স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁঃ নওগাঁর রাণীনগরের জনগুরুত্বপূর্ন একটি সড়ক রাণীনগর-আবাদপুকুর-কালীগঞ্জ সড়ক। গতবছরের শুরুর দিকে টেন্ডারের মাধ্যমে রাস্তা প্রশস্তকরন ও সংস্কার কাজ শুরু হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ শম্বুক গতির কারণে বর্তমানে কাজ বন্ধ থাকায় সৃষ্টি হয়েছে চরম দুর্ভোগ।
২২কিমির মধ্যে প্রায় ১৮কিমি রাস্তার পাকা তুলে ইটের খোয়া ও বালি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপর দীর্ঘদিন যাবত রাস্তায় নিয়মিত পানি না দেওয়ায় দিনে-রাতে উড়ছে ধুলা-বালির কুয়াশা আর সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় গর্তের। এতে করে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এছাড়াও রাস্তার কাজের মান নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্নের।
সূত্রে জানা গেছে, রাণীনগর থেকে কালীগঞ্জ সড়কটি মোট ২২ কিলোমিটার। একনেকে রাণীনগর-আবাদপুকুর-কালীগঞ্জ রাস্তাটি প্রশস্তকরন ও সংস্কারের জন্য প্রায় ৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত বছরের শুরুর দিকে দরপত্রের মাধ্যমে ৩টি সেতু, ২৩টি কালভার্ট নির্মাণ ও সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়। কাজের শুরু
তেই অগ্রগতি ভালো থাকলেও বর্তমানে কাজের কোন অগ্রগতি নেই। ২২ কিমি সড়ক ও ২৩টি কালভার্টের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৪কোটি টাকা আর ৩টি সেতুর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪১কোটি টাকা। ৩টি সেতুর একটিরও অবকাঠামো ও পার্শ্ব রাস্তার কাজ এখনও শেষ হয় নাই। অপরদিকে ২৩টি কালভার্টের মধ্যে ৮-১০টি কালভার্টের কাজ কোনমতে শেষ হয়েছে।
ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন ও স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এই কাজের দায়িত্ব পেয়েছে। কাজের শুরু থেকেই নানা কারণে কাজ বন্ধ হয়েছে বহুবার। পুরো রাস্তাটি প্রশস্তকরন করে মোট ১৮ ফুট করার কথা থাকলেও রাস্তার কিছু অংশের প্রশস্তকরন করা হলেও অবশিষ্ট রাস্তার কোথাও এখনোও হাত দেওয়া হয় নাই।
আবাদপুকুর বাজারের ব্যবসায়ী রুহুল আমীন জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ১ দিন কাজ করলে আর ৩ মাস কোন খবর থাকে না। কিন্তু বর্তমানে রাস্তায় নিয়মিত পানি না দেওয়ায় ধুলা আর বালির কুয়াশার কারণে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কিছুদুর গেলেই ধুলা আর বালি দিয়ে গোসল হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলাচল করা শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এমন সড়কের জন্য নিয়মিত পানি ছিটানো খবুই গুরুত্বপূর্ন।
পথচারী আবু রায়হান, রহিদুল ইসলামসহ অনেকেই বলেন, এই রাস্তার যে পরিমাণ কাজ হয়েছে তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে যে কাজ কেমন হয়েছে। কারণ কোনমতে রাস্তার উপরের পীচ দেওয়া অংশটি তুলে রাস্তায় যা ছিলো সেগুলো উপর দিয়েই রোলার দিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়াও জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধানের হাট আবাদপুকুরে চলাচল করার জন্য এটিই একমাত্র প্রধান সড়ক হওয়ায় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের লোক পড়েছে চরম বিপাকে। এই জনপদের লাখ লাখ মানুষকে প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। আর ঘটেই চলেছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র ও প্রকল্পের সহকারি প্রকৌশলী মো: হুমায়ন কবীর জানান, বিভিন্ন কারণে এই সড়কের কাজ বহুবার বন্ধ রাখা হয়েছিলো। পুনরায় কাজ শুরু করা হয়েছে। রাস্তায় পানি ছিটানো গাড়ী নষ্ট হওয়ায় বর্তমানে পানি ছিটানো সম্ভব হচ্ছে না। রাস্তার কাজে কোন অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি করা হয়নি। দরপত্রে যে ভাবে আছে আমরা তার বেশিও করবো না কমও করবো না।
নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য মোঃ ইসরাফিল আলম জানান, কিছু কিছু ঠিকাদারদের জন্যই সরকারের মেগা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সঠিক ভাবে শেষ হচ্ছে না। তেমনি ভাবে এই সড়কের কাজেও একই অবস্থা। সড়কের এই বেহাল অবস্থার জন্য জনগন আমাকে ও আমার পরিবারকে গালমন্দ করছে। অনেক দিন পর কাজ শুরু হলেও বর্তমানে খোয়া ও বালি বিছানো রাস্তায় নিয়মিত পানি না দেওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে ধুলার কুয়াশা। এমতাবস্থায় প্রতিনিয়তই চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারী থেকে শুরু করে যানবাহন চলাচলে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সঠিক ভাবে মান বজায় রেখে দ্রুত কাজ শেষ করার আহ্বান জানান তিনি।