খোঁজ খবর ডেস্কঃ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১ জনে দাঁড়িয়েছে। সিএএ সমর্থক ও বিরোধীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দিল্লি।
সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে মঙ্গলবার বৈঠক ডাকেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দুপুরে ওই বৈঠকে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ পুলিশ প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা। বৈঠকে সেনা নামানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখনই প্রয়োজন না হলেও সেনা নামানোর রাস্তাও খোলা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং গুজবে কান না দেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হওয়ায় উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এনডিটিভি জানায়, সোমবারের সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার সকালেও অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ ব্যাপক সহিংসতা অব্যাহত আছে। নজিরবিহীন এ সহিংসতায় এক পুলিশসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। আরও ১০০ জন আহত হয়। আহত ৪৮ পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার থেকে প্রায় গোটা উত্তর-পূর্ব দিল্লিজুড়েই ১৪৪ ধারা করা হয়েছিল। মঙ্গলবারও তা অব্যাহত ছিল। কিন্তু কারফিউ উপেক্ষা করেই মঙ্গলবার যেভাবে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে, তাতে উদ্বেগ বেড়েছে দিল্লি পুলিশের।
পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। অবশেষে সন্ধ্যার দিকে সবচেয়ে উত্তেজনা প্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দিল্লিতে উপস্থিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সহিংসতা শুরু হয়। মঙ্গলবার বিভিন্ন বৈঠক ও আলোচনায় দিল্লিতে ব্যস্ত সময় পার করেন ট্রাম্প।
তার উপস্থিতিতেই শহরটির উত্তর-পূর্ব মৌজপুরসহ কয়েকটি এলাকায় সিএএ সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের পাল্টাপাল্টি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। মৌজপুরে একটি ইজিবাইক ভাংচুর করে যাত্রীদের মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে হামলাকারীরা।
বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু জরুরি কল আসার কথা জানায় দিল্লির দমকল বিভাগ। এমন একটি কলে সাড়া দিতে গিয়ে হামলার শিকার হন দমকল কর্মীরা। হামলাকারীরা দমকলের একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় ও আরেকটি গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে। এতে তিন দমকল কর্মী আহত হন।
এক বিবৃতিতে দিল্লি পুলিশ পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত উত্তেজনাকর’ বলে বর্ণনা করেছে। উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকা থেকে সহিংসতার কথা জানিয়ে একের পর এক ফোন আসছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন তারা।
হতাহতের ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল চলমান সহিংসতাকে ‘অত্যন্ত পীড়াদায়ক’ বলে বর্ণনা করেছেন।
দিল্লির মেট্রো কর্তৃপক্ষ জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবরপুর, গোকুলপুরি, জোহরি এনক্লেভ ও শিব বিহার স্টেশন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করে বড় ধরনের জনসমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন।
দিল্লি জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেয়ায় দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের আশপাশেও ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।