
খোঁজ খবর ডেস্কঃ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এমনি এক রহস্যময় তরুণীকে আটক করা হয়েছে। নাম তার শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ (২৮)। গোপনে দেশত্যাগের সময় র্যাব আটক করা হয়। আটকের পরই এমন সব বিস্ময়কর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যা শুনে কৌতুহলী হয়ে উঠেছেন গণমাধ্যমকর্মীসহ সাধারণ মানুষ।
বাংলাদেশে এই তরুণীর প্রতিদিনের মদের বিল আড়াই লাখ টাকা! বিলাসবহুল হোটেলে হোটেলে থাকেন। মাসে মাসে কোটি কোটি টাকা বিল পরিশোধ করেন। গত তিন মাসের হোটেল ভাড়া বাবদ পরিশোধ করেন এক দেড় কোটি টাকা! কোথা থেকে আসে এতো টাকা? কী করেন তিনি? কী-ই বা তার পেশা?
পিউ নামের সেই তরুণীর আয়কর হিসেবের সঙ্গে তার জীবন যাত্রার ব্যয়ের কোনোই মিল নেই। রাজধানীর তেজগাঁও এফডিসি গেট সংলগ্ন এলাকায় তার কার একচেঞ্জ নামে গাড়ির শোরুম ও নরসিংদীতে কেএমসি কার ওয়াস এন্ড অটো সলিউশন নামে একটি গাড়ি সার্ভিসিং সেন্টার রয়েছে। কিন্তু এই দুই উৎস থেকে কি কোটি কোটি টাকা আয় করেন?
যদি এসব ব্যবসায়ই করে থাকেন তাহলে মাসের বেশিরভাগ সময় কেন বিলাসবহুল হোটেলে হোটেলে থাকতে হয়? কেনই বা তাকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মদের বিল পরিশোধ করতে হয়। কাদের জন্য মদের বিল দেন, বিলাস বহুল হোটেলে কার সঙ্গে কথা বলেন?
র্যাবের হাতে আটক হওয়ার পর পিউয়ের সঙ্গে ছিলেন তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮)। ছিলেন সহযোগী সাবিক্ষর খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)। তাদেরও আটক করেছে র্যাব। আর তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সাতটি পাসপোর্ট, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার দেশি জাল নোট, ১১ হাজার ৯১ ইউএস ডলার ও ৭ টি মোবাইল ফোন।
বিকেলে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ওই তরুণী সম্পর্কে অনেক তথ্য তুলে ধরেছেন র্যাব কর্মকর্তারা। র্যাব-১ এর কমান্ডিং অফিসার শাফী উল্লাহ বুলবুল জানালেন, গাড়ির শোরুম আর সার্ভিসিং ব্যবসার আড়ালে পিউ অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন নারী ঘটিত অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। সমাজ সেবার নামে নরসিংদী এলাকায় অসহায় নারীদের আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনৈতিক কাজে লিপ্ত করে।
শাফী উল্লাহ বুলবুল আরো জানান, বছরের অধিকাংশ সময় বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করেন শামিমা নূর পাপিয়া। সেখানেই অনৈতিক কাজে নারী সবরবরাহ করেন। তার কাছ থেকে সাতজন নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে। যারা মাসিক ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে তার নির্দেশে অনৈতিক কাজ করতেন।
আয়কর নথি অনুসারে ওই তরুণীর বাৎসরিক আয় ১৯ লাখ টাকা হলেও গেল তিন মাসে দেশের খ্যাতনামা বিলাসী ওয়েস্টিন হোটেলে তার নামে বিল শোধ করা হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সেখানকার প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে থাকতেন। আর সেখানেই অনৈতিক কাজ হতো। প্রতিদিনের মদের বিল বাবদ তিনি প্রায় আড়াই লাখ টাকা করে পরিশোধ করেছেন।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই দ্রুতই তিনি নংসিংদী, ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লটসহ বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের মালিক হয়েছেন। তার নারী ঘটিত সিন্ডিকেটের বিষয়ে র্যাব আরো তদন্ত করছে। তার আয়ের অসঙ্গতিগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখবে বলে জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গোপনে দেশত্যাগের সময় শামিমাকে আটক করা হয়।