বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাইবান্ধায় দ্বিতীয় দফা বন্যা, নদী ভাঙন বাড়ছে

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:৩৩:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০
  • ১৭১ Time View

স্টাফ রিপোর্টারঃ  গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদ ও তিস্তা নদীতে পানি হু হু করে বাড়ছে। গেল ৩৬ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ২৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, তিস্তার পানি ৩১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

এছাড়া ঘাঘট নদীর পানি ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে করতোয়া নদীর পানি ১৭ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এসব নদ-নদীর পানি প্রথম দফা গেল ২৬ জুন থেকে বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও দুই জুলাই থেকে কমতে শুরু করে। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ৯ জুলাই থেকে আবারও পানি বাড়তে থাকে।

ফলে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদীবেষ্টিত গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৫৫টি চরে নতুন করে দ্বিতীয় দফা বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।

দ্বিতীয় দফা বন্যায় আবারও তলিয়ে গেছে গাইবান্ধা-বালাসীঘাট সড়কের মধ্য কঞ্চিপাড়া এলাকা। প্রথম বন্যার পানি বাড়ি ঘর থেকে না নামতেই নতুন করে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দেওয়ায় ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভেতরে নতুন রিং বাঁধে ঘেরা ভাষারপাড়া, মধ্য কঞ্চিপাড়া, সৈয়দপুর এলাকার শত শত পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।

সেখানে বিশুদ্ধ পানি ও পয় নিষ্কাশন সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নারীরা বেশি সমস্যায় রয়েছেন। বাঁধে আশ্রিত বানভাসি মানুষের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে টিউবওয়েল স্থাপন ও অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণের দাবি করেছে ভুক্তভোগীরা।

অন্যদিকে নদ-নদীর ভাঙনে প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারাচ্ছে শত শত পরিবার। ব্রহ্মপুত্র নদ, তিস্তা, যমুনা বাঙালি নদীর ভাঙনে সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম সরকার জানান, গেল এক সপ্তাহে তিস্তা নদীর ভাঙনে কাপাসিয়া ইউনিয়নের কালাই সোতারচরের ১০০ পরিবার, উজান বুড়াই গ্রামের ১৫০ পরিবার, পশ্চিম লালচামার এলাকার ৫০টি পরিবার নদী ভাঙনে বসতভিটা ও আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে।

এছাড়া হরিপুর ও শ্রীপুর ইউনিয়নে ব্যাপক তিস্তার ভাঙন শুরু হয়েছে। নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো বিভিন্ন বাঁধ, উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। কেউবা বসতবাড়ি হারিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও দিনাজপুর এলাকায় পাড়ি জমিয়েছে।

অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন দেখা দেওয়ায় সদর উপজেলার কামারজানি ও গিদারী ইউনিয়ন, ফুলছড়ি উপজেলার এড়েন্ডাবাড়ি এবং সাঘাটা উপজেলার ভারতখালী ও যমুনার ভাঙনে সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে।

সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। সেখানে হুমকিতে রয়েছে আশপাশের পাঁচ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি ও আবাদি জমি। স্থানীয়রা ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। কাঁটাখালী (বাঙ্গালী) নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বালুয়া ও বোচাদহ এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান জানান, ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নদী ভাঙন এলাকায় অস্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজ করা হচ্ছে।

 এর মধ্যে সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নে ১০০ মিটার এলাকায়, ফুলছড়ি উপজেলার এড়ন্ডাবাড়ী ইউনিয়নে ৪০০ মিটার, সাঘাটা উপজেলার ভারতখালী ইউনিয়নের বরনতাইর এলাকায় ২০০ মিটার, হলদিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকায় ১৬০ মিটার এলাকায়, কাঁটাখালী (বাঙ্গালী) নদীর ভাঙন রোধে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বালুয়া এলাকায় ২২০ মিটার ও বোচাদহে ২০০ মিটার এলাকায় নদী ভাঙন রোধে অস্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজ চলছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, এছাড়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলার লালচামার, হরিপুর ও শ্রীপুর ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙন রোধের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু নদীর পানি বেশি থাকায় সেখানে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। শিগগিরই সেখানে কাজ শুরু করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

MD ZANNATUL FERDOUSH

NEWS PURPOSE
Popular Post

তেঁতুলিয়ায় ক্ল ুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন, বীরগঞ্জ থেকে আসামি আটক

গাইবান্ধায় দ্বিতীয় দফা বন্যা, নদী ভাঙন বাড়ছে

Update Time : ০৯:৩৩:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০

স্টাফ রিপোর্টারঃ  গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদ ও তিস্তা নদীতে পানি হু হু করে বাড়ছে। গেল ৩৬ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ২৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, তিস্তার পানি ৩১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

এছাড়া ঘাঘট নদীর পানি ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে করতোয়া নদীর পানি ১৭ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এসব নদ-নদীর পানি প্রথম দফা গেল ২৬ জুন থেকে বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও দুই জুলাই থেকে কমতে শুরু করে। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ৯ জুলাই থেকে আবারও পানি বাড়তে থাকে।

ফলে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদীবেষ্টিত গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৫৫টি চরে নতুন করে দ্বিতীয় দফা বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।

দ্বিতীয় দফা বন্যায় আবারও তলিয়ে গেছে গাইবান্ধা-বালাসীঘাট সড়কের মধ্য কঞ্চিপাড়া এলাকা। প্রথম বন্যার পানি বাড়ি ঘর থেকে না নামতেই নতুন করে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দেওয়ায় ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভেতরে নতুন রিং বাঁধে ঘেরা ভাষারপাড়া, মধ্য কঞ্চিপাড়া, সৈয়দপুর এলাকার শত শত পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।

সেখানে বিশুদ্ধ পানি ও পয় নিষ্কাশন সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নারীরা বেশি সমস্যায় রয়েছেন। বাঁধে আশ্রিত বানভাসি মানুষের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে টিউবওয়েল স্থাপন ও অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণের দাবি করেছে ভুক্তভোগীরা।

অন্যদিকে নদ-নদীর ভাঙনে প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারাচ্ছে শত শত পরিবার। ব্রহ্মপুত্র নদ, তিস্তা, যমুনা বাঙালি নদীর ভাঙনে সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম সরকার জানান, গেল এক সপ্তাহে তিস্তা নদীর ভাঙনে কাপাসিয়া ইউনিয়নের কালাই সোতারচরের ১০০ পরিবার, উজান বুড়াই গ্রামের ১৫০ পরিবার, পশ্চিম লালচামার এলাকার ৫০টি পরিবার নদী ভাঙনে বসতভিটা ও আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে।

এছাড়া হরিপুর ও শ্রীপুর ইউনিয়নে ব্যাপক তিস্তার ভাঙন শুরু হয়েছে। নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো বিভিন্ন বাঁধ, উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। কেউবা বসতবাড়ি হারিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও দিনাজপুর এলাকায় পাড়ি জমিয়েছে।

অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন দেখা দেওয়ায় সদর উপজেলার কামারজানি ও গিদারী ইউনিয়ন, ফুলছড়ি উপজেলার এড়েন্ডাবাড়ি এবং সাঘাটা উপজেলার ভারতখালী ও যমুনার ভাঙনে সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে।

সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। সেখানে হুমকিতে রয়েছে আশপাশের পাঁচ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি ও আবাদি জমি। স্থানীয়রা ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। কাঁটাখালী (বাঙ্গালী) নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বালুয়া ও বোচাদহ এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান জানান, ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নদী ভাঙন এলাকায় অস্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজ করা হচ্ছে।

 এর মধ্যে সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নে ১০০ মিটার এলাকায়, ফুলছড়ি উপজেলার এড়ন্ডাবাড়ী ইউনিয়নে ৪০০ মিটার, সাঘাটা উপজেলার ভারতখালী ইউনিয়নের বরনতাইর এলাকায় ২০০ মিটার, হলদিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকায় ১৬০ মিটার এলাকায়, কাঁটাখালী (বাঙ্গালী) নদীর ভাঙন রোধে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বালুয়া এলাকায় ২২০ মিটার ও বোচাদহে ২০০ মিটার এলাকায় নদী ভাঙন রোধে অস্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজ চলছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, এছাড়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলার লালচামার, হরিপুর ও শ্রীপুর ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙন রোধের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু নদীর পানি বেশি থাকায় সেখানে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। শিগগিরই সেখানে কাজ শুরু করা হবে।