স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ এখন বন্যা কবলিত। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চারটি উপজেলায় এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৬ হেক্টর জমির পাট, আমন বীজতলা, আউশ ধান ও শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
এদিকে পানিবন্দী পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। ফলে ওইসব মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার ও জ্বালানির অভাবে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার অনেকে ইতোমধ্যে বাড়িঘর ছেড়ে গরু-ছাগল নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ও উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে বাঁধে ও উঁচু স্থানে আশ্রিত গবাদি পশুরও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের ভাষারপাড়া, মধ্য কঞ্চিপাড়া ও মাঝিপাড়া এলাকায় বানভাসি প্রায় দেড় হাজার পরিবার নতুন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। কথা হয় ভাষারপাড়া গ্রামের সাইদুলের স্ত্রী ববিতা বেগমের সাথে। তার তিন মেয়ে নিয়ে বাঁধে পলিথিনের ডেরা তুলে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। এ ছাড়া সামছুলের ছেলে লিটন, আমিনুলের স্ত্রী কণা বেগম, হায়দারের স্ত্রী ইছারন বেগম, আব্দুল কাদেরের স্ত্রী মমতাজ বেগমের একই অবস্থা। তারা জানান, গত ২৬ জুন থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত দুই দফা বন্যায় তারা বাঁধে পলিথিনের ডেরা তুলে বসবাস করলেও সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন ত্রাণ সামগ্রী পাননি। কোন চেয়ারম্যান-মেম্বার তাদের খোঁজ নেন নাই। এমনকি জনস্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল কিংবা অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করে না দেওয়ায় মহিলা ও কিশোরীরা বিপাকে পড়েছেন। এখন পর্যন্ত সেখানে স্বাস্থ্য বিভাগের কাউকে দেখা যায়নি বলে বাঁধে আশ্রিতরা জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১১৮ সে.মি. এবং ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ৯৩ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এদিকে বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষদের জন্য ২১০ মেট্রিক টন চাল, ৩ হাজার ৬০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, খয়রাতি সাহায্য হিসেবে সাড়ে ১৪ লাখ টাকা ও শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা সরকারি ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।