীতে কোনো শহর রক্ষা বাঁধ নেই। সোনাভরি নদীর পানি উপচে যাতে ফসলের ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য এটি তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এটি রৌমারী উপজেলা সদরকে বন্যার হাত থেকে রক্ষার একমাত্র বাঁধ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রাখছে। এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাঁধটি সঠিক সময়ে সংস্কার করলে রৌমারী সদরের হাজার হাজার মানুষকে আজকের এই দুর্ভোগের মুখে পড়তে হতো না।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, বৃহষ্পতিবার ভোর থেকে রৌমারীতে পানি ঢুকতে  শুরু করেছে। তার এলাকায় প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি। ডুবে গেছে উপজেলা পরিষদ চত্বর, সম্পূর্ণ বাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বিভিন্ন উঁচু সড়ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রিত মানুষরা বলেছেন , তাদের খাদ্যের চেয়ে জরুরি দরকার বিশুদ্ধ পানি  আর ল্যাট্রিন। নির্বাহী অফিসার আরও বলেন, তিনি দূর্গতের জন্য ইতিমধ্যে ৫০ টি নলকুপ ও ৫০টি অস্থায়ী ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করেছেন। ৫ টন চিড়া ও ৪০০ কেজি চিনি বিতরণ শুরু করেছেন।

রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবীরুল ইসলাম জানান, তার উপজেলার ৫৬ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ৩০ হাজার মানুষই পানিবন্দি। প্লাবিত মানুষজনের মাঝে পানীয় জল ল্যাট্রিনের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে একটু একটু করে পানি কমছে।


এদিকে জেলার আড়াই লাখ পানিবন্দি, ও বিভিন্ন রাস্তায় আশ্রয় নেয়া মানুষের মাঝে পানিয় জল ও খাদ্য সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ বিতরণ শুরু হলেও তা মানুষের সংখ্যা অনুপাতে একেবারেই নগন্য। বেসরকারি কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি উদ্যোগেও এবার বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণের ছিটেফোটাও বিতরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে না।

গত ১৫ জুলাই জেলার উলিপুরের বন্যাকবলিত এলাকা থেকে শুরু করে চিলমারী উপজেলার কাঁচকোল স্লুইসগেট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তায় আশ্রয় নেয়া বন্যা কবলিত মানুষজনের সাথে কথা হয়। দুই দফা বণ্যায় তারা প্রায় ২২ দিন ধরে রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে আছেন। কিন্তু কোনো জনপ্রনিধি একদিনের জন্য তাদের খোঁজ নিতে আসেন নাই। এমনকি সরকারি ত্রাণের একটি দানাও তাদের ভাগ্যে জোটেনি বলে তারা অভিযোগ করেন।

এদিকে ধরলার পানি কমতে শুরু করায়, নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। কুড়িগ্রাম ভূরুঙ্গামারী সড়কে ওঠা পানি নেমে গেছে। তবে এখনো বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ধরলা নদীর পানি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, তিস্তার পানি বিপদ সীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও তীব্র ভাঙ্গনে নদীর পাড়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে । তবে ব্রহ্মপুত্রে গত ২৪ ঘন্টায় মাত্র ৫ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। এখনো ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি । ফলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে ।

বৃহষ্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৯ উপজেলার জন্য ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জানিয়েছেন, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দীলিপ কুমার সাহা। এতে প্রতি উপজেলার ভাগে পড়ে ২২২ প্যাকেট। তবে সেগুলো এখনো বিতরণ শুরু করা হয়নি বলে জানা গেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

MD ZANNATUL FERDOUSH

NEWS PURPOSE
Popular Post

গাইবান্ধায় বিরোধ নিষ্পত্তি করতে গিয়ে ইউপি সদস্য খুন

কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজিবপুরে দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ

Update Time : ০৮:০৩:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই ২০২০

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামে মঙ্গলবার ডুবেছে জেলার রাজীবপুর উপজেলা । বুধবার রাতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে, সোনাভরি নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি, এক যোগে রৌমারী শহরে প্রবেশ করেছে। একাত্তরের মুক্তাঞ্চল খ্যাত রৌমারী এখন পানিতে টইটুম্বুর। হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢোকায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। এসব মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন নিরাপদ স্থানে।

রৌমারীর উপজেলার দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকৌশলী মেজবা উল আলম জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে বাঁধটির ২৫ মিটার অংশ পানির চাপে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটি কোনো শহর রক্ষা বাঁধ নয়। মুলত রৌমারীতে কোনো শহর রক্ষা বাঁধ নেই। সোনাভরি নদীর পানি উপচে যাতে ফসলের ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য এটি তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এটি রৌমারী উপজেলা সদরকে বন্যার হাত থেকে রক্ষার একমাত্র বাঁধ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রাখছে। এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাঁধটি সঠিক সময়ে সংস্কার করলে রৌমারী সদরের হাজার হাজার মানুষকে আজকের এই দুর্ভোগের মুখে পড়তে হতো না।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, বৃহষ্পতিবার ভোর থেকে রৌমারীতে পানি ঢুকতে  শুরু করেছে। তার এলাকায় প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি। ডুবে গেছে উপজেলা পরিষদ চত্বর, সম্পূর্ণ বাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বিভিন্ন উঁচু সড়ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রিত মানুষরা বলেছেন , তাদের খাদ্যের চেয়ে জরুরি দরকার বিশুদ্ধ পানি  আর ল্যাট্রিন। নির্বাহী অফিসার আরও বলেন, তিনি দূর্গতের জন্য ইতিমধ্যে ৫০ টি নলকুপ ও ৫০টি অস্থায়ী ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করেছেন। ৫ টন চিড়া ও ৪০০ কেজি চিনি বিতরণ শুরু করেছেন।

রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবীরুল ইসলাম জানান, তার উপজেলার ৫৬ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ৩০ হাজার মানুষই পানিবন্দি। প্লাবিত মানুষজনের মাঝে পানীয় জল ল্যাট্রিনের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে একটু একটু করে পানি কমছে।


এদিকে জেলার আড়াই লাখ পানিবন্দি, ও বিভিন্ন রাস্তায় আশ্রয় নেয়া মানুষের মাঝে পানিয় জল ও খাদ্য সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ বিতরণ শুরু হলেও তা মানুষের সংখ্যা অনুপাতে একেবারেই নগন্য। বেসরকারি কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি উদ্যোগেও এবার বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণের ছিটেফোটাও বিতরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে না।

গত ১৫ জুলাই জেলার উলিপুরের বন্যাকবলিত এলাকা থেকে শুরু করে চিলমারী উপজেলার কাঁচকোল স্লুইসগেট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তায় আশ্রয় নেয়া বন্যা কবলিত মানুষজনের সাথে কথা হয়। দুই দফা বণ্যায় তারা প্রায় ২২ দিন ধরে রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে আছেন। কিন্তু কোনো জনপ্রনিধি একদিনের জন্য তাদের খোঁজ নিতে আসেন নাই। এমনকি সরকারি ত্রাণের একটি দানাও তাদের ভাগ্যে জোটেনি বলে তারা অভিযোগ করেন।

এদিকে ধরলার পানি কমতে শুরু করায়, নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। কুড়িগ্রাম ভূরুঙ্গামারী সড়কে ওঠা পানি নেমে গেছে। তবে এখনো বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ধরলা নদীর পানি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, তিস্তার পানি বিপদ সীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও তীব্র ভাঙ্গনে নদীর পাড়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে । তবে ব্রহ্মপুত্রে গত ২৪ ঘন্টায় মাত্র ৫ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। এখনো ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি । ফলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে ।

বৃহষ্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৯ উপজেলার জন্য ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জানিয়েছেন, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দীলিপ কুমার সাহা। এতে প্রতি উপজেলার ভাগে পড়ে ২২২ প্যাকেট। তবে সেগুলো এখনো বিতরণ শুরু করা হয়নি বলে জানা গেছে।