বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা ওআইসির

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:৪৭:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • ১৩৪ Time View

খোঁজ খবর ডেস্কঃ ফিলিস্তিন সমস্যা নিরসনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতিমধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনানামে যে রূপরেখা প্রকাশ করেছেন তা প্রত্যাখ্যান করেছে মুসলিম দেশগুলোর বৈশ্বিক জোট ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)কথিত ওই শান্তি পরিকল্পনার পর ৫৭ রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত এই মুসলিম জোট সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে সোমবার এক জরুরি বৈঠক করেবৈঠকে ওই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। ফিলিস্তিনি জনগনের সম্মতি ছাড়া কোনো চুক্তি গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। 

ওআইসির বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ওই শান্তি চূক্তি নিয়ে পর্যালোচনা করেন সদস্যরা। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম অংশ নেনমুসলিম দেশগুলোর সংস্থা ওআইসি মনে করে, উভয়পক্ষের সম্মতি ছাড়া এমন ঘোষণা যে কোনো ধরণের শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করবেবৈঠক শেষে বিবৃতিতে ওআইসি জানিয়েছে, তারা জোটের সব সদস্য রাষ্ট্রকে এই পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত না হওয়া এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মার্কিন প্রশাসনকে সহযোগিতা না করার আহ্বান জানিয়েছে। 

ফিলিস্তিন নেতৃত্বের অনুরোধে সোমবার জরুরি বৈঠকে বসে ওআইসি। এর দুদিন আগে গত শনিবার একইভাবে এক জরুরি বৈঠক শেষে ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে তা বাস্তবায়নে কোনোভাবে সহযোগিতা না করার আহ্বান জানায় ২২ আরব দেশের সমন্বয়ে গঠিত জোট আরব লীগ

বৈঠক থেকে ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ওয়াশিংটনকে কোনো ধরনের সহযোগিতা না করতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়

বৈঠক শেষে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার খর্ব হয় এমন কোনো বিষয় মেনে নেয়া হবে না। ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরাইলের কোনো অপতৎপরতা সফল হবে না বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি

এদিকে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে ওআইসির অন্যতম সদস্য ইরানের প্রতিনিধি দলকে যোগ দেয়ার সুযোগ দেয়নি রিয়াদ। ইরান অংশ নিতে চাইলেও সৌদি সরকার দেশটির প্রতিনিধি দলকে ভিসা দেয়নি

প্রসঙ্গত ইসরাইল ফিলিস্তিনের মধ্যকার দ্বন্দ্বসংঘাত নিরসনের লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ২৮ জানুয়ারিডিল অব দ্যা সেঞ্চুরিপ্রকাশ করেন। ১৮১ পৃষ্ঠার মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনায় জেরুজালেম শহরকে ইসরাইলের অবিভক্ত রাজধানী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে

ট্রাম্পের এই পরিকল্পনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে

সেই সঙ্গে জর্দান নদীর পশ্চিমতীরের মাত্র ৭০ শতাংশ ভূমি গাজা উপত্যকা নিয়ে একটি দুর্বল ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছে

ফিলিস্তিনের শাসক জনগণ এই কথিত শান্তি পরিকল্পনা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়ে দেশটিতে চলছে বিক্ষোভ

ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তাসহ সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস

ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তিকেশতাব্দীর সেরা চুক্তিবললেও আরব জোট তাদের বিবৃতিতে চুক্তিকেশতাব্দীর সেরা যুক্তরাষ্ট্রইসরাইল চুক্তিহিসেবে অভিহিত করেছে। ট্রাম্পের মস্তিষ্ক উৎসারিত এই চুক্তিকে একপাক্ষিক অভিহিত করে জোটটি বলছে, ট্রাম্পের ওই চুক্তিতে ফিলিস্তিনের মানুষের ন্যূনতম অধিকার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি

কথিত এই শান্তি চুক্তি কোনোভাবেই শান্তির লক্ষ্যে তৈরি করা হয়নি আর এই চুক্তি বাস্তবায়নে কোনোভাবেই মার্কিন প্রশাসনকে সহায়তা না করার ঘোষণা দিয়েছে আরব লীগ। ইসরাইল ক্ষমতার জোরে এই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে পারবে না এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম এই সংকট সমাধানে দুই রাষ্ট্র সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে জোটটি

পূর্ব জেরুসালেমকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে আরব লীগ। কিন্তু হোয়াইট হাউসে হাস্যোজ্জ্বল ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে ট্রাম্প তার পরিকল্পনায় জেরুসালেমকে ইসরাইলেরঅবিভক্ত রাজধানীহিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। ইসরাইল সাধুবাদ জানালেও ফিলিস্তিন এই চুক্তি আগে থেকেই প্রত্যাখ্যান করে আসছে

উল্লেখ্য, ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনাটিতে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য একের পর কঠিন শর্ত পালনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ইসরাইলের দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোতে ইসরাইলি সার্বভৌমত্ব গড়ে তোলার ঘোষণাও দিয়েছেন ট্রাম্প

চার মহাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ নিয়ে ওআইসি গঠিত। জাতিসংঘের পর এটাই বিশ্বের বৃহৎ আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা। সংস্থাটির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জনসংখ্যা প্রায় দুইশ কোটি। অধিকাংশ দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মুসলিম জনসংখ্যার কিছু আফ্রিকান দক্ষিণ আমেরিকার দেশও এই জোটের সদস্য।আল জাজিরা

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

MD ZANNATUL FERDOUSH

NEWS PURPOSE

গাইবান্ধায় ঘাঘট তীরে মুক্তমঞ্চ ‘মানব বন্ধন‘ এর উদ্বোধন

ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা ওআইসির

Update Time : ০৯:৪৭:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০

খোঁজ খবর ডেস্কঃ ফিলিস্তিন সমস্যা নিরসনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতিমধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনানামে যে রূপরেখা প্রকাশ করেছেন তা প্রত্যাখ্যান করেছে মুসলিম দেশগুলোর বৈশ্বিক জোট ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)কথিত ওই শান্তি পরিকল্পনার পর ৫৭ রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত এই মুসলিম জোট সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে সোমবার এক জরুরি বৈঠক করেবৈঠকে ওই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। ফিলিস্তিনি জনগনের সম্মতি ছাড়া কোনো চুক্তি গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। 

ওআইসির বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ওই শান্তি চূক্তি নিয়ে পর্যালোচনা করেন সদস্যরা। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম অংশ নেনমুসলিম দেশগুলোর সংস্থা ওআইসি মনে করে, উভয়পক্ষের সম্মতি ছাড়া এমন ঘোষণা যে কোনো ধরণের শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করবেবৈঠক শেষে বিবৃতিতে ওআইসি জানিয়েছে, তারা জোটের সব সদস্য রাষ্ট্রকে এই পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত না হওয়া এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মার্কিন প্রশাসনকে সহযোগিতা না করার আহ্বান জানিয়েছে। 

ফিলিস্তিন নেতৃত্বের অনুরোধে সোমবার জরুরি বৈঠকে বসে ওআইসি। এর দুদিন আগে গত শনিবার একইভাবে এক জরুরি বৈঠক শেষে ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে তা বাস্তবায়নে কোনোভাবে সহযোগিতা না করার আহ্বান জানায় ২২ আরব দেশের সমন্বয়ে গঠিত জোট আরব লীগ

বৈঠক থেকে ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ওয়াশিংটনকে কোনো ধরনের সহযোগিতা না করতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়

বৈঠক শেষে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার খর্ব হয় এমন কোনো বিষয় মেনে নেয়া হবে না। ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরাইলের কোনো অপতৎপরতা সফল হবে না বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি

এদিকে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে ওআইসির অন্যতম সদস্য ইরানের প্রতিনিধি দলকে যোগ দেয়ার সুযোগ দেয়নি রিয়াদ। ইরান অংশ নিতে চাইলেও সৌদি সরকার দেশটির প্রতিনিধি দলকে ভিসা দেয়নি

প্রসঙ্গত ইসরাইল ফিলিস্তিনের মধ্যকার দ্বন্দ্বসংঘাত নিরসনের লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ২৮ জানুয়ারিডিল অব দ্যা সেঞ্চুরিপ্রকাশ করেন। ১৮১ পৃষ্ঠার মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনায় জেরুজালেম শহরকে ইসরাইলের অবিভক্ত রাজধানী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে

ট্রাম্পের এই পরিকল্পনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে

সেই সঙ্গে জর্দান নদীর পশ্চিমতীরের মাত্র ৭০ শতাংশ ভূমি গাজা উপত্যকা নিয়ে একটি দুর্বল ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছে

ফিলিস্তিনের শাসক জনগণ এই কথিত শান্তি পরিকল্পনা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়ে দেশটিতে চলছে বিক্ষোভ

ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তাসহ সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস

ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তিকেশতাব্দীর সেরা চুক্তিবললেও আরব জোট তাদের বিবৃতিতে চুক্তিকেশতাব্দীর সেরা যুক্তরাষ্ট্রইসরাইল চুক্তিহিসেবে অভিহিত করেছে। ট্রাম্পের মস্তিষ্ক উৎসারিত এই চুক্তিকে একপাক্ষিক অভিহিত করে জোটটি বলছে, ট্রাম্পের ওই চুক্তিতে ফিলিস্তিনের মানুষের ন্যূনতম অধিকার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি

কথিত এই শান্তি চুক্তি কোনোভাবেই শান্তির লক্ষ্যে তৈরি করা হয়নি আর এই চুক্তি বাস্তবায়নে কোনোভাবেই মার্কিন প্রশাসনকে সহায়তা না করার ঘোষণা দিয়েছে আরব লীগ। ইসরাইল ক্ষমতার জোরে এই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে পারবে না এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম এই সংকট সমাধানে দুই রাষ্ট্র সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে জোটটি

পূর্ব জেরুসালেমকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে আরব লীগ। কিন্তু হোয়াইট হাউসে হাস্যোজ্জ্বল ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে ট্রাম্প তার পরিকল্পনায় জেরুসালেমকে ইসরাইলেরঅবিভক্ত রাজধানীহিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। ইসরাইল সাধুবাদ জানালেও ফিলিস্তিন এই চুক্তি আগে থেকেই প্রত্যাখ্যান করে আসছে

উল্লেখ্য, ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনাটিতে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য একের পর কঠিন শর্ত পালনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ইসরাইলের দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোতে ইসরাইলি সার্বভৌমত্ব গড়ে তোলার ঘোষণাও দিয়েছেন ট্রাম্প

চার মহাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ নিয়ে ওআইসি গঠিত। জাতিসংঘের পর এটাই বিশ্বের বৃহৎ আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা। সংস্থাটির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জনসংখ্যা প্রায় দুইশ কোটি। অধিকাংশ দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মুসলিম জনসংখ্যার কিছু আফ্রিকান দক্ষিণ আমেরিকার দেশও এই জোটের সদস্য।আল জাজিরা