
তৈয়বুর রহমান, কুড়িগ্রাম থেকে
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস’র হাত থেকে বেঁচে গেলেন তাজুল ইসলাম (৩২)। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুরের নয়ার হাট এলাকায় । হোম আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তিন দফা নমুনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ হওয়ায় করোনা ভাইরাস তার কাছে পরাজিত হয়েছে বলে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায় ।
আজ সুস্থ হয়ে ওঠা তাজুল ইসলাম হাস্যোজ্জ্বল মুখে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের জানান, হোম আইসোলেশনে থাকা, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা, দুই প্রকার ঔষধ সেবন এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে সুস্থ্য হয়ে আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি । সুস্থ হলেও স্বাস্থ্য বিভাগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত হোম আইসোলেশনে থাকতে হবে । অাজ (২ মে) শনিবার বিকাল ৪টায় তাজুল ইসলামকে ফুলবাড়ী হাসপাতাল থেকে বের করে খোলা আকাশের নীচে নিয়ে আসলে উপস্থিত লোকজনের সামনে হাস্যজ্জল তাজুল কার্যতঃ উল্লাস প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য ঢাকার নারায়নগঞ্জের একটি কোম্পনীতে চাকুরীরত অবস্থায় গত ৫ এপ্রিল বাড়ীতে ফেরেন তাজুল ইসলাম । ঐদিন রাতেই তার জ্বর আসে । জ্বর বেড়ে যাওয়ায় ১২ এপ্রিল তিনি নমুনা পরীক্ষা করতে দেন এবং ১৪ এপ্রিল তার করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয় এবং সে ধরে নেয় তার মৃত্যু অনিবার্য। তাজুল জানান, তার জ্বর ও কাশি থাকলেও গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট ছিল না। করোনা পজেটিভ শনাক্ত হওয়ার পর ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা তাকে আইসোলেশনে রাখেন। সেখানে প্রতিদিন সকালে ও রাতে একটি করে অ্যান্টিবায়োটিক জি ম্যাক্স এবং ৩ বেলা তিনটি নাপা, কোনো কোনোদিন ৪টি নাপাও খেয়েছেন জানান তাজুল । এছাড়াও দিনে ২/৩ বার গরম পানির বাষ্প নাকে-মুখে টানতেন। গরম পানির ভাপ নিলে কাশি কমে যেতো, শরীরও ভালো লাগতো । পরিবারের সদস্যদের কাউকেই আমার কাছে আসতে দেয়নি । ৬ ফুট দূরত্বে থেকে পরিবারের সদস্যরা আমাকে খাবার দিতো। তাজুল আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন,’‘আল্লাহ যদি হেফাজত না করে তাহলে বাঁচার কোনো উপায় নেই। অসুস্থ্য থাকা অবস্থায় আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করেছি, আল্লাহ তুমি আমার জীবনটা নিয়েও যদি পরিবারের সদস্যদের সুস্থ্য রাখো তাহলে আমি খুশি। সবসময় দোয়া করেছি- আমার পরিবারের সবাই যেন সুস্থ্য থাকে।’
তাজুল বলেন, ‘‘যখন করোনা পজেটিভ ছিল, তখন মনে হতো দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবো। জীবনে কোথায় কোথায় ভুল ছিল সেগুলোর ব্যাপারে তওবা পড়েছি। যদি বেঁচে যাই তাহলে অতীতে কোনো ভুল করে থাকলে তা আর ভবিষ্যতে করব না বলে মনস্থির করি। মোবাইলে আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিত জনদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছি । তারা সবাই আমার জন্য দোয়া করেছেন।’” এজন্যই আল্লাহ আমাকে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা করেছেন। করোনা আক্রান্তের শুরুর ঘটনা বলতে গিয়ে তাজুল বলেন, এক সন্তান ও স্ত্রী একসাথেই ছিলাম। স্ত্রী ও আমি এক খাটেই ঘুমাতাম। শশ্বর বাড়ী হাটবাজার করাটা আমার চরম ভুল ছিল। ভয়ে ছিলাম আমার কারণে পরিবারের অন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হয়েছে কিনা। পরিবারের সবাইকে কি মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলাম ? যখন পরিবারের ৯জন সদস্যের নমুনা পরীক্ষার পর করোনা নেগেটিভ আসে তখন আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। আল্লাহ অনেক রহমত করেছে।’
যারা আক্রান্ত হয়েছে কিংবা হয়নি, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?-এ প্রশ্নের উত্তরে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার পরামর্শ হচ্ছে-সবচেয়ে বড় কথা তায়াকালতু আল্লাহ। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে, এবং স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে না পারে’’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ সামছুনাহার জানান, আইসোলেশন ওয়ার্ডে তিনজন চিকিৎসকসহ ১৫ জন দায়িত্ব পালন করছে । তারা তাজুল ইসলামের প্রতিদিন খোজ খবর নিতেন । তাজুল ইসলামকে ১৬ মে পর্যন্ত হোম আইসোলেশনে থাকার জন্য পরমার্শ ও সাথে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে ।