বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষাকে মূলব্রত হিসেবে নিয়েছে নেত্রকোনার উপজাতি জনগোষ্ঠী

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:৫২:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • ২০৩ Time View

নেত্রকোনা প্রতিনিধিঃ অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী, আত্ম-নির্ভরশীল ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে শিক্ষাকে মূল ব্রত হিসেবে নিয়েছে নেত্রকোনা ক্ষুদ্র নৃ-তাত্তিক জনগোষ্ঠী।

নেত্রকোনা জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর-কলমাকান্দায় বাঙ্গালীদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-তাত্তিক জনগোষ্ঠী বসবাস করে আসছে। স্বাধীনতার পূর্বে এ অঞ্চলে বসবাসরত গারো, হাজং, বানাই ও হদি সম্প্রদায়ের লোকজন পাহাড়ে জুম চাষ ও সমতল ভূমিতে কৃষি কাজ করার পাশাপাশি পাহাড় থেকে লাকড়ি এবং বিভিন্ন নদ-নদী ও জলাশয় থেকে কাসিম ও কুচিয়া ধরে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। স্বাধীনতার পর ক্ষুদ্র নৃ-তাত্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড, খ্রীষ্টান মিশনারীজ ও ওয়ার্ল্ড ভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার নানাবিদ কার্যক্রমের ফলে তারা এদেশের মূল স্্েরাতের সাথে মিশে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গারো ও হাজং সম্প্রদায় শিক্ষাকে তাদের আত্ম-নির্ভরশীল, অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের মূল ব্রত হিসেবে নিয়েছে।
সরজমিনে দূর্গাপুর উপজেলার দূর্গাপুর, বিরিশিরি, কালচারাল একাডেমী, বিজয়পুর ও কুল্লাগড়া ইউনিয়নে বসবাসরত উপজাতিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা আর কোনভাবেই পিছিয়ে থাকতে চায় না। তাদের একটাই লক্ষ্য প্রতিটি সন্তানকে ভাল ভাবে লেখা পড়া শিখিয়ে সরকারী চাকুরীর পাশাপাশি নিজেদেরকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলা।
গোপালপুর গ্রামের নিরঞ্জন হাজং বলেন, আমরা লেখাপড়া করতে পারিনি বলে, মাঠে ঘাটে কৃষি কাজ করে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করে এসেছি। কষ্ট হলেও আমি আমার এক ছেলে ও দুই মেয়েকে খেলাপড়া করাচ্ছি। যাতে তারা উন্নত জীবন যাপন করতে পারে।
মার্টিন নকরেক বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েদের মধ্যে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশী শিক্ষা ধিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে। স্কুল কলেজের গন্ডি পেড়িয়ে তারা এখন উচ্চ শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে। এখন তাদের একটাই লক্ষ্য সমাজের সব সেক্টরে নিজেদের অবস্থানকে ক্রমশঃ সু-দৃঢ় করা।
কুল্লাগড়া গ্রামের জুয়েল আরেং বলেন, খ্রীষ্টান মিশনারীজের সহযোগিতায় দূর্গাপুর-কলমাকান্দা উপজেলায় বসবাসরত বেশীর ভাগ আদিবাসীই তাদের সন্তানদের লেকাপড়া করাচ্ছে। অনেকেই উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে ভাল ভাল পদে চাকুরী করছে।
বিরিশিরি কালচারাল একাডেমীর উপ-পরিচালক বলেন, গারো-হাজংদের রাজধানী হিসেবে খ্যাত দুর্গাপুর-কলমাকান্দা উপজেলায় প্রায় অর্ধ লক্ষ উপজাতির বসবাস। তারা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে রক্ষার পাশাপাশি লেখাপড়াকে তাদের মূল ব্রত হিসেবে নিয়েছে। বর্তমান সরকার শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয় মুখী করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার পরও যখন ৭০ ভাগের বেশী শিশু বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না সেখানে উপজাতি জনগোষ্ঠীর প্রায় শতভাগ শিশু বিদ্যালয়ে যাচ্ছে।
বিরিশিরি কালচারাল একাডেমীর পরিচালক শরবিন্দু সরকার স্বপন হাজং বলেন, এ অঞ্চলে গারো সম্প্রদায়ের লোকজন প্রায় শতভাগ এবং হাজং সম্প্রদায়ের লোকজন প্রায় ৬০ ভাগ লোক শিক্ষিত। তারা শিক্ষাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী, আত্ম-নির্ভরশীল ও তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে জীবনের একমাত্র ব্রত হিসেবে গ্রহন করেছে। এছাড়াও গারো হাজংরা তাদের নিজস্ব মাতৃভাষাকে ধরে রাখার লক্ষ্যে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে।
রানীখং মিশনের ফাদার নীলুস এস রিছিল বলেন, দুর্গাপুর-কলমাকান্দায় বাঙ্গালীদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-তাত্তিক জনগোষ্ঠীর লোকজন লেখাপড়ার পাশাপাশি নির্বিঘেœ তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ধর্মকর্ম পালন করে আসছে। এখানে কেউ কারো ধর্ম কর্ম পালনে বাঁধা দেয় না। গারো সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব ওয়ানগালা এবং হাজংদের প্রধান উৎসব দেউলী উৎসবে সকলের আনন্দ উপভোগ করে আসছে।
গারো-হাজং সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রত্যাশা, গারো ও হাজং সম্প্রদায়ের লোকজন যাতে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সরকারী চাকুরীর পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশের মূল ¯শ্রোতে প্রবেশ করতে পারে তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আরো বেশী উন্নয়ন পদক্ষেপ নেয়ার জোর দাবী জানান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

MD ZANNATUL FERDOUSH

NEWS PURPOSE
Popular Post

গাইবান্ধায় বিরোধ নিষ্পত্তি করতে গিয়ে ইউপি সদস্য খুন

শিক্ষাকে মূলব্রত হিসেবে নিয়েছে নেত্রকোনার উপজাতি জনগোষ্ঠী

Update Time : ০৪:৫২:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০

নেত্রকোনা প্রতিনিধিঃ অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী, আত্ম-নির্ভরশীল ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে শিক্ষাকে মূল ব্রত হিসেবে নিয়েছে নেত্রকোনা ক্ষুদ্র নৃ-তাত্তিক জনগোষ্ঠী।

নেত্রকোনা জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর-কলমাকান্দায় বাঙ্গালীদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-তাত্তিক জনগোষ্ঠী বসবাস করে আসছে। স্বাধীনতার পূর্বে এ অঞ্চলে বসবাসরত গারো, হাজং, বানাই ও হদি সম্প্রদায়ের লোকজন পাহাড়ে জুম চাষ ও সমতল ভূমিতে কৃষি কাজ করার পাশাপাশি পাহাড় থেকে লাকড়ি এবং বিভিন্ন নদ-নদী ও জলাশয় থেকে কাসিম ও কুচিয়া ধরে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। স্বাধীনতার পর ক্ষুদ্র নৃ-তাত্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড, খ্রীষ্টান মিশনারীজ ও ওয়ার্ল্ড ভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার নানাবিদ কার্যক্রমের ফলে তারা এদেশের মূল স্্েরাতের সাথে মিশে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গারো ও হাজং সম্প্রদায় শিক্ষাকে তাদের আত্ম-নির্ভরশীল, অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের মূল ব্রত হিসেবে নিয়েছে।
সরজমিনে দূর্গাপুর উপজেলার দূর্গাপুর, বিরিশিরি, কালচারাল একাডেমী, বিজয়পুর ও কুল্লাগড়া ইউনিয়নে বসবাসরত উপজাতিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা আর কোনভাবেই পিছিয়ে থাকতে চায় না। তাদের একটাই লক্ষ্য প্রতিটি সন্তানকে ভাল ভাবে লেখা পড়া শিখিয়ে সরকারী চাকুরীর পাশাপাশি নিজেদেরকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলা।
গোপালপুর গ্রামের নিরঞ্জন হাজং বলেন, আমরা লেখাপড়া করতে পারিনি বলে, মাঠে ঘাটে কৃষি কাজ করে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করে এসেছি। কষ্ট হলেও আমি আমার এক ছেলে ও দুই মেয়েকে খেলাপড়া করাচ্ছি। যাতে তারা উন্নত জীবন যাপন করতে পারে।
মার্টিন নকরেক বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েদের মধ্যে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশী শিক্ষা ধিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে। স্কুল কলেজের গন্ডি পেড়িয়ে তারা এখন উচ্চ শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে। এখন তাদের একটাই লক্ষ্য সমাজের সব সেক্টরে নিজেদের অবস্থানকে ক্রমশঃ সু-দৃঢ় করা।
কুল্লাগড়া গ্রামের জুয়েল আরেং বলেন, খ্রীষ্টান মিশনারীজের সহযোগিতায় দূর্গাপুর-কলমাকান্দা উপজেলায় বসবাসরত বেশীর ভাগ আদিবাসীই তাদের সন্তানদের লেকাপড়া করাচ্ছে। অনেকেই উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে ভাল ভাল পদে চাকুরী করছে।
বিরিশিরি কালচারাল একাডেমীর উপ-পরিচালক বলেন, গারো-হাজংদের রাজধানী হিসেবে খ্যাত দুর্গাপুর-কলমাকান্দা উপজেলায় প্রায় অর্ধ লক্ষ উপজাতির বসবাস। তারা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে রক্ষার পাশাপাশি লেখাপড়াকে তাদের মূল ব্রত হিসেবে নিয়েছে। বর্তমান সরকার শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয় মুখী করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার পরও যখন ৭০ ভাগের বেশী শিশু বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না সেখানে উপজাতি জনগোষ্ঠীর প্রায় শতভাগ শিশু বিদ্যালয়ে যাচ্ছে।
বিরিশিরি কালচারাল একাডেমীর পরিচালক শরবিন্দু সরকার স্বপন হাজং বলেন, এ অঞ্চলে গারো সম্প্রদায়ের লোকজন প্রায় শতভাগ এবং হাজং সম্প্রদায়ের লোকজন প্রায় ৬০ ভাগ লোক শিক্ষিত। তারা শিক্ষাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী, আত্ম-নির্ভরশীল ও তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে জীবনের একমাত্র ব্রত হিসেবে গ্রহন করেছে। এছাড়াও গারো হাজংরা তাদের নিজস্ব মাতৃভাষাকে ধরে রাখার লক্ষ্যে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে।
রানীখং মিশনের ফাদার নীলুস এস রিছিল বলেন, দুর্গাপুর-কলমাকান্দায় বাঙ্গালীদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-তাত্তিক জনগোষ্ঠীর লোকজন লেখাপড়ার পাশাপাশি নির্বিঘেœ তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ধর্মকর্ম পালন করে আসছে। এখানে কেউ কারো ধর্ম কর্ম পালনে বাঁধা দেয় না। গারো সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব ওয়ানগালা এবং হাজংদের প্রধান উৎসব দেউলী উৎসবে সকলের আনন্দ উপভোগ করে আসছে।
গারো-হাজং সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রত্যাশা, গারো ও হাজং সম্প্রদায়ের লোকজন যাতে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সরকারী চাকুরীর পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশের মূল ¯শ্রোতে প্রবেশ করতে পারে তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আরো বেশী উন্নয়ন পদক্ষেপ নেয়ার জোর দাবী জানান।