
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের চিলমারীতে আজ মঙ্গলবার এসএসসি বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় থানাহাট এ ইউ পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের একজন কক্ষ পরিদর্শকের কাছে অনৈতিক সুবিধা না পাওয়ায় তাকে অপদস্থ করলেন পরীক্ষার্থীর বাবা এনামুল হক। এখানেই শেষ নয়, নৈর্ব্যত্তিক পরীক্ষার সময় শেষ হওয়ার ৫ মিনিট পরও উত্তরপত্র জমা না দিলে কক্ষ পরিদর্শক উত্তরপত্র নিতে গেলে পরীক্ষার্থী অর্পিতা তাকে পুলিশে দেয়ার হুমকি পর্যন্ত দেয়। এ ঘটনায় শিক্ষকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে পুলিশী প্রহরায় কক্ষ পরিদর্শককে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়।
জানা গেছে, এনামূল হকের কন্যা অর্পিতা থানাহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। থানাহাট এ ইউ পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ১২ নম্বর কক্ষে তার আসন।
কক্ষ পরিদর্শক চায়না বেগম জানান, পরীক্ষার নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরেও ঐ পরীক্ষার্থী উত্তরপত্র জমা না দেয়ায় আমি উত্তরপত্র চাই, সে দিতে রাজি না হলে আমি উত্তরপত্রটি নেই। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে পুলিশে দেয়ার হুমকি দেয় এবং দোতালার বারান্দা থেকে মা-মা, বাবা-বাবা বলে চিৎকার করে ডাকতে থাকে। খবর পেয়ে তার বাবা দলবল নিয়ে এসে আমাকে অবরুদ্ধ ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।
থানাহাট এ ইউ পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব শেফাউন নাহার জানান, এনামুল হকের মেয়ে অর্পিতা ১২ নম্বর কক্ষের পরীক্ষার্থী। বাংলা ২য় পত্রের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা ৩০ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়। অর্পিতা পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেও উত্তর পত্র জমা না দিয়ে আরোও উত্তর লিখতে থাকে। ২/৩ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর কক্ষ পরিদর্শক চায়না বেগম জোড় করে তার কাছ থেকে উত্তর পত্র নিয়ে নেয়। এসময় ওই পরীক্ষার্থী রাস্তার ধারে দোতালা থেকে বাবা-বাবা বলে চিকিৎকার করলে তার পিতা এনামুল হক পরীক্ষার কক্ষে এসে চায়না বেগমকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দিয়ে অপদস্থ করতে থাকে এমনকি তার হাত কেটে নিবে বলেও হুমকি দেয়। ওই সময় তার মেয়ে অর্পিতাও কক্ষ পরিদর্শক চায়না বেগমকে পুলিশে দেয়ার হুমকি দেয়। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে আমি সেখানে গিয়ে পরিবেশ শান্ত করে ওই কক্ষ পরিদর্শককে কক্ষ থেকে সরিয়ে অন্য কক্ষে দায়িত্ব দেই। পরীক্ষা শেষে মেয়েকে মারধরের অভিযোগ এনে আবার এনামুল হক দলীয় লোকজন নিয়ে এসে পরিবেশ উত্তপ্ত করে। তিনি কেন এমন করছেন এ প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্র সচিব ও প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “মন্ত্রীর বোনতো আর ক্ষমতা দেখাতে পারে না, মন্ত্রীর শ্যালক ক্ষমতা দেখাচ্ছে আর কি” পরে পুলিশের সহয়তায় পরিবেশ শান্ত করে চায়না বেগমকে আমি নিজে তার বাড়িতে পৌঁছে দেই। অভিভাবক এনামুল হক যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা ন্যাক্কারজনক বলেও মন্তব্য করেন প্রধান শিক্ষিক।
বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সম্মানিত সদস্যদেরও অবহিত করেছি।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে এসএসসি পরীক্ষা শুরুর পর থেকেই মন্ত্রীর ওই শ্যালক তার মেয়ের জন্য অনৈতিক সুবিধা আদায়ে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের কাছে চাপ দিয়ে আসছিল৷
চিলমারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আইন শৃংখলা রক্ষায় ইন্সপেক্টর (তদন্ত) ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এর বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ্ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ১৪৪ ধারা জারি থাকার পরেও সেখানে বহিরাগত লোক কিভাবে কক্ষ পরিদর্শককে অপদস্থ এবং হুমকি ধামকি দেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।